TOP NEWS

Tuesday, August 9, 2011

প্রকৃত ইসলামী সমাজের বৈশিষ্ট্য


যে সমাজের মানুষের ছোট থেকে বড়, ব্যক্তিগত থেকে রাজনৈতিক বা আন্তর্জাতিক, কোর্ট-কাচারি, অর্থনীতিসহ সকল বিষয় আল্লাহর গোলামীর মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে আল্লাহর আইন দ্বারা পরিচালিত হয় সেই সমাজকেই কেবল সত্যিকার অর্থে ইসলামী সমাজ বলা যেতে পারে। অর্থাৎ সমাজের মানুষের চিন্তা-চেতনা, শিল্প-সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠান, আইন-কানুন তথা সকল কাজের মধ্য দিয়েই যারা প্রমাণ করে যে, তারা একমাত্র আল্লাহরই গোলামী করে যাচ্ছে-এমন সমাজই হলো ইসলামী সমাজ। আর কালেমা শাহাদাত এ ধরনের আল্লাহর দাসত্বমূলক জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করে নেয়ার মৌখিক স্বীকৃতি দেয় এবং বাস্তব জীবনে তা পালনের পদ্ধতি নির্ধারণ করে।
”আল্লাহ বললেনঃ তোমরা দুই উপাস্য গ্রহণ করো না ,উপাস্য তো মাত্র একজনই। অতএব আমাকেই ভয় কর। যা কিছু নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলে আছে তা সবই তাঁর জন্য নিবেদিত। (এরপরও কি) তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ভয় করবে?” [সূরা আন নাহল: ৫১-৫২]
ঠিক তেমনিভাবে কোনো ব্যাক্তি যদি আল্লাহর শক্তিক্ষমতা ছাড়া অন্য কারো শক্তিক্ষমতা, রাজনৈতিক প্রতিপত্তির কাছে আত্নসমর্পণ করে কিংবা কোনো ধরনের জাহেলি আদর্শের সাথে আপস করে, তাহলে সে নিরঙ্কুশভাবে আল্লাহর গোলামী স্বীকার করে নেয়নি। কেননা, আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন,
”তুমি বল: আমার নামায, আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে।তাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল।” [সূরা আনআম: ১৬২-১৬৩]
এরপর যদি কোন ব্যক্তি তার জীবনের কিছু অংশ মানুষের বানানো আইনানুসারে পরিচালনা করে তাহলে সেও আল্লাহর দাসত্ব থেকে অনেক দূরে ছিটকে পড়ে। যেমন বর্তমান সমাজের মানুষের নামায,রোযা,হজ্জ, যাকাত,বিয়ে-তালাকের ক্ষেত্রে আল্লাহর আইন-কানুনের কিছু মানলেও তাদের সমাজনীতি, রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন,কোর্ট-কাচারি, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতিসহ অন্যান্য সকল ক্ষেত্রেই নির্বাচিত কিছু লোকদের রচিত আইন-কানুন মেনে চলছে। যা প্রচ্ছন্ন শিরক। তারা এসব নির্বাচিত ব্যক্তিদেরকে আইন রচনার ক্ষমতায় সুস্পষ্টভাবে আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করেছে। এদের লক্ষ্য করে আল্লাহ তাআলা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছেন,
”তাদের কি এমন শরীক আছে, যারা এদের জন্য এমন কোনো জীবন-বিধান প্রণয়ন করে দিয়েছে,যার অনুমতি আল্লাহ তাআলা দেননি ? ” [সূরা শূরা: ২১]
”রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।” [সূরা হাশর: ৭]
এই মূলনীতি থেকে ইসলামী সমাজের সদস্যরা জীবন চলার নীতি নির্ধারণ করবে এবং সামগ্রিক জীবনে আল্লাহর দাসত্বের প্রতিফলন ঘটাবে। আকিদা-বিশ্বাস, আইন-কানুন,রীতি-নীতি,শিল্প-সংস্কৃতি-এর কোনো একটি অধ্যায়ও যদি আল্লাহর দাসত্বের অনুভূতি থকে বঞ্চিত হয় তাহলে ওই সমাজের ইসলাম থেকে বিচ্যুতি ঘটে। কারণ, এর প্রত্যেকটি অধ্যায়ের সাথে কালেমা শাহাদাত-এর সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। এ সম্পর্কের মাঝে সামান্য কোনো ফাটল সৃষ্টি হলেও তা চরম পরিণতি বয়ে আনে। সমাজের সকল স্তরে এ কালেমার শর্তহীন ও পুংখানুপুংখ বাস্তবায়ন ছাড়া ইসলামী সমাজ গঠন করা সম্ভব নয়।
তাই এসব সমাজের গতানুগতিক সদস্য হয়ে এবং মুখে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা বলে মানুষকে বোকা বানানো যেতে পারে; কিন্তু যিনি সব দেখেন, সব শোনেন,তাঁর কাছে এগুলো কোনো মূল্য বহন করে না।
যারা নিজেদের মন ও জীবনকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন শক্তি আনুগত্য থকে পুরোপুরি মুক্ত ও পবিত্র করেছে তাদেরকে নিয়ে একটি উম্মাহ গড়ে তুলতে হবে এবং তারাই ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় সদস্য হওয়ার যোগ্য। তাদের সমাজই কেবল ইসলামী সমাজ হতে পারে, যাদের জীবন হবে কালেমার বাস্তবচিত্র, তারাই হবে এই সংগ্রামী কাফেলার অগ্রনায়ক।
ইসলামী প্রথম সোনালি সমাজ এ প্রক্রিয়াতেই গঠিত হয়েছিলো এবং ভবিষ্যতে হলেও এ পদ্ধতিতে হতে হবে। ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার এটাই শাশ্বত পদ্ধতি। এই পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোন উপায়ে ইসলামী সমাজ গঠন হতে পারে না।
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো শক্তির নিরঙ্কুশ ও শর্তহীন আনুগত্য-(তা পূর্নাঙ্গ আনুগত্য হোক বা আংশিক) নিঃসন্দেহে শিরক। তাই সামষ্টিকভাবে সমাজের মানুষেরা সকল অপশক্তির আনুগত্য থেকে মুক্ত হতে পারলে তারপরই ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
সাইয়্যেদ কুতুবের ‘মাইলস্টোন’ বই থেকে চয়ন করা হয়েছে।

0 comments: