Saturday, May 5, 2012

মানুষের তৈরী আইন, মতবাদ দ্বারা আল্লাহর আইন ও দ্বীনের প্রতিস্থাপন





আল্লাহর আইনের বিরোধিতা করে মানুষের তৈরীকৃত আইনের (গণতন্ত্রসমাজতন্ত্র , ------) সমর্থনের সাথে জড়িত থাকা হারাম,কুফর এবং শিরক
আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) মানুষের অস্তিত্বের কারণটি পরিস্কারভাবে বর্ণনা করে বলেছেনঃ আমি জ্বিন ও মানুষকে অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করি নাইকেবল এই জন্য সৃষ্টি করিয়াছি যেতাহারা আমার ইবাদত করিবে। (সূরা আয-যারিয়াত ৫১: ৫৬) ইহা তখনই পরিপূর্ণতা লাভ করবে যখন আমরা আমাদের সকল কার্যক্রম ও সমস্যাবলীয় সমাধানের জন্য শরীয়াহ আইনের কাছে দারস্থ হব এবং সেই আইনগুলো প্রয়োগ করব। 

আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ 
নাহে মুহাম্মদতোমার রবের নামের শপথ, ইহারা কিছুতেই ঈমানদার হইতে পারে নাযতক্ষণ না তাহারা তাহাদের পারস্পরিক মতভেদের বিষয় ও ব্যাপারসমূহে তোমাকে বিচারপতি রূপে মানিয়া লইবে। অতঃপর তুমি যাহাই ফায়সালা করিবে সে সম্পর্কে তাহারা নিজেদের কিছুমাত্র কুন্ঠাবোধ করিবে নাবরং উহার সম্মুখে নিজদিগকে পূর্ণরূপে সোপর্দ করিয়া দিবে।(সূরা আন নিসা ৪: ৬৫) 

এবং আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) আমাদেরকে প্রতিটি মুহূর্তে তাঁর কাছে আত্মসর্মপিত অবস্থায় থাকার আদেশ করেছেন।
হে ঈমানদারগণআল্লাহকে যেমনভাবে ভয় করা দরকার ঠিক তেমন ভাবে ভয় করো। আর তোমরা অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করোনা। (সূরা আলে ইমরান ৩: ১০২)
যখন আমরা বলি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তখন আমরা বলে থাকি যে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) ছাড়া ইবাদতের যোগ্য অন্য কোন উপাস্য নাই। ইহার অর্থ এই দাড়ায় যেআত্মসমপর্নের জন্য আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) ছাড়া আর কোন শক্তি নাই। ইহা করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে কোন কিছুই আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) কোন গুণাবলীর সমকক্ষ বা যোগ্য নয়। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) তার নিজের নিরানব্বই (৯৯)টি নাম ও গুণাবলী আমাদের জন্য বর্ণনা করেছেন। যে কেউ আল্লাহর সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এবং শুধু একটিমাত্র নাম বা গুণাবলীর অধিকারী বলে দাবী করে তাহলে সে ব্যক্তি একটি তাগুত পরিণত হবে। আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) পরিবর্তে যে কারোরই আনুগত্য বা ইবাদত করা হয় সে তাগুতসুতরাং আমাদের নিজেদেরকে মুসলমান দাবী করার পূর্বে আমরা প্রথমেই তাগুতকে সেইভাবে বাতিল বা অস্বীকার করব ঠিক যেভাবে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেছেনঃ দ্বীনের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নাই। নিঃসন্দেহে হেদায়াত গুমরাহী থেকে পৃথক হইয়া গেছে । এখন যে কেহ তাগুতকেঅস্বীকার করিয়া আল্লাহর প্রতি ঈমান আনিল সে এমন এক শক্ত রজ্জু ধারণ করিলযাহা কখনই ছিঁড়িয়া যাইবার নহে এবং আল্লাহ (যাহার আশ্রয় সে গ্রহন করিয়াছে) সব কিছু শ্রবণ করেন ও সব কিছু জানেন। (সূরা আল-বাকারাহ ২: ২৫৬) আমি প্রত্যেক উম্মতে একজন রাসূল পাঠাইয়াছি। আর তাহার সাহায্যে সকলকে সাবধান করিয়া দিয়াছি যেআল্লাহর বন্দেগী কর এবং তাগুতের বন্দেগী হইতে দূরে থাক। ইহার পর তাহাদের মধ্য হইতে কাহাকেও আল্লাহ হেদায়াত দান করিয়াছেনআর কাহারো উপর গোমরাহী চাপিয়া বসিয়াছে। অনন্তর যমীনের উপর একটু চলাফেরা করিয়া দেখিয়া লও যেমিথ্যা আরোপকারীদের কি পরিণাম হইয়াছে। (সূরা নাহল ৩৬) আল-হাকিম আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) একটি নাম ও গুণাবলী যার অর্থ একমাত্র আইনদাতা । যদি কোন ব্যক্তি এমন কোন আইন প্রণয়ন করল যা কোরআন ও সুন্নাহর বাইরে তাহলে সে ব্যক্তি একটি তাগুতে পরিণত হবে কারণ আল্লাহই (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) একমাত্র আল-হাকিম যিনি বিধান রচনা করেন। আল্লাহই (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) একমাত্র আইনদাতা একথা প্রমাণের জন্য কোরআনে অনেক আয়াত বিদ্যমান। আল্লাহ ছাড়া কারও বিধান দেবার ক্ষমতা নাই। তিনি আদেশ দিয়াছেন যেতিনি ব্যতীত অন্য কারো এবাদত করো না। এটাই সরল পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানেনা। (সূরা ইউসুফ ১২: ৪০)
তুমি বলতাহাদের অবস্থানের সঠিক মেয়াদ আল্লাহ তাআলা অধিক ভালো জানেন। আসমান ও যমীনের সব গোপন অবস্থা তাঁহারই জানা আছে। তিনি কত সুন্দরভাবে দেখেনকত সুন্দর নির্ভুলভাবে তিনি শুনেন! যমীন ও আসমানের সব সৃষ্টির তত্ত্বাবধায়ক তিনি ছাড়া আর কেহ নাই। তিনি তাঁহার রাজ্যশাসনে কাহাকেও শরীক করেন না। (সূরা আল-কাহাফ ১৮: ২৬) 

আল-কোরআনের এইসব আয়াতসমূহ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে
, আল্লাহই (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) আইনদানের একমাত্র অধিকারী এবং আমাদের জন্য অবশ্যই তা পালনযোগ্য। আমরা মুসলমানরা আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) ব্যতীত অন্য কারোর তৈরীকৃত আইনের আনুগত্য করতে পারিনা।
তাহারা কি আল্লাহর এমন কিছু শরীক বানাইয়া লইয়াছে যাহারা ইহাদের জন্য দ্বীন ধরনের কোন নিয়ম-বিধান নির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছে যাহার কোন অনুমতি আল্লাহ দেন নাইফয়সালার সময় পূর্ব হইতেই যদি নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়া না হইত তাহা হইলে এতদিনে তাহাদের ব্যাপারটি চুড়ান্ত করিয়া দেওয়া হইত। নিশ্চিতই এই যালেমদের জন্য পীড়াদায়ক আযাব রহিয়াছে। (সূরা আশ শুরা ৪২: ২১) 
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ আর যে জন্তু আল্লাহর নাম নিয়ে যবেহ করা হয় নাই তাহার গোশত খাইও না। তাহা খাওয়া ফাসেকী (পাপের) কাজ। শয়তানেরা নিজেদের সংগী-সাথীদের মনে নানা প্রকার সন্দেহ ও প্রশ্নবাবলীর উন্মেষ করেযেন তাহারা তোমাদের সাথে ঝগড়া করিতে পারে। কিন্তু তোমরা যদি তাহাদের আনুগত্য স্বীকার কর তবে নিশ্চিতই তোমরা মুশরিক। (সূরা আল-আনআম ৬: ১২১) 

এইসব আয়াতসমূহে প্রমাণ করে যে
যদি আমরা আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) পাশে অন্য কাউকে আইনদাতা হিসেবে গ্রহণ করি তাহলে আমরা আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) সাথে শরীক সাব্যস্ত করার মতো ক্ষমার অযোগ্য অপরাধের (শিরক) অপরাধী হবো। 

এখন যদি কোন ব্যক্তি একটি (কুফরী নিয়মে অর্থাৎ গণতন্ত্র) রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় প্রেরণের জন্য ভোট দান করে যারা কুফরী আইন প্রণয়ন করে তখন সে শুধু তাগুতকে চিহ্ণিত করল না বরং নিজে কুফরী নিয়মে অংশগ্রহণ করল এবং সেই রাজনৈতিক দলকে তাগুতকে পরিণত হওয়ার জন্য এবং কুফর প্রণয়ন করার জন্য ক্ষমতা প্রদান করল।


নিম্নে উল্লেখিত শরীয়তের এবং ঈমানের প্রধান বৈশিষ্টগুলো প্রমাণ করে যে মানুষের তৈরীকৃত বিধানে ভোটদান বা অংশগ্রহণ সম্পূর্ণ বিপথগামীতা অর্থাৎ জাহান্নাম।
(১) শাহাদাহ এর প্রথম অংশঃ লা ইলাহা ইলালাহ”:
অর্থাৎ আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) ছাড়া ইবাদতের বা আনুগত্যের যোগ্য কেউ নাই। ইহা তাওহীদুল উলুহিয়া যে কেউই আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) যাকে আনুগত্য বা মান্য করার হুকুম করেছেন তার আনুগত্য করে সত্যিকার অর্থে সে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) মান্য বা আনুগত্য করল।
(২) শাহাদাহ এর দ্বিতীয় অংশঃ মুহাম্মাদুর রাসূলুলাহ অর্থাৎ রিসালাত যার অর্থ মুহাম্মদ (সঃ) এর শরীয়াহই একমাত্র বৈধ শরীয়াহ যা মান্য করতে হবে এবং আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) হুকুম প্রণয়নের জন্যে তাঁরই দেখানো পথ অনুসরণ করতে হবে অন্য কোন পথে নয়।
(৩) তাগুত কে অস্বীকারঃ ঈমান বিরোধী বিষয়সমূহের উপর অবিশ্বাস পোষণ ও বাতিলকরণ ব্যতীত ঈমানের দাবী করা অযোক্তিকতা ও ভন্ডামী মাত্র।দ্বীনের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নাই। নিঃসন্দেহে হেদায়াত গুমরাহী থেকে পৃথক হইয়া গেছে। এখন যে কেহ তাগুতকে অস্বীকার করিয়া আল্লাহর প্রতি ঈমান আনিল সে এমন এক শক্ত রজ্জু ধারণ করিলযাহা কখনই ছিঁড়িয়া যাইবার নহে এবং আল্লাহ (যাহার আশ্রয় সে গ্রহন করিয়াছে) সব কিছু শ্রবণ করেন ও সব কিছু জানেন। (সূরা আল-বাকারাহ ২: ২৫৬)
হে নবীতুমি কি সেইসব লোকদের দেখ নাই যাহারা দাবী তো করে যেআমরা ঈমান আনিয়াছি সেই কিতাবের প্রতি যাহা তোমার প্রতি নাযিল হইয়াছে এবং যাহা তোমরা পূর্বে নাযিল হইয়াছিলকিন্তু তাহারা নিজেদের যাবতীয় ব্যাপারের ফায়সালা করাইবার জন্য তাগুতের দিকে নিয়ে যেতে চায়। অথচ তাহাদিগকে তাগুতকে সম্পূর্ণ অস্বীকার ও অমান্য করিবার আদেশ দেওয়া হইয়াছিল, মূলত শয়তান তাহাদিগকে পথভ্রষ্ট করিয়া সত্য-সঠিক পথ হইতে বহুদূরে লইয়া যাইতে চাহে। (সূরা আন নিসা ৪: ৬০)
(৪) মুসলমানদের উপর কাফিরদের শাসন কর্তৃত্ব সম্পূর্ণ নিষিদ্ধঃ মুসলমানদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্ব সর্বাস্থায় নিষিদ্ধ বা হারাম যদিও কাফিররা তাদের আইন প্রণয়নে ইসলামী নিয়ম কানুন ব্যবহার করে এবং বিশ্বাসী অর্থাৎ ঈমানদাররা কখনও তাদের কর্তৃত্ব মেনে নিবে না। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেন। এই মুনাফিকগণ তোমাদের ব্যাপারে এই অপেক্ষায় রহিয়াছে যেশেষ পর্যন্ত পরিণতি কি দাঁড়ায়! খোদার তরফ হইতে তোমাদের জয় সূচিত হইলে তাহারা আসিয়া বলিবেঃ আমরাও কি তোমাদের সংগে ছিলাম নাপক্ষান্তরে কাফেরদের পালা ভারী হইলে তাহাদিগকে বলিবেঃ আমরা কি তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করিতে পারিতাম নাতাহা সত্ত্বেও আমরা তোমাদিগকে মুসলমানদের হইতে রক্ষা করিয়াছি। বস্তুতঃ আল্লাহই তোমাদের ও তাহাদের পারস্পরিক ব্যাপারের ফয়সালা কিয়ামতের দিন করিবেন। আর এই (ফায়সালায়) মুসলমানদের উপর কাফেরদের জয়লাভ করার কোন পথই আল্লাহ অবশিষ্ট রাখেন নাই। (সূরা নিসাঃ ১৪১)
(৫) আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে শিরকঃ যে কেউই দাবী করে যে আমি বা আমরা আইন তৈরী করতে পারি তাহলে সে শিরক করল কারণ একমাত্র আল্লাহই (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) আইন দান করেন। আমরা আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) গোলাম এবং গোলাম তাঁর মালিকের নির্দেশ ও ফয়সালা পালনের মাধ্যমে আনুগত্য করবে। আল্লাহ ছাড়া কারও বিধান দেবার ক্ষমতা নাই। তিনি আদেশ দিয়াছেন যেতিনি ব্যতীত অন্য কারো এবাদত করোনা। এটাই সরল পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানেনা। (সূরা ইউসুফ ১২: ৪০) হে ঈমানদার লোকগণআনুগত্য কর আল্লাহর,আনুগত্য কর রসূলের এবং সেইসব লোকেরও যাহারা তোমাদের মধ্যে সামগ্রিক দায়িত্বসম্পন্ন। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যদি কোন ব্যাপারে মতবৈষম্যের সৃষ্টি হয় তবে উহাকে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ফিরাইয়া দাওযদি তোমরা প্রকৃতই আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমানদার হইয়া থাক। ইহাই সঠিক কর্মনীতি এবং পরিণতির দিক দিয়াও ইহাই উত্তম। (সূরা নিসা ৪: ৫৯)
(৬) আনুগত্যের ক্ষেত্রে শিরকঃ প্রত্যেক মুসলিম নামাজে সূরা ফাতিহায় পড়ে ইয়্যা কানা বুদু ওয়া ইয়্যা কানাস তায়িন। আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। (সূরাঃ আল ফাতিহা ১: ৪)
(৭) বন্ধুত্ব ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে কুফরীঃ যারা কাফির যারা ইসলামকে অস্বীকার করছেযারা প্রকাশ্যে ইসলামের বিরোধিতা করছে এবং যারা মুসলমানদের অন্যায় ও অত্যাচার করছে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা তাদেরকে সাহায্য করা এবং তাদের সাথে তাদের মতো করে জোটবদ্ধ বা একত্রিত হওয়া সম্পূর্ণভাবে হারাম বা নিষিদ্ধ যে কেউই ইহা করবে সে নিজে কাফিরে পরিণত হবে। হে ঈমানদার লোকগণ! ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের নিজেদের বন্ধুরূপে গ্রহন করিও নাইহারা নিজেরা পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেহ যদি তাহাদিগকে বন্ধুরূপে গ্রহন করেতাহা হইলে সে তাহাদের মধ্যে গণ্য হইবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ যালেমদিগকে নিজের হেদায়াত হইতে বঞ্চিত করেন। (সূরা আল-মায়িদা ৫: ৫১) যারা মুসলমানদের বর্জন করে কাফেরদেরকে নিজেদের বন্ধু বানিয়ে নেয় এবং তাদেরই কাছে সম্মান প্রত্যাশা করেঅথচ যাবতীয় সম্মান শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য। (সূরা আন নিসা ৪: ১৩৯) হে ঈমানদারগণ! তোমরা কাফেরদেরকে বন্ধু বানিও না মুসলমানদের বাদ দিয়ে তোমরা কি এমনটি করে নিজের উপর আল্লাহর প্রকাশ্য দলীল কায়েম করে দেবে? (সূরা আন-নিসা ১৪৪)
(৮) আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে শিরকঃ আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) আল হাকিমআল হাকামআল আলিম,আল খাবিরআল ওয়াকিলআল আদীলআল বাদিআল খাফিআল মালিকআন নাসিরআল ওয়াসিসুতরাং যে কেউই মানুষের তৈরী করা আইনের অনুসারী হয় এবং নিজের জীবনের যাবতীয় কার্যক্রম তদানুযায়ী পরিচালিত করে যা সম্পূর্ণভাবে তাওহীদ অর্থাৎ আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) একত্ববাদের বিরোধিতা এবং আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) অনেক নাম ও গুণাবলীসমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে এবং এই কার্যক্রমের দ্বারা যে কেউ শিরকের মতো ভর্ৎসনা অমার্জনীয় অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে পড়ে। সে যেন ধরে নেয় যেমানুষের মধ্যে আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) উপরোক্ত গুণাবলীসমূহ বিদ্যমান এবং সে মনে করে মানুষ আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) হতে উৎকৃষ্ট আইন দিতে সক্ষম (নাউযুবিলাহ মিন যালেক) এবং মনে করে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) দেওয়া শরীয়াহ বিধান সঠিক পথ নির্দেশনায়আইন প্রণয়নে ও বিচার ফয়সালার জন্য পরিপূর্ণ না। (নাউযুবিলাহ মিন যালিক)
ইহাদের অধিকাংশই আল্লাহকে মানেকিন্তু এমনভাবে যেতাহার সহিত অন্যেরাও শরীক। (সূরা ইউসুফ ১২: ১০৬) এবং সেই সব মুনাফিক পুরুষ ও স্ত্রী এবং মুশরিক পুরুষ ও স্ত্রীগণকে শাস্তি দিবেনযাহারা আল্লাহ সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করে। দোষ ও খারাবীর আবর্তনে তাহারা নিজেরাই পড়িয়া গিয়াছে। আল্লাহর গযব হইয়াছে তাহাদের উপর অভিশাপ বর্ষণ করিয়াছেন। আর তাহাদের জন্য জাহান্নাম সু-সজ্জিত করিয়া দিয়াছেনযাহা অত্যন্ত বেশী খারাপ স্থান। (সূরা আল ফাতাহ ৪৭: ৬) আল্লাহ কেবল শেরকের গুনাহই মাফ করেন নাউহা ব্যতীত আর যত গুনাহ আছে তাহা যাহার জন্য ইচ্ছা মাফ করিয়া দেন। যে লোক আল্লাহর সহিত অন্য কাহাকেও শরীক করিলসে তো বড় মিথ্যা রচনা করিলএবং বড় কঠিন গুনাহের কাজ করিল। (সূরা আন নিসা ৪:৪৮)
(৯) রাসূল (সঃ) এর দেখানো পথের সম্পূর্ণ বিরোধিতাঃ রাসূল (সঃ) মুসলমানদেরকে আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) একত্ববাদের ভিত্তিতে একত্রিত করেছিলেন এবং শিরকের বিরুদ্ধে মৌখিক ও দৈহিকভাবে জিহাদ করেছিলেন এবং সর্বক্ষণ শরীয়াহ আইনের দ্বারাই সমস্ত কিছু পরিচালনা করেছিলেন। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) অবতীর্ণ বিষয়ের বিরোধী ও অনুসরণকারী কাফেরদের কাছে কখনো তিনি ফয়সালার প্রার্থনা করেননি। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেনঃ কিন্তু যে ব্যক্তি রাসূলের বিরুদ্ধতা করার জন্য কৃতসংকল্প হইবে এবং ঈমানদার লোকের নিয়ম-নীতির বিপরীত নীতিতে চলিবে-এমতাবস্থায় যেপ্রকৃত সত্যপথ তাহার নিকট সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হইয়াছে-তাহাকে আমরা সেই দিকেই চালাইব যেদিকে সে নিজেই চলিতে শুরু করিয়াছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করিব যাহা নিকৃষ্টতম স্থান। (সূরা আন-নিসা ৪: ১১৫)

তিনি তোমাদের জন্যে দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারিত করেছেনযার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকেযা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীমমূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যেতোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না। আপনি মুশরেকদেরকে যে বিষয়ের প্রতি আমন্ত্র্রণ জানানতা তাদের কাছে দুঃসাধ্য বলে মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন এবং যে তাঁর অভিমুখী হয়তাকে পথ প্রদর্শন করেন। (সূরা শূরা আয়াত ১৩) ইবরাহীমের (আ) জীবনপন্থাকে ঘৃণা করিবে কে? বস্তুতঃ যে নিজেকে মুর্খতা ও নির্বুদ্ধিতায় নিমজ্জিত করিয়াছেসে ব্যতীত আর কে এইরূপ দৃষ্টতা করিতে পারেইবরাহীম আর কেহ নহে তাহাকেই আমি পৃথিবীতে আমার কাজ সম্পন্ন করার জন্য বাছাই করিয়া লইয়াছিলাম এবং পরকালে সে সৎ লোকদের মধ্যেই গন্য হইবে। (সূরা বাকারা ২: ১৩০)
(১০) কুফরকে উৎখাতের জন্যেই ইসলামের আগমণঃ আল কোরআনের জিহাদের প্রতিটি আয়াত (একশতের উপরে) এবং অন্যান্য অনেক আয়াতসমূহ ও অসংখ্য হাদীসসমূহ একথা নির্বিঘ্নে প্রমাণ করে কুফরকে সমর্থনের জন্যে নয় বরং কুফরকে সমূলে উৎখাতের জন্যই ইসলামের আগমন। হে ঈমানদার লোকেরাএই কাফেরদের সাথে লড়াই করযেন শেষ পর্যন্ত ফেতনা (শিরক ও কুফর) খতম হইয়া যায় এবং দ্বীন পুরাপুরিভাবে আল্লাহরই জন্য হইয়া যায়। পরে তাহারা যদি ফেতনা হইতে বিরত থাকেতবে তাহাদের আমল আল্লাহই দেখিবেন। (সূরা আনফাল ৮: ৩৯)
(১১) কুফরের সাথে আপোষ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ও হারামঃ যখন মক্কার কোরাইশ মুশরিকরা তাওহীদ অর্থাৎ আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) একত্ববাদের আহবানের প্রতি আপোষ করার জন্যে রাসূল (সঃ) এর নিকট প্রার্থনা করেছিল তখন রাসূল (সঃ) তাদের প্রার্থনা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং তখন আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) সূরা আল কাফিরুন নাযেল করেছিলেন তাতে আপোষের বিপক্ষে পরিষ্কারভাবে উত্তর দেওয়া হয়েছিল। বলিয়া দাওঃ হে কাফেররা! আমি সেই রবের ইবাদত করি না যাহাদের ইবাদত তোমরা কর। আর না তোমরা তাঁহার ইবাদত করযাহার ইবাদত আমি করি। আমি তাহাদের ইবাদত করিতে প্রস্তুত নহি যাহাদের ইবাদত তোমরা করিয়াছ। আর না তোমরা তাঁহার ইবাদত করিতে প্রস্তুত যাহার ইবাদত আমি করি। তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনআর আমার জন্য আমার দ্বীন।  (সূরা আল কাফিরুন ১০৯: ১-৬)
এই আনুগত্য ইসলাম ছাড়া যে ব্যক্তি অন্য কোন পন্থা অবলম্বন করিতে চাহে তাহার সেই পন্থা একেবারেই কবুল করা হইবে না এবং পরকালে সে ব্যর্থ ও বঞ্চিত হইবে। (সূরা আলে ইমরান ৩: ৮৫)কাজেই তুমি এই অমান্যকারীদের কোনরূপ চাপে পড়িয়া কিছু করিও না। এই লোকেরাতো চায় যেতুমি কিছু গ্রহণ করিতে প্রস্তুত হইলে তাহারাও কিছু গ্রহণ করিতে প্রস্তুত হইবে। (সূরা আল-কালাম ৬৮: ৮-৯)

(১২) 
ক্রমে ক্রমে বা আংশিক প্রণয়ন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধঃ কিছু কিছু ব্যক্তি (শয়তান) ক্রমে ক্রমে পরিবর্তন করে আইন প্রণয়নের ভিত্তি ভ্রান্ত মতবাদের উপর ভিত্তি করে কুফর নিয়মের মধ্যে নিজেদের অংশগ্রহণকে ন্যায়সঙ্গত প্রমাণের চেষ্টা করে (যা কিনা পুরোপুরি শিরক)। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) আমাদের জীবনের প্রতিটি কার্যক্রমের আইনদানের একমাত্র অধিপতি বা মালিকএ ব্যাপারে সম্পূর্ণভাবে না মেনে ক্রমে ক্রমে বা আংশিক মেনে নেওয়া একেবারেই অগ্রহণযোগ্য অর্থাৎ শিরক। আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) আইন বা শরীয়াহ প্রণয়নের ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পরিবর্তে ইসলাম অস্বীকার বা বিরোধী ফয়সালা প্রার্থনা এবং ইসলাম বিরোধী আইন প্রণয়ন করা যাবে এ ধরনের যৌক্তিকতা সম্পূর্ণভাবে শিরক। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেনঃ হে মুমিনগণ! তোমরা সর্বাত্মকভাবে ইসলামে প্রবেশ কর। এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করিও না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্র (সূরা আল-বাকারাহ ২: ২০৮) 

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেনঃ 
তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখ্যান কর? সুতরাং তোমাদের যাহারা এরূপ করে তাহাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনে হীনতা এবং কিয়ামতের দিন তাহারা কঠিনতম শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হইবে। তাহারা যাহা করে আল্লাহ সে সম্বন্ধে অজ্ঞাত নহেন। (সূরা আল-বাকারাহ ২: ৮৫)


(১৩) কুফর আইনের আনুগত্য সম্পূর্ণ শিরক ও নিষিদ্ধঃ 
এবং কাফের ও মুনাফেকের সম্মুখে আদৌ দমিয়া যাইও নাতাহাদের নিপীড়নকে মাত্রই পরোয়া করিও না। আল্লাহর উপর ভরসা করআল্লাহই যথেষ্ট যেমানুষ সমস্ত ব্যাপার তাঁহারই উপর সোপর্দ করিয়া দিক। (সূরা আল-আহযাব ৩৩: ৪৮) সুতরাং হে মুহাম্মদ! তুমি আল্লাহর আইন অনুযায়ী এই লোকদের যাবতীয় পারস্পরিক ব্যাপারের ফয়সালা করএবং তাহাদের নফসানী খাহেশাতের (খেয়াল খুশীর) অনুসরণ করিও না। সাবধান থাকউহারা যেন তোমাকে ফিতনায় নিক্ষেপ করিয়া আল্লাহর নাযিল করা হেদায়াত হইতে একবিন্দু পরিমাণ বিভ্রান্ত করিতে না পারে। আর ইহারা যদি বিভ্রান্ত হয়তবে জানিয়া রাখ যেআল্লাহ তাহাদের কোন কোন গুনাহের শাস্তি স্বরূপ তাহাদিগকে কঠিন বিপদে নিমজ্জিত করার সিদ্ধান্তই করিয়া ফেলিয়াছেন। বস্তুতঃ ইহাদের অনেক লোকই ফাসেক। (সূরা আল-মায়েদা ৫: ৪৯)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেনঃ হে ঈমানদারগণতোমরা যদি সেই সব লোকের ইশারা অনুযায়ী চলিতে শুরু করযাহারা কুফরীর পথ অবলম্বন করিয়াছে তবে তাহারা তোমাদিগকে বিপরীত দিকে ফিরাইয়া লইয়া যাইবে এবং তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত ও ব্যর্থ হইবে। (সূরা আল-ইমরান ৩: ১৪৯)
(১৪) মারূফ ছাড়া অন্য কারোর আনুগত্য সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধঃ ধরি যদি মানুষের তৈরীকৃত আইনসমূহের বাহ্যিকভাবে শরীয়াহ নিয়মকে স্বীকার করল কিন্তু তা সত্ত্বেও এর মধ্যে শিরক বিদ্যমান থাকে কারণ তাদের উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) কে খুশী করা এবং তাঁর আনুগত্যের জন্যে নয় বরং এসব কার্যক্রম সাজানোর মাধ্যমে মানুষকে বড় বড় ব্যবসায়ীদেরবড় বড় দলকে খুশীর জন্যে এবং নিজেরা বেতন ভোগ করার জন্যে। যা হোক এইসব আইনসমূহ ইসলামী বিশ্বাস ও আইনসমূহের সম্পূর্ণ বিরোধী। তারা ইসলামী বিশ্বাসের সাথে বিরোধীতা করে এ ঘোষণার মাধ্যমে যে,মানুষ নিজের জন্য নিজেই আইন তৈরী করবে ও নিজেরা নিজেদের মতো জীবন পরিচালনা করবে এবং শিক্ষারাজনীতি ও সমাজব্যবস্থা সমস্ত কিছু ধর্ম থেকে আলাদা হবে। ইসলামী আইনকে পরিবর্তন করে তারা হালাল করেছে মদসুদঅশ্লীল চিত্র ও সাহিত্যগর্ভপাতঅবাধ যৌনাচারব্যভিচারসমকামিতা মানুষের অশিষ্টতা বা অশীলতা ইত্যাদি। নাউস বিন সামা আন থেকে উদ্ধৃত রাসূল (সঃ) বলেনঃ সৃষ্টিকর্তার (আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) অবাধ্যতার সৃষ্টির কোন আনুগত্য নাই। (ফারহুস সুনড়বাহ ১০/৪৪) আহমদ আল হাকিম)। আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (সঃ) বলেন আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) অবাধ্যতার কোন আনুগত্য নেইআনুগত্য আছে মারূফে। (মুসলিম কিতাবুল ইসারাহ নং ৪৫৩৬)বুখারী (২য় খন্ড ৯ নং ২৬৯))


সুতরাং নিম্নলিখিত কার্য
ক্রমগুলো উপরে বর্ণিত হারাম এবং শিরকের অর্ন্তভূক্ত।
১) মানুষের তৈরী আইনে বা নিয়মে ভোট দান করা;
২) আইন প্রণয়নের জন্য ভোট প্রার্থী হওয়া

৩) এমন কোন দলের সদস্য হওয়া যা গঠিত হয়েছে আইন তৈরী বা প্রণয়নের উদ্দেশ্য

৪) মানুষ তৈরীকৃত আইনের প্রতি সমর্থন বা ভোট দানে লোকজনকে ডাকা বা উৎসাহিত করা
যে কেউই এ সমস্ত কার্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিলেন উনার অবশ্যই উচিৎ আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) কাছে ক্ষমা বা তওবা প্রার্থনা করা এবং যে সমস্ত লোকজনকে উনারা পূর্বে এ সমস্ত ভুল কার্যের দিকে আহবান জানিয়েছিলেন তাদের সবাইকে সত্য জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।

বইঃ আল্লাহর দিকে আহবান
লেখকঃ সংকলিত

0 comments: