TOP NEWS

Wednesday, October 31, 2012

মানুষ কি মানুষের ‘রব’ হতে পারে? হলে কিভাবে? আপনি কি নিজের অজান্তে কোন মানুষকে ‘নিজের রব’ বানিয়ে নিয়েছেন? (পর্ব – ১)




যে শিরোনাম দিয়ে আমি লেখাটি শুরু করেছি, তা পড়ে হয়তো আপনি আশ্চর্য হচ্ছেন। আসলেই তো! মানুষ আবার মানুষের ‘রব’ হয় কিভাবে? আমরা তো
জানি ‘রব’ একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা। অথচ তিনি নিজেই বলেছেনঃ

‘‘তারা তাদের সন্ন্যাসী ও ধর্মযাজকদেরকে আল্লাহর পরিবর্তে ‘রব’ বানিয়ে নিয়েছে...।’’
(সূরা তওবাহ ৯ : ৩১)

অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর নবীকে দাওয়াতী পদ্ধতি শিক্ষা দিতে গিয়েও বলেছেনঃ

‘‘বলো (হে নবী), ‘হে আহলে কিতাবেরা! এসো এমন একটি কথার ওপর আমরা একমত হই, যে ব্যাপারে তোমাদের ও আমাদের মাঝে কোন বিরোধ নেই। তা হলো আমরা আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কারো গোলামী করবো না, তার সাথে কাউকে শরীক করবো না এবং আমরা একে অপরকে আল্লাহর পরিবর্তে ‘রব’ বানিয়ে নেবো না।’’
(সূরা আলি ’ইমরান ৩: ৬৪)

সরাসরি কোরআনের আয়াত থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, মানুষ মানুষকে ‘রব’ বানিয়ে নেয়। যদিও কারো পক্ষে ‘রব’ হওয়া সম্ভব নয়, তাই এখানে বুঝতে হবে যে অজ্ঞতা, জ্ঞানের স্বল্পতা, একগুয়েমী কিংবা বিভিন্ন কারণে অনেক সময় মানুষ কোনো কোনো মানুষকে এমন স্থানে বসিয়ে দেয়, এমন ক্ষমতা মানুষের হাতে তুলে দেয়; যার কারণে একান্তভাবে আল্লাহর জন্য সংরক্ষিত ক্ষমতার আসনে মানুষকে বসিয়ে ‘রব’ বানিয়ে ফেলে। আর এভাবে নিজেদের কর্মকান্ডের দ্বারা তারা নিজেদের জন্য চিরকালীন জাহান্নাম কিনে নেয়। অথচ এই লোকগুলোর ভেতরে হয়তো এমন মানুষও আছে যারা নামায পড়ে, রোযা রাখে, হজ্জ্ব করে, যাকাত দেয়, দাঁড়ি আছে, একান্ত নিষ্ঠার সাথে তাসবীহ জপে, এমনকি তাহাজ্জুদ, এশরাক, আওয়াবীন নামাযও পড়ে। তাই মানুষ কিভাবে মানুষের ‘রব’ হয়ে যায়, অর্থাৎ কোন বৈশিষ্ট, গুণাবলী ও ক্ষমতা হাতে তুলে দিলে মানুষকেই রবের আসনে বসিয়ে দেয়া হয়, এ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকার কারণে এই জঘন্যতম অপরাধ যদি আমরা কেউ করে বসি, তাহলে যত নেক আমলই করি না কেন তা কোনো কাজে আসবে না এবং কোনো ইবাদতই কবুল হবেনা। এ ব্যাপারে কেয়ামতের দিন কোনো ওজর ওজুহাত চলবে না, জানতাম না বলেও পার পাওয়া যাবে না। কেননা, আল্লাহ্ তা’আলা স্পষ্ট করে কোরআনে বলে দিয়েছেনঃ

‘‘(হে মানবজাতি) স্মরণ করো সেই সময়ের কথা, যখন তোমাদের ‘রব’ আদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের পরবর্তী বংশধরদের বের করে এনেছেন এবং তাদেরকেই তাদের নিজেদের ব্যাপারে সাক্ষ্য রেখে বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের একমাত্র ‘রব’ নই? তারা সবাই বললো, ‘হ্যাঁ, আমরা সাক্ষ্য দিলাম (যে আপনিই আমাদের একমাত্র ‘রব’)’, এই সাক্ষ্য আমি এ জন্যই নিলাম যে, হয়তো কেয়ামতের দিন তোমরা বলে বসবে যে, আমরা আসলে বিষয়টি জানতামই না। অথবা তোমরা হয়তো বলে বসবে যে, আমরা তো দেখেছি আমাদের বাপ-দাদারা আগে থেকেই এই শের্কী কর্মকান্ড করে আসছে (সুতরাং আমরা তো অপরাধী না, কারণ) আমরা তো তাদের পরর্বতী বংশধর মাত্র। তারপরও কি তুমি পূর্ববর্তী বাতিলপন্থীদের কর্মকান্ডের কারণে আমাদেরকে ধ্বংস করে দেবে?’’ (সূরা আরাফ ৭: ১৭ ২-১৭৩)

আল্লাহ্ (সুবঃ) কোরআনের মাধ্যমে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে, এ ব্যাপারে কোনো অজুহাত চলবে না, জানতাম না বলেও কোন লাভ হবে না। তাই আসুন আমরা কোরআনের উপস্থাপিত বাস্তব ঘটনার আলোকে বুঝতে চেষ্টা করি কিভাবে মানুষ মানুষের ‘রব’ হয়ে যায়। কেননা কোরআনের আলোকে বুঝতে চেষ্টা করলে আমাদের জন্য বিষয়টি নির্ভুলভাবে বোঝা অনেক সহজ হয়ে যাবে। মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে একটি বিষয় জেনে নিন, কোরআনে যখন কোন ব্যক্তি বা জাতির ইতিহাস তুলে ধরা হয় তখন বুঝতে হবে ইতিহাস বা গল্প শোনানোই এখানে উদ্দেশ্য নয়, বরং ব্যক্তি কিংবা জাতি কী কাজ করেছিলো এবং এর ফলে তাদের কী পরিণতি হয়েছে তা পর্যালোচনার মাধ্যমে ঐ কাজের পুনরাবৃত্তি থেকে উম্মতে মুহাম্মদীকে সতর্ক করাই ইতিহাস তুলে ধরার উদ্দেশ্য। আর একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, কোরআনে যখনই কোন চরিত্রের উল্লেখ হবে, বুঝতে হবে এ ধরনের চরিত্র কেয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে থাকবে।

কোরআনের আলোকে মানুষ কিভাবে মানুষের ‘রব’ হয়ে যায় তা খতিয়ে দেখতে গিয়ে মানবজাতির অতীত ইতিহাসেই শুধু নয় বর্তমান বিশ্বেও অসংখ্য (মিথ্যা) রবের পদচারণা আমরা সচরাচর দেখতে পাই। তবে তারা শুধু মুখ দিয়ে বলে না যে, আমরা তোমাদের ‘রব’।

‘রব’ দাবী করা বলতে মূলতঃ কী দাবী করা হয় তা যদি আমরা সত্যিই বুঝতে চাই তাহলে কিছুক্ষণের জন্যে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে ফেরাঊনের ইতিহাসের দিকে। কারণ সে যে প্রকাশ্য নিজেকে ‘রব’ ঘোষণা করেছিলো তা কোরআন সুস্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরেছেঃ

‘‘দেশবাসীকে জড় করে সে ভাষণ দিলো, অতপর সে বললো, আমিই তোমাদের সবচেয়ে বড় ‘রব’।’’ (সূরা নাযিয়াত৭৯: ২৩-২৪)

এখন কথা হলো, ফেরাঊন নিজেকে ‘রব’ বলতে কী বুঝিয়েছে? সে কি দাবী করেছিলো যে, সে আসমান যমীন সৃষ্টি করেছে, মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছে কিংবা পাহাড়-পর্বত যমীনের বুকে গেড়ে যমীনকে সে স্থিতিশীল করে রেখেছে?

না, এমন দাবী সে কখনো করেনি। সে যদি এমন দাবী করতো তাহলে তার সংগী-সাথীরাই তাকে পাগল বলে উড়িয়ে দিতো। বরং সে নিজেও বিভিন্ন পূজা-পার্বনে অংশ নিতো। তারও অনেক ধরনের ইলাহ, মাবুদ বা উপাস্য ছিলো। কোরআন থেকেই এর প্রমাণ দেখে নিনঃ

‘‘ফেরাঊনের জাতির নেতারা (ফেরাঊনকে) বললো, আপনি কি মূসা ও তার দলবলকে রাজ্যে বিপর্যয় সৃষ্টির সুযোগ দিবেন আর তারা আপনাকে ও আপনার ইলাহদের এভাবে বর্জন করে চলবে?’’ (সূরা আরাফ ৭: ১২৭ )

দেখুন আয়াত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করছে যে, তারও অনেক ইলাহ বা উপাস্য ছিলো। তাহলে তার ‘রব’ দাবী বলতে আসলে কী বুঝায়? রব বলে সে কী দাবী করেছিলো? আসমান-যমীন, গ্রহ-নক্ষত্র, মানব জাতিসহ কোনো সৃষ্টি জগতের স্রষ্টা বলে কেউ কোনো দিন দাবী তোলেনি। মক্কার কাফের মোশরেকরাও এসবের সৃষ্টিকর্তা যে আল্লাহ্ তা’আলা এটা সর্বান্তঃকরণে মানতো। যেমনঃ

‘‘জিজ্ঞাসা কর, ‘এই পৃথিবী এবং এর মধ্যে যারা আছে তারা কার, যদি তোমরা জানো?’ তারা বলবে ‘আল্লাহর’। বল, ‘তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?’ জিজ্ঞাসা কর, ‘কে সপ্ত আকাশ এবং মহা আরশের অধিপতি?’ তারা বলবে ‘আল্লাহ্’। বল, ‘তবুও কি তোমরা ভয় করবে না?’ জিজ্ঞাসা কর, ‘সকল কিছুর কর্তৃত্ব কার হাতে, যিনি আশ্রয় দান করেন এবং যার উপরে আশ্রয়দাতা নেই, যদি তোমরা জানো?’ তারা বলবে ‘আল্লাহর’। বল, ‘তবুও তোমরা কেমন করে মোহগ্রস্থ হয়ে আছো?’’’ (সূরা মু’মিনুন ২৩: ৮৪-৮৯)

এমন আরো অসংখ্য আয়াত আছে যা প্রমাণ করে যে, তারা সৃষ্টিকর্তা, রক্ষাকর্তা, লালনকর্তা, পালনকর্তা ও রিযিকদাতা হিসাবে আল্লাহকে মানতো, সুতরাং সমস্যাটা কোথায় ? এই বিশ্বাস থাকার পরও কেন তারা কাফের-মোশরেক, কেন তাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত ? ফেরাঊন তাহলে কী দাবী করেছিলো ?

ইনশাআল্লাহ চলবে...

0 comments: