Friday, November 2, 2012

আপনি কি ইসলামকে আপনার দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করেছেন ?




অনেকে মনে করেন ‘দ্বীন’ শব্দের অর্থ হলো ধর্ম। তাই দ্বীন ইসলাম হলো হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম তথা আরো পাঁচটা ধর্মের মতো কিছু আচার-আচরণ-পূজা-উপাসনার সমন্বয়ে একটি ধর্ম যেখানে রয়েছে শুধু জুমুয়ার নামাজ, ঈদ, শিরনী-সালাদ, জানাজা, কূলখানি জাতীয় কিছু ইবাদত-বন্দেগী। কিন্তু কোনভাবেই ‘দ্বীন’ শব্দটি ইংরেজী Religion শব্দের প্রতিশব্দ নয়

দ্বীন শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছেঃ প্রতিদান, হুকুম, আনুগত্য, Authority, ক্ষমতাবান হওয়া, দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়া। দেখুনঃ আরবী ও ইসলামী শব্দমালার অন্যতম অভিধানঃ لسان العرب.

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেনঃ
وَقَالَ فِرْعَوْنُ ذَرُونِي أَقْتُلْ مُوسَى وَلْيَدْعُ رَبَّهُ إِنِّي أَخَافُ أَن يُبَدِّلَ دِينَكُمْ أَوْ أَن يُظْهِرَ فِي الْأَرْضِ الْفَسَادَ 
ফেরাউন বলল;তোমরা আমাকে ছাড়,মূসাকে হত্যা করতে দাও,ডাকুক সে তার পালনকর্তাকে! আমি আশংকা করি যে,সে তোমাদের দ্বীন পরিবর্তন করে দেবে অথবা সে দেশময় বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। (সূরা মুমিন ৪০:২৬)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীর ইবনে কাসীরে বলা হয়েছেঃ
يعني: موسى، يخشى فرعون أن يضل موسى الناس ويغير رسومهم وعاداتهم.
অর্থাৎ ফিরাউন ভয় করেছিলো যে মূসা (আঃ) তাদের প্রচলিত রীতি-নীতি ও অভ্যাসকে (সামাজিক নিয়ম কানুনকে) পরিবর্তন করে মানুষকে ফিরাউনের ভাষায় ‘পথভ্রষ্ট’ করে দিবেন।

তাফসীর البحر المحيط এ বলা হয়েছেঃ
فقال : { إني أخاف أن يبدل دينكم } ، والدين : السلطان
অর্থাৎ এখানে দ্বীন বলতে শাসন ক্ষমতা বুঝানো হয়েছে। 

তাই এই আয়াত থেকে বুঝা যায়, সে সময় তাদের যে ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ব্যবস্থা ছিলো – তা পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার ভয় ফিরাউনের ছিলো। আর এই সকল ব্যবস্থাকে আল্লাহ দ্বীন নামে অভিহিত করেছেন। ফেরাউন কোন আলাদা ধর্ম প্রচারক ছিলো না – তার আশংকা ছিলো তার নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে, তার প্রতিষ্টিত রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে।

উল্লেখ্য হিব্রু বাইবেলেও দ্বীন শব্দটি বিচার-ফায়সালা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। দেখুনঃ http://en.wikipedia.org/wiki/Dīn#D.C4.ABn_as_Used_in_Judaism

তাই ইসলামী পরিভাষায় দ্বীন হলোঃ মানুষের সমস্ত আনুগত্য, অনুসরণ, ইবাদাত শুধুমাত্র এক আল্লাহর জন্য নিবেদিত হওয়া যিনি একাধারে সৃষ্টিকর্তা, আইন-প্রণেতা ও বিচার-ফায়সালার মালিক।

তাই দ্বীন ইসলাম হলোঃ মানুষের ধর্মীয়, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অন্তর্জাতিক জীবন সহ সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দেয়া দিকনির্দেশনা সম্বলিত জীবন ব্যবস্থা। আর দ্বীন ইসলামে জীবনের এই সকল বিভাগেই রয়েছে সুষ্পষ্ট গাইডলাইন। 

দ্বীন ইসলাম হচ্ছে পরিপূর্ণ দ্বীন, পরিপূর্ন জীবন ব্যবস্থা। অপরদিকে খ্রীষ্টবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এগুলিও দ্বীন – তবে এগুলি পরিপূর্ণ নয়। কোথাও আছে কিছু ধর্মীয় বিধান, কোথাও আছে অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো। 

এখন কেউ যদি আল্লাহর প্রদত্ত ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তে সুদ ভিত্তিক প্রচলিত অর্থনীতিকে অথবা ডঃ ইউনুস উদ্ভাবিত Micro Credit সিস্টেমকে পছন্দ করে, সমাজের জন্য উপকারী মনে করে তবে সে ইসলামকে পরিপূর্ণ দ্বীন হিসেবে মানলো না। কারণ আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন এবং এর সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। 

অনুরুপভাবে কেউ যদি ইসলামী আইনের পরিবর্তে ব্রিটিশ দখলদারিত্বের সময় এদেশে প্রচলিত হওয়া আইনকে কল্যাণকর মনে করে, বিশেষত যে সব আইন ইসলাম পরিপন্থী যেমনঃ চুরি করলে জেল-জরিমানা, জ্বিনা করলে জেল-জরিমানা ইত্যাদি তবে সে দ্বীন ইসলামে পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস করেনি। দ্বীন ইসলামকে যথেষ্ট মনে করে নি। তাহলে তার ঈমান থাকবে না। সে মুসলমান থাকতে পারবে না।

কেউ যদি ইসলামী আন্তর্জাতিক আইনের বদলে জাতিসংঘ প্রদত্ত আন্তর্জাতিক আইনে বিশ্বাস করে তবে যেমনঃ শুধু কতিপয় কাফির দেশই পারমাণবিক বোমা তৈরী করতে পারবে ইত্যাদি তাহলে সে ইসলামকে পরিপূর্ণ দ্বীন হিসেবে মেনে নেয় নি বিধায় সে মুসলমান থাকতে পারবে না। 

কেউ যদি ইসলামিকসামাজিক রীতিনীতির পরিবর্তে জিটিভি, ষ্টার টিভিতে প্রদর্শিত ভারতের হিন্দুয়ানী কিংবা পাশ্চাত্যের যৌন-প্রধান বেপর্দা, বেহায়াপনার সামাজিক নিয়ম-কানুন পছন্দ করে, তবে সে ইসলামকে দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে নি। কারণ আল্লাহ আমাদের জন্য পর্দাকে ফরজ করে দিয়েছেন। এটাই আমাদের জন্য কল্যাণকর। অপরদিকে কাফিররা মনে করে বেপর্দাভাবে চলাফেরা করা কল্যাণকর ও আধুনিকতা।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেনঃ
لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ 
তোমাদের দ্বীন তোমাদের জন্যে এবং আমার দ্বীন আমার জন্যে (সূরা আল কাফিরুন ১০৯:৬)

এভাবে ইসলাম একটি স্বতন্ত্র দ্বীন আর বাকী সকল দ্বীন হলো স্বতন্ত্র। একটি মানব-মস্তিস্ক প্রসূত আরেকটি সম্পূর্ণ আল্লাহ প্রদত্ত। একটি হচ্ছে শাশ্বত আরেকটি অপূর্ণ - সদা ‘ট্রায়াল এন্ড এরর’ দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে, একটি সর্বজ্ঞানী, আল-আলিম, আল হাকিম আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে, আরেকটি বীর্জ থেকে সৃষ্টি সীমিত জ্ঞানের অধিকারী মানুষের হাইপোথিসিস, একটি হলো জান্নাতে যাওয়ার উপায় আরেকটি হলো নিরেট কুফর - জাহান্নামের ডাইরেক্ট পথ।

অতএব আমাদের যার ইচ্ছা তার প্রতিপালকের দিকে পথ খুঁজে নিক। আল্লাহ বলেনঃ
فَمَن شَاء اتَّخَذَ إِلَى رَبِّهِ مَآبًا 
অতঃপর যার ইচ্ছা,সে তার পালনকর্তার কাছে ঠিকানা তৈরী করুক। (সূরা আন নাবা ৭৮:৩৯)

0 comments: