Friday, November 30, 2012

কুরআন এবং আপনি





আল্লাহতা’আলা কুরআনে সুরা আলে ইমরানের ১৮৬ নং আয়াতে বলছেন,

“নিশ্চয়ই তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হবে তোমাদের সম্পদ ও জীবনের দ্বারা ... “

কিছু লোকের জন্য এটা হতে পারে দারিদ্র। কারো জন্য হতে পারে সেটা, কোন মারাত্নক শারীরিক কিংবা মানসিক অসুস্থতা। আবার কিছু মানুষের জন্য, কোন ভালবাসার মানুষকে হারানো। কারও জন্য বা বন্দীদশা। তবে আমাদের প্রত্যেকের জন্যই, আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’আলার পক্ষ থেকে এটা একটা প্রতিশ্রুতি যে, তিনি আমাদের মধ্যে সবাইকেই জীবনের কোন না কোন সময়ে, কোন একধরনের পরীক্ষার মুখোমুখি করবেনই। আপনি নবীদের সমতুল্য কোন মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে থাকুন কিংবা একজন খুনীর মতন ঘৃণ্য ব্যক্তিত্বের কেউ হোন না কেন, আল্লাহতা’আলা আপনার জন্য নির্দিষ্ট পরিমান দুঃখ-কষ্ট নির্ধারন করে রেখেছেন। আসলে, আপনি যদি খেয়াল করেন যে কত ভিন্ন ভিন্ন ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন আল্লাহতা’আলার প্রেরিত নবীদের প্রত্যেকে, তাহলে আপনার কাছে মনে হবে যেন আল্লাহতা’আলা আগে থেকেই আপনার আমার জন্য এই জিনিসগুলোকে উদাহরন হিসেবে রেখে দিয়েছেন যাতে আমরা আজকের সমস্যাগুলোকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারিঃ



আদম (আঃ) এর একছেলে আরেক ছেলেকে মেরে ফেললো।
নূহ (আঃ) এর এক ছেলে কাফির ছিল, পানিতে ডুবে যার মৃত্যু হলো।
ইব্রাহিম (আঃ) এর নিজের বাবা ছিল অত্যাচারী মুশরিক।
ইউসুফ (আঃ)কে অন্যায়ভাবে দীর্ঘ দিন কাটাতে হয়েছিল কারাগারে।
আইয়্যুব (আঃ) কে সম্মুখীন হতে হয়েছিল মারাত্নক ধরনের সব অসুখের।
ইয়াকুব (আঃ) দুইবার তার দুই ছেলেকে (ইউসুফ ও বিনে আমিন) সাময়িকভাবে হারিয়েছিলেন।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দারিদ্র্যের সম্মুখীন হয়েছিলেন, জীবনের উপর নেমে এসেছিল ঝুঁকি, অল্প বয়সী সন্তানদেরকে হারিয়েছিলেন, প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজাকে হারিয়েছিলেন, প্রাণপ্রিয় চাচা তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল পরপারে, তার নিজের জন্মভূমি থেকে হয়েছিলেন বিতাড়িত।

তাই বলা চলে এখনকার দিনে আমরা যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে এমন একটি সমস্যাও নেই যেগুলো পূর্ববর্তী কোন নবী-রাসুল মোকাবিলা করেন নি। এই সত্যটির উল্লেখযোগ্য কিছু উপকারিতা হচ্ছে,

আমাদের কাছে প্রত্যেকটা কষ্টকর পরীক্ষার নমুনা রয়েছে এবং সেই সাথে রয়েছে সেগুলো ধৈর্য্যের সাথে মোকাবিলা করার পর্যাপ্ত দিক নির্দেশনা।
আল্লাহতা’আলার সবচাইতে প্রিয় বান্দাদেরকে এই ধরনের ভয়াবহ পরিস্থিতিগুলোর মুখোমুখি হবার ঘটনা থেকে আমরা সিদ্ধান্তে পৌছতে পারি যে এই সকল বিপদময় পরিস্থিতির মোকাবিলা মানুষকে পূর্ণতা দান করে।
নবীদের সাথে আমাদের অন্তত একটা দিকে সাদৃশ্য থাকার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
যখন আমরা নিজেরা কোন সমস্যার সম্মুখীন হবো তখন নবীদের কষ্ট-ত্যাগ ইত্যাদি যথার্থভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হব, ফলে আল্লাহতা’আলার নবী -রাসুলদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা সৃষ্টি হবে।
আল্লাহতা’আলার উপর ভরসা রাখার মানসিকতা জন্মাবে আপনার মাঝে যখন আপনি বুঝতে শিখবেন যেহেতু আল্লাহতা’আলা নবীদেরকে সাহায্য করেছিলেন সেহেতু তাদের মতন তাকওয়া থাকলে আপনিও আল্লাহর সাহায্য লাভ করবেন।
এমনকি নবীরাও আল্লাহতালার পক্ষ থেকে পরীক্ষার উর্ধ্বে নন-এই সত্যটি সমগ্র সৃষ্টির উপর আল্লাহতা’আলার একচ্ছত্র আধিপত্যের বিষয়টিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে তোলে।

তাই, যখন আমরা কষ্টকর কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হই, বিষয়টি আমাদের কাছে খারাপ প্রতীয়মান হতে পারে, অথচ আমরা জীবনে নিশ্চিত কিছু অর্জন করতে পারি এর থেকে। বিশেষত যদি আমরা জিনিসগুলোকে আল্লাহতালার নবীদের সাথে তুলনা করতে পারি।

তারিক মেহান্না
পলিমাউথ কারেকশনাল ফ্যাসিলিটি
আইসোলেশন ইউনিট- সেল #১০৮

অনুবাদেঃ Collected Notes And Discussion

0 comments: