TOP NEWS

Showing posts with label ভালোবাসা. Show all posts

Tuesday, August 7, 2012

কেন করলে এই রকম...



ভালোবাসার জন্য আমার অনেক কাঙ্গালপনা। কেউ আমার খোঁজ নেবে, আমার সাথে বসে গল্প করবে, আমাকে একটু ভালো করে বুঝবে -- এমন আশা আমার সেই ছোটবেলা থেকেই। স্কুলে পড়ার সময় সুমনের সাথে দু'বছর একই বেঞ্চে বসতাম। একদিন কিছু না বলেই ওরা জঙ্গিপুর ছেড়ে চলে গেলে কষ্টে কেঁদে ফেলেছিলাম। এরপর অনেকবারই কাঁদতে হয়েছে। অনেক রকম ঘটনায়। আমি ছেলেমানুষ, তাই লোকচক্ষু এড়িয়ে আড়ালে আবডালে চোখের পানি মুছতাম। কেউ দেখে ফেললে হাসাহাসি করবে -- সেই আতঙ্ক থাকতো! 

আরো কতবার এই হৃদয় যে ভাঙ্গলো, তার ইয়ত্তা নাই। একটা সময় অনেক মনে হতো -- আমি খুব অভাগা, তাই আমার দিকে কেউ ফিরে চায়না। আমি অভাগা বলেই হয়ত যাকে ভালোবাসি, সে আমাকে গুণেও দেখেনা। অজস্র সময় গেছে জীবনে, যখন অন্য কেউ আমার সাথে কথা বললে, আমার খোঁজ নিলে আমার ভালো লাগবে -- এই ভেবে ভগ্নহৃদয়ে কেটেছে সময়। অনেক ভাবতাম, কেন আমার জীবন এমন হবে! আমি তো বিশ্বাস করিনা এত দুঃখী আমি হতে পারি। কেনই বা হবো -- আমার জীবনের সমস্তটুকু দিয়েই তো আমি আমার সব কাজে প্রচেষ্টা চালাই! 


আমার জীবনে আমি কোন বস্তু বা জিনিসের জন্য কষ্ট পেতাম না। একটা ফোন, ল্যাপটপ, খেলনা গাড়ি, ভিডিও গেমের জন্য জীবনেও আমি কষ্ট পাইনি। সেই ছোটকাল থেকে কোনদিন, কখনো না। কিন্তু সম্পর্কগুলো আমার কাছে অনেক বড় ছিলো। আমি বরং আরো ভাবতাম -- আমিতো ঠিকমতই সবার সাথে কথা বলি, তবু কেন ওরা আমাকে ভুল বুঝে? কেন সবাই আমার সাথেই এমন করে? -- এর চাইতে বেশি ভালো করে, সঠিক করে ভাবার যোগ্যতা ছিলো না তখন। মূলতঃ জ্ঞান ছিলো না। সবসময়ে তাই নিজের অজান্তেই বুকে অদ্ভূত কষ্ট জমে থাকতো। সেখানে ছিলো না পাওয়ার দল, সেখানে ছিলো একাকীত্বের কষ্ট, সেখানে ছিলো কেউ আমাকে না বোঝার কষ্ট, কাউকে আপন করে না পাওয়ার কষ্ট। যেহেতু চাওয়া বলতে কোন বস্তু আর বেড়ানো ছিলো না আমার কাছে, তবু না পাওয়ার এই কষ্ট জমে জমে হতাশায় রূপ নিতো। 


আমার জীবনে কখনো কোন একটা পরীক্ষা ভালো হলে, সেটা আমার সুখের কারণ হতো। খারাপ হলে জগতটাই অর্থহীন হয়ে যেতো! কখনো কোন বন্ধু কেন অন্য ৫ জনকে দাওয়াত করলে আর আমাকে না করলে খারাপ লেগে মন খারাপ হতো। ভাইয়া আমাকে একটু তাচ্ছিল্যভরে সমালোচনা করলো -- আর তাতে খুব কষ্ট পেলাম। আপু হয়ত আমাকে খুবই ভুল বুঝে বকলো, রাগ করলো -- আমার হয়ত আকাশটাই ভেঙ্গে পড়লো মাথায়। সবকিছু খারাপ লাগতে শুরু করলো কেননা আমার মনে হত আমাকে পারফেক্ট হতে হবে এবং পেতেও হবে। এভাবে, একসময় কষ্ট পেলাম মনের মতন চাকুরি না পাওয়ায়। বন্ধুরা অনেকেই পেয়ে গেলো সেই নামকরা সেরা প্রতিষ্ঠানে -- আমিই খালি পেলাম না!! 


আজকে একটা ছোটভাইয়ের কথা শুনলাম। মনের মতন ভার্সিটিতে চান্স না পেয়ে সে বিগড়ে গেছে। এই দুঃখে এখন জীবনকে যেদিকে ইচ্ছা সেদিকেই যেতে দিচ্ছে। একটা সময় হয়ত তার আফসোস করা ছাড়া উপায় থাকবে না। তবু ভেবে দেখলাম, এমন কষ্ট আমাকেও অনেক পুড়িয়ছিলো। না পাওয়ার বেদনা। ওই ভার্সিটিতে চান্স পেলেই আমি সুখী -- না পেলে আমি দুঃখী। এই ছোট ভাইটার মতন অজস্র ভগ্নহৃদয় আমাদের চারপাশে, আমরা সবাই কমবেশি। 


কেন সবাই চলে যায়, সবকিছু চলে যায়? কেন এই হারানোর দুঃখগুলো আমাদেরকে এত বেশি পোড়ায়? 

এরকম কিছু কথা ইয়াসমিন আপুর লেখায় পড়ার পর আবিষ্কার করলাম পরিষ্কার! সুবহানাল্লাহ! আমি আসলে সবসময়েই আমার সুখ-দুঃখ অন্যের হতে ছেড়ে দিতাম। আমার সুখ-শান্তির কন্ট্রোল দিয়ে রেখেছিলাম এমন কিছু জিনিসের কাছে -- যা নশ্বর। যে/যারা ক'দিন পরে হয়ত নষ্ট হয়ে যা্বে, মরে যাবে। সেগুলো পেলে, তারা ঠিক থাকলে আমার জীবন ঠিক। তারা বিগড়ে গেলে -- আমিও শেষ!! অথচ যিনি এই সবকিছুর মালিক, তার কথা আমার মনেই থাকেনি। যিনি আমাকে অজস্র জিনিস দিয়ে ঋণী করে রেখেছেন, তার কাছ থেকে হয়ত দু'একটা জিনিস না পেতেই মন খারাপ হয়ে গেলো। অথচ তিনি আমার জন্য প্রতিটি মূহুর্তই সাজিয়ে রেখেছেন। 


আরো অদ্ভূত একটা জিনিস হলো -- এই চলে যাওয়া, হারিয়ে যাওয়া, না পাওয়ার ভেতর খুব বেশি সুন্দর একটা জিনিস আছে। 

একটু অবাক লাগলো? 

প্রতিটি বন্ধন ছিঁড়ে যাবার কষ্টের মধ্যে আসলে আমাদের একটা রিমাইন্ডার আছে। আমরা যখন আমাদের আল্লাহকে ছেড়ে একটা চাকুরিকে অনেক দাম দিতে থাকি। অন্য কোন নশ্বর (যা নষ্ট হয়ে যায় একসময়) মানুষকে বা সৃষ্টি বস্তুকে তাঁর চাইতে বেশি করে ভালোবাসায় ডুবে যেতে নিই, ভুল পথে পরিচালিত হই -- তখন আল্লাহ আমাদের রিমাইন্ডার দেন।এর ফলে, আমরা যেন আমাদের সুখী-দুখী হবার ক্ষমতা অন্য কারো উপর ছেড়ে না দিই -- যেন ফিরে আসি আবার তাঁর কাছে। আল্লাহর সাথে আমাদের যেই সম্পর্ক -- সেইটা কি কোনদিন নষ্ট হবার? আজো তিনি আমাদের রব, আমাদের প্রিয়তম -- অনন্তকাল কেবল তিনিই আমাদের সবচাইতে কাছের বন্ধু হয়ে থাকবেন। তার সাথে সম্পর্কের কথা ভুলে আমরা কোথায় যাই? 


অনেকের হাতে আল্লাহ এই জগতে কিছু ক্ষমতা দেন সাময়িক সময়ের জন্য। যেমন হয়ত রাস্ট্রের একটা গুরুত্বপূর্ণ পদে কেউ আছেন -- তার চারপাশে চাটুকারের অভাব হয়না যারা তার সাথে সম্পর্ক তৈরি করে কিছু পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে থাকে। এই ক্ষমতা সেই লোকেরও বেশিদিন থাকে না, চাটুকারদের কথা তো বাদই দিলাম। অথচ যার হতে সব ক্ষমতা, যিনি আসমান জমিনের সবকিছুকে কন্ট্রোল করেন -- তার কাছে কি চেয়েছি আমরা অমন করে? অথচ তার একটুখানি প্রিয় হতে পারলে আমরা এই পৃথিবীতেও পাবো তার ভালোবাসায় হৃদয়ে আনন্দের স্পর্শ, অনন্তজগতে কেবলই প্রশান্তি। 


প্রেম ভালোবাসার চিন্তায়, একটা মেয়ের কাছে ভালো হতে, তাকে কাছে পেতে কত কিছুই না করে একটা ছেলে। তাকে পাওয়া না পাওয়াতেই জীবন যেন সবকিছু। না পেয়ে অনেকে পাগল হয়ে সেই মেয়েকেও মারে, নিজেও মরে। অথচ এই মানুষটাক পাবার পরের দিনই সেই মেয়েটি মরে যেতে পারে, হয়ত সে নিজেই মরে যেতে পারে। অথচ সে একটা সম্পর্ককে সবচাইতে বেশি দামি মনে করে জীবনের ক্ষতি আনলো। অর্থহীন একটা কাজ, অর্থহীন সেই অনুভূতি। 

এভাবে আরেকটা সৃষ্টির কাছে নিজের সুখ-দুঃখ ন্যস্ত করে আমরা সবসময়েই জটিল করে চলেছি আমাদের জীবন। অথচ আল্লাহ বলেই দিয়েছেন, তিনি কাউকে সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেন না। নিজ থেকে আমরা বোঝা মাথায় নিয়ে ফেললে আবার তাঁর কাছে ফিরে ক্ষমাপ্রার্থনা করা উচিত। 

ভেবে দেখিতো, আপনার হৃদয়ে কি অনেক কষ্ট? অনেক না পাওয়ার বেদনা? আপনার কাছ থেকে কি কিছু হারিয়ে গেছ? চলে গেছ? হাত ফসকে কেউ/কিছু চলে গেছে? ভেবে দেখুনতো, সেই জিনিসটা থাকলেও কতদিন থাকতো আপনার কাছে? ১০বছর? ২০ বছর? 

এমন কিছু হারালে বুঝবেন, এটা আমাদের মনে করিয়ে দেয়া হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে -- হয়ত আসল রিলেশন ছেড়ে ভুল কিছুতে আমরা জড়িয়ে পড়ছিলাম। আল্লাহ আমাদের ভালো চান, তাই একটা ঝাড়া দিয়ে দিলেন। এমন broken heart দের উত্তম ঔষধ হলো -- সেই মহান আর প্রিয়তম অন্তরতম জনের কাছে ফিরে যাওয়া - তার কাছে মনের কষ্ট খুলে বলা -- যিনি এই বিশ্বজাহানের সমস্ত ক্ষমতা ধারণ করেন, যিনি রাহমানুর রাহিম। যার কাছে তার বান্দা অনুতপ্ত হয়ে ফিরে গেলে তিনি যারপরনাই খুশি হন। 

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার সেই বাণীটি আমাদের মনে আছে তো? -- 
" যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়।" 
-- [সূরা আর রা'দ, আয়াতঃ ২৮] 



 নির্ঘন্টঃ  
 Why do people have to leave each other :: Yasmin Mogahed 
 People leave each other but do they return? :: Yasmin Mogahed
11:01 AM Posted by Just for you 3

Tuesday, July 31, 2012

ভালবাসবো বাসবো রে বন্ধু!!!

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না

লেখক: ব্লগার স্বপ্নচারী | সম্পাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী, মিডিয়াফায়ারজাস্টফর‍উই 

আজকে একটা সম্ভাব্য প্রেমের ধ্বংস দেখতে পেলাম !!
অফিস থেকে ফিরছিলাম, রিকসা থেকে যেখানে নামলাম, সেখানে অচেনা দু’টো ছেলে আর একটা মেয়ে দাঁড়ানো, একটা রিকসা দাঁড়ানো পাশে। সেই মেয়েটার বান্ধবীকে সম্ভবত একটা’ ছেলে ‘লাইক’ করে, সেই কথাটা বন্ধুটা মেয়েটাকে বলছিল বলে বুঝলাম। মেয়েটা কিছু একটা উত্তর দিলো। পরে শুনলাম বন্ধুটি মেয়েটিকে বলল, ”ও কি ফ্রেন্ডশিপ টাইপের রিলেশনও করবেনা?”। মেয়েটা রিকশায় উঠতে উঠতে বলল, “তোমরা রাগ করো না, ঠিকাছে? ভালো থেকোওও, বাআআই!! ” (একটু সুর করে)
বেচারা প্রেমিক ছেলেটা কষ্টে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়ানো। সারাদিন কাজের চাপে সময় কাটানোর পর দিনশেষে এই কষ্ট পাওয়ার ঘটনা দেখে আমিও স্তব্ধ। বন্ধুটি সেই রোমিও প্রেমিককে ঠেলে রিকশায় তোলা পর্যন্ত ওদের দেখলাম। রিকসা রওনা হবার পর আমিও একটু বিষণ্ণ মন নিয়ে হাঁটা ধরলাম। এরকম করে দেখা অনেক দৃশ্য মনে পড়ে গেলো। এমন কত প্রেমের শুরু-শেষ দেখলাম এইটুকু জীবনেই!
কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ঘোরা স্কুল-কলেজের এই ছেলে মেয়েগুলোর জীবনে প্রেম একটা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে গেছে। এটা আজ থেকে দশ বছর আগে ছিল না। বিলবোর্ড, মিউজিক ভিডিও, নাটক-সিরিয়াল, শাহরুখ খান-শাহেদ কাপুর, কারিনা-প্রিয়াঙ্কা-রনবীরদের সিনেমা দেখে প্রেম করাটাকে জীবনের অত্যাবশ্যকীয় কাজ বানিয়ে ফেলেছে। তাই যেকোনো মেয়ে দেখলেই তাদের নিজেদের রোমিও বানাতে ইচ্ছে হয়। আমার ভাইবোনদের কাছে শুনতে পাই, কলেজে বা ভার্সিটিতে ক্লাসের কোন মেয়ে (যে কিনা প্রেম করেনা) পেলেই সবাই তাকে ‘অফার’  দিয়ে বসে। এই আতঙ্কে অনেক মেয়ে নিজেকে ‘ইন এ রিলেশনশিপ’ দেখিয়ে থাকে!!
স্বভাবগতভাবে কোমল আর কিছুটা ‘ভদ্র’ ছেলেরা দুঃখ পায় এবং ছ্যাঁকা খেয়ে অনেক কাজে অমনোযোগী হয়ে যায়। আমার অনেক বন্ধুরা সেই সময়েই সিগারেট ধরে “দুইডা টান” দিয়েছিলো আর সেখান থেকেই জীবনের মতন শুরু হয়ে যায়।
অন্যদিকে, যেসব ছেলের স্বভাবে ছোট থেকেই কোমলতা বর্জিত হয়ে গেছে, ছোটবেলা থেকেই যারা প্রয়োজনীয় পারিবারিক শিক্ষা কম পেয়ে বড় হয়েছে, তারা প্রেম করতে না চাওয়া সেই মেয়ের পিছু ছাড়েই না। মেয়েটা এই অফারকে ফিরিয়ে দিলেও ‘প্রেমের নেশায় কাতর’ নাছোড়বান্দা ছেলেটা ক্রমাগতভাবে ফোনে, ক্লাসে, রাস্তায়, ফেসবুকে মেয়েটিকে ফলো করার চেষ্টা করতে থাকে। আসলে এটাকে ‘বিরক্ত’ করা বলাটাই সঠিক হবে। এই বিরক্ত করার স্কেল যেসব ছেলে যত বেশি নোংরা আর পশু তাদের কাছে ভয়ংকর থেকে ভয়ংকরতর হয়। আর বখে যাওয়া ছেলেরা তখন “জোর করে” ভালোবাসা আদায়ে অনেক মেয়েরই ক্ষতি করতে চায় — যা কিনা স্বাভাবিক প্রাণীজ গুণাবলী। এই প্রাণী থেকে মানুষ হতে চেষ্টা করতে হয়।
আর সমাজের আধুনিকা ইয়ো-টাইপের মেয়ে অথবা পরিস্থিতির শিকারে পড়ে মেয়েরা এই অফার গ্রহণ করে, প্রেম খেলা শুরু হয়। স্কুল কলেজের বাইরে রাস্তার উপরে, ফাস্ট-ফুডের দোকানে, বাসের কাউন্টারের সামনে, কোন পার্কে বা বসুন্ধরা সিটিতে তাদের একসাথে দেখা যায়। প্রচুর ফোনালাপ শুরু হয় — কী খেয়েছ, তুমি কী পছন্দ করো, তোমার স্বপ্ন কী, তুমি কোথায় বেড়াতে যেতে চাও, তোমার কোন রঙ পছন্দ — এইসব বলে এফএনএফ নাম্বারের ব্যাপক উসুল করা হয়। জীবনের সমস্ত কথা এক দুই সপ্তাহেই বলা শেষ হয়ে যায়। তারপর ছেলেটা যদি উত্তম চরিত্রের না হয়, আর কোন একটা আদিম চাওয়া পূরণ করতে চাইলে তা না দেয়ায় মেয়েটা পুনরায় আবার দোষী হয় এবং এতকিছুর পরেও ছেলেটা তার উপরে খেপে যায়। মেয়েটা এমন অবস্থায় পেছানোর চেষ্টা করে কিন্তু অনেক দিনের অনেক অন্তরঙ্গতায় বাধা পড়ে সেখানেই আটকে যায়। স্মৃতিরা বাঁধা হয়ে যায়। শুরু হয় “প্রেমের নাম বেদনা” টাইপের অবস্থা।
আবার, কোন একদিন তৃতীয় কোন ছেলের বা মেয়ের আগমন হয়, ঝগড়া আর ভুল বোঝাবোঝির শুরু। অথবা কেউ একজন ছেলে বন্ধু-মেয়েবন্ধুর স্বাধীনতা চায়, অপরজন তাকে আপন করে চায় আবার শুরু হয় যুদ্ধ। আবারো এই সম্পর্ক ভাঙ্গনের পথে যায়, একসময় আবারো পিছনে লাগা স্টেজ। দুইজন তাদের সম্ভাব্য সকল বন্ধু মহলে অপরের নামে খারাপ কথা বলতে থাকে, যাকে গীবত বলা যায়। এখানে প্রতিহিংসার আগমন হয়। ক্রোধের আগমন হয়।
এইরকম আরও বহু ধাপ পেরিয়ে বাবা-মা পর্যন্ত এসে আবার থেমে যায় প্রেমের স্রোত। তখন ডানে বামে শোনা যায় — প্রেম করলে অনেক অসাধ্য সাধন করতে হয়। এই জায়গায় কানপড়া পাওয়া যায় “ভালো কিছু পেতে হলে কিছু তো ত্যাগ হবেই”।অবশেষে এই প্রেম নামের ভালো কিছুর জন্য সারাজীবন সবকিছুতে সাথে থাকা বাবা-মা, ভাই-বোনের যাবতীয় অপছন্দ উপেক্ষা করে, রাগারাগি আর গালাগালির পরে হয়তবা তারা একসাথে হয়। কিন্তু বিয়ের পরের জীবন? সে এক ইতিহাস। সেইটা অন্যরকম আলোচনার বিষয়।
অনেকে আবার ‘সেই একজন’ কে না পেয়ে ভগ্ন হৃদয়ে চোখের পানি ঝরাতে থাকে। তাকে পাওয়ার জন্য শুরু হয় প্রার্থনা। হয়ত তাকে চেনাই হয়নি ঠিকমতন, কিন্তু এই মোহগ্রস্ততা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনা তারা। ছেলে হোক, মেয়ে হোক… এমন ঘটনা অজস্র।
উপরের কোন ঘটনা জীবনে নেই — এমন ছেলে বা মেয়ে খুব বেশি না মনে হয়। বয় ফ্রেন্ড-গার্ল ফ্রেন্ড কি আমাদেরই এই সমাজে ছিল পনের-বিশ বছর আগে? তখন কি আমাদের বড় ভাই-বোনেরা থাকতে পারেননি? আর সমাজের ওই রক্ষণশীলতা ছিল বলেই এত হাজার রকমের আতংক, ভয়ে নীল হয়ে থাকতে হতো না সমাজের মেয়েদের, মায়েদের, বাবাদের।
আফসোস!! আমাদের জীবন, আমাদের অনুভূতি, আমাদের ভালোলাগা-মন্দলাগা, আমাদের স্বাচ্ছন্দ্য এখন আমরা ছেড়ে দিয়েছি কিছু মোবাইল অপারেটর আর কর্পোরেট কোম্পানিদের বিজ্ঞাপনের কাছে, মুভি আর সিরিয়ালের কাছে।
বলিউডের কেথ্রিজি, কুচ কুচ হোতা হ্যায়, মোহাব্বাতেইন, জাব উই মিট দেখে প্রেমিক-প্রেমিকা পাবার এবং হবার যেই আকাঙ্ক্ষাতে আমার ভাইবোনদের হৃদয় দোলে  সেই নায়ক-নায়িকা, ক্যামেরা ম্যান-প্রস্ততকারক, প্রযোজক সবাই এ থেকে কেবল মুনাফাই অর্জন করেন। আর সেই ব্যবসা সফলতা থেকেই তাদের এমন সিনেমা বানানোর হিড়িক পড়ে। সেই সিনেমায় সত্য কতখানি, তার প্রভাব কতখানি আমাদের সমাজে সেই হিসেব কেইবা রাখে? ভুক্তভোগী যারা, সাবধানতা তাদের থেকেই তো আগে আসা উচিত, তাই নয় কি?
অথচ এই প্রেমিক-প্রেমিকা হয়ে আমরা প্রেমাক্রান্ত হয়ে যন্ত্রণা দিই আমাদের মা কে। আমাদের দুঃখিনী মা ক’বার গিয়েছেন তিনি এদেশেরই মাধবকুণ্ড ঝর্ণার কাছে বা ভাক্টোরিয়ার কাছে? ক’বার গিয়েছেন তিনি কেএফসি আর ফ্যান্টাসি কিংডমে? তার কী একটা জীবন কেবলই আমাদের জন্য ভাত আর তরকারি রান্নার জন্য? আমাদের শরীরের খবর নেয়ার জন্য? কেন এই কাজ করবেন তারা? ছোটবেলা কত শত রাত আমরা এই মা-কে ঘুমাতে দিইনি — কেন এই মায়েদের অশান্তি দিয়ে এই ভালোবাসা বাসি? কেন হয়ত আমার কারণে অন্য আরেকটা ছেলে বা মেয়ের মা-বাবাকে অশান্তি দেয়া? পরিবারের শান্তি কেন আমরা নষ্ট করতে চাই?

ভালোবাসা মানে কী তবে? ভোগ করা?

‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ এই কথাটাকে অগ্রাহ্য করলেই কেন ওই মেয়েটা শত্রু হয়ে যায়? তার মানে কি সেই মেয়ের কিছুটা সময়, তার কণ্ঠের অনুরণন, তার কিছু দৃষ্টিকে, তার সহজাত সম্পদগুলোকে ভোগ করতে না পেরেই আমি তাকে ভালোবাসার পরিবর্তে ঘৃণা করতে শুরু করলাম? কী হাস্যকর রকমের সস্তা ব্যাপার, তাইনা? যাকে ভালোবাসি, তাকে না পেলেও তো আমার ভালোবাসা থাকারই কথা তাইনা? এই স্বার্থপরতা থেকে মুক্ত হতে পারলে সেদিন নিজেকে মুক্ত করা যাবে পশুত্ব থেকে।
ক’দিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে ক্লাসমেট ছেলেটা তার প্রেমিকাকে ছুরি দিয়ে গেঁথে খুন করে ফেলার ঘটনাতে কি এই ভয়ংকর জিনিসগুলোই পরিষ্কার করে দেয় না? মানবীয় গুণাবলী যেখানে হারিয়ে যায়, তখন প্রেমের নামে এই সাময়িক মোহ কেটে যেতে কেবলই একটা মূহুর্ত লাগে!
প্রিয় ভাইয়ারা, জীবনটাকে জটিল করতে, পাপময় করতে, রাগ-ক্ষোভ-হতাশার স্ফুরণ ঘটাতে কেন তোমরা ফিরে ফিরে রোমিও, মজনু, ফরহাদ হতে চাও? তুমি সেই মেয়েটিকেই খুঁজো, যার মতন একটা কন্যা সন্তান পেলে তুমি খুশি হবে জীবনে। কিংবা এমন মেয়ে খুঁজো যাকে তুমি তোমার সন্তানদের মা হিসেবে চাও! মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট থেকে দূরে রেখে ঘরের আলো নিভিয়ে নিজেকে একটুখানি সময় দাও। তারপর নিজের আত্মাকে জিজ্ঞেস করো তো এই একটা দেহ, প্রাণ, সে কি শুধুই কোন নারীর পেছনে ছোটার জন্য? তোমার ভাইবোন, মা-বাবার কষ্টার্জিত জীবন, রাস্তার পাশের কষ্টে থাকা মানুষগুলো কি কখনই তোমাকে ভাবায় না? যেদিন তুমি হবে সুন্দর চরিত্রের উদার প্রাণের ছেলে, দেখবে তোমার চাইতেও চমৎকার একজন তোমারই জন্য অপেক্ষা করবে এই জীবনের বাকিটা সময়, অনন্তকালের অসীম সময়ে সঙ্গ দিতে। চোখকে সংযত করা উচিত, কেননা এই নির্লজ্জ অবাধ্য দৃষ্টি অনেক বোনদেরকে কষ্ট দেয়, অশান্তি দেয়। হতে পারে সে আমাদেরই কারো মা-বোন। আর আখিরাতে আল্লাহর হিসেব তো হবে খুবই কঠিন!
আচ্ছা আপু, এই রূপ-সৌন্দর্য-যৌবন কতদিন থাকে জানো তো? সর্বোচ্চ ১৫-২০ বছর। তারপর? এই শরীর ভেঙ্গে যাবে, চামড়া কুঁচকে যাবে। তখন কে দেখবে তোমাকে? তুমি বরং এমন ছেলেকেই খুঁজো, যার মতন ছেলে গর্ভে পেলে তুমি খুশি হবে। কিংবা এমন ছেলে খুঁজো যাকে তুমি তোমার সন্তানদের বাবা হিসেবে চাও। তথাকথিত দারুণ স্মার্ট ছেলের আক্রমণাত্মক, ড্যাম কেয়ার আর “ম্যানলি” আচরণে মুগ্ধ হয়ে, তার প্রতি অনেক মেয়েরা মুগ্ধ বলে তাকে নিজের জীবনে চাইলে — মনে রেখো আপু, সে যদি তোমার হয়ও কখনো, তখনো সে এমনই থাকবে। সেদিন তার এই আক্রমণের আচরণের খারাপ দিকগুলো তুমি ভোগ করবে প্রতিদিন, প্রতি বেলা। আসলে, কোমল আর ধৈর্য্যশীল ছেলেরা বোধকরি সবচাইতে ভালো ছেলে। সংসার জীবনে প্রাপ্য সম্মান পাওয়াটা ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে বেশি প্রয়োজনীয়।
মনে রাখা উচিত, এই জীবন খুবই ক্ষণস্থায়ী। নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছি, আবার তার কাছেই আমাদের সবাইকে ফিরে যেতে হবে। পৃথিবীতে এসেছিলাম তখনো একা, যাবোও একা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবসময়েই সাথে আছেন। মন অস্থির হলে, চঞ্চল হলে, একা লাগলে — আল্লাহকে স্মরণ করতে হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন:
“… জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়… ” [সুরা আর রা'দঃ ২৮]
এই জগতে কত আত্মার প্রশান্তি আছে! কী অপার ভালোবাসা ছড়িয়ে আছে আমাদেরই চারপাশে। আমাদের প্রিয়তম জনকে ভালবাসলে, সবসময়ে স্মরণ করে সমস্ত জীবনটা কতটা সুন্দর হতে পারে — সেটা যারা চেষ্টা করে তারাই পায়! আল্লাহই আমাদের আপনজন, তিনিই সবকিছুর মালিক।
যারা অবিবাহিত, তাদের প্রয়োজন নিজেদের সংযত করা। দরকার আল্লাহর সাহায্য চেয়ে দুয়া করা, যেই সুন্দর দুয়া পবিত্র কুরআনুল কারীমেই আমরা শিখেছি। আল্লাহর কাছে আমাদের এমন একজন জীবনসঙ্গী চাওয়া উচিত, যাকে দেখলে আমাদের চোখ জুড়িয়ে যায়, যার সাথে আমরা দুনিয়াতে একসাথে থাকবো, আখিরাতেও আল্লাহর দেয়া জান্নাতে একসাথে থাকতে পারবো, চিরসবুজ, চির যুবা হয়ে। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন আর তার ভালোবাসায় সিক্ত স্নিগ্ধ-শান্ত-মিষ্ট হৃদয় ধারণ করার তাওফিক দান করুন। সেই সুন্দর দু’আ হল– “রাব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াজিনা ওয়া যুররিয়্যাতিনা ক্কুররাতা আ’ইয়ুনিন ওয়া জা’আলনা লিল মুত্তাক্কিনা ইমামা।”
“হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ কর।” [সূরা ফুরক্কানঃ ৭৪]
2:57 PM Posted by Just for you 2