The Best Women's Protector
যতো ধর্ম আর মতবাদ রয়েছে,সকল মতবাদেরই বা ধর্মেরই একটা নির্দিষ্ট চিন্তাধারা আছে। ইসলাম একটা ঐশী জীবন-বিধান,তাই ইসলামের চিন্তাধারাগুলো সবই নির্ভুল এবং মানুষের কল্যাণকামী। নৈতিক ও চারিত্র্যিক সুষমা এবং সামাজিক সুস্থতা সুরক্ষার স্বার্থে ইসলাম মুসলমান নর ও নারীর ওপর অবশ্য পালনীয় কর্তব্য হিসেবে এই হিজাবের বিধান দিয়েছে। আধুনিক এই বিশ্বের বহু মনীষীও ব্যক্তিগত এবং সামাজিক সম্পর্ক বা যোগাযোগের ক্ষেত্রে সচ্চরিত্র ও আবরণ তথা হিজাবের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁরা সমাজে নারী-পুরুষের উপস্থিতির উপায় নিয়ে বিভিন্ন রকম দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন,কখনো কখনো তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রায় কাছাকাছি পরিলক্ষিত হয়েছে। আমরা এ রকম মনীষী ও মনোবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিভঙ্গি এ আসরে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
বিশ্ববাসীর সামনে আজ এ প্রশ্নটি উঠে এসেছে,তা হলো হিজাবের দর্শনটা আসলে কী এবং কেন মেয়েদের সমাজে উপস্থিত হবার জন্যে এই সীমাবদ্ধতাটি মেনে চলতে হয়? একজন মহিলা হিজাব নির্বাচন করে নিজেকে কি ঘরে বন্দী করে ফেলে? নাকি হিজাব নারীদের বিরুদ্ধে একধরনের অন্যায়-বৈষম্য? এইসব প্রশ্নের জবাবের জন্যে প্রয়োজন হিজাবের প্রতি আজকের নারীদের আকৃষ্ট হবার নেপথ্য কারণগুলোর দিকে নজর দেওয়া।
মনোবিজ্ঞানীদের নতুন নতুন গবেষণায় দেখো গেছে, পর্দার প্রতি নারীদের ঝোঁকের প্রকৃতিগত কারণ তো রয়েছেই, মানসিক কারণও রয়েছে।তাদের মানসিক এবং আত্মিক বিকাশের জন্যে এই ঝোঁক-প্রবণতা খুবই জরুরি। বিশিষ্ট লেখক ও মনোবিজ্ঞানী ডক্টর শাহরিয়ার রুহানী বলেছেন 'নারী-পুরুষের পোশাকের পার্থক্য থেকে অনেকেই নারীদের ওপর পুরুষের শ্রেষ্ঠত্ব খোঁজার চেষ্টা করেন,অনেকে আবার নারী-পুরুষের অধিকারে বৈষম্য খোজেঁন কেউবা আবার মনে করেন এটা নারীদের বন্দিত্ব এবং তুচ্ছতার শামিল। তারা এই সত্যটির ব্যাপারে উদাসীন যে,ছেলে এবং মেয়ের বেড়ে ওঠা এবং তাদের মানসিক পরিপক্কতার পথটি সম্পূর্ণ পৃথক। আর নারীদের জন্যে উপযুক্ত হিজাব তাদের মানসিক বিকাশের সময়ের সাথেই সংশ্লিষ্ট এবং মানুষের মনস্তত্ত্বের গভীরে তার শেঁকড় প্রোথিত।'
রুহুল কাওয়ানিন নামক গ্রন্থে লেখক মুন্তেসকিউ বলেছেন, প্রকৃতির নিয়মই আদেশ করে যে নারীর আত্মযত্নশীল হওয়া উচিত,কেননা পুরুষকে দুঃসাহস দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে।কিন্তু নারীকে নিজের যত্ন নিজেকে নেওয়ার শক্তি দেওয়া হয়েছে। সেজন্যে হিজাবের সাহায্যে নারী এবং পুরুষের মাঝে এক ধরনের ভারসাম্য সৃষ্টি করা যায়। এই নীতির ভিত্তিতে বিশ্বের সকল জাতি বিশ্বাস করে যে,নারীর উচিত লজ্জাশীলা ও হিজাবধারী হওয়া।
ইসলামে হিজাবের যে বিধান তা নারী-পুরুষের আত্মিক ও মানসিক দিক বিবেচনা করেই দেওয়া হয়েছে। নারীরা হলো সৌন্দর্য এবং কমনীয়তার প্রতীক। তাদের এই সৌন্দর্যের কারণে তাদের অনেকেই নিজেকে প্রদর্শনী করতে চায়। আত্মপ্রদর্শনের এই প্রবণতা তাদের অনেকের মাঝেই রয়েছে। ইসলাম নারীদের মেধা ও শক্তিকে নষ্ট হবার হাত থেকে রক্ষা করার স্বার্থে এবং নিজেকে কেবল আত্মসজ্জার মধ্যে কেন্দ্রীভূত না রাখার লক্ষ্যে মানব মর্যাদার এক উচ্চাসনের দিকে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ইসলামের দৃষ্টিতে যথাযথ পোশাক পরিধান নারীর এই মর্যাদাটি রক্ষা করার উপযুক্ত পন্থা। এ বিষয়টি মনোবিজ্ঞানীরাও সমর্থন করেন।
অধিকাংশ মনোবিজ্ঞানীর মতে মানুষের বিকাশ বহু পর্বে বিভক্ত। ব্যক্তির প্রতিটি বিকাশ পর্বেই তার কিছু প্রয়োজনীয়তার বিষয় উপলব্ধি করে। এই প্রয়োজনীয়তা যদি যথাযথভাবে না মেটে তাহলে ব্যক্তি দুর্ঘটনার সম্মুখিন হয় এবং তার ব্যক্তিত্বের বিকাশ স্তব্ধ হয়ে পড়ে। অর্থাৎ তার ব্যক্তিত্ব বিকাশের একটা পর্যায়ে গিয়ে থেমে যায় এবং সেখানেই পড়ে থাকে। যদিও তার বয়স বাড়ে,শারীরিক বিকাশও ঘটে,কিন্তু মানসিকতার ঐ পর্যায় সে আর অতিক্রম করতে পারে না,সেখানেই সে ঘুরপাক খেতে থাকে।
এটা স্পষ্ট যে, ছেলেদের এবং মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের এই পর্বে তাদের ব্যবহারে,আচার-আচরণে পরস্পরের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ছেলেরা এ সময় নিজেদেরকে অন্যদের ওপর প্রভাবশালী ভাবতে থাকে এবং সে অনুযায়ী তারা উগ্র এবং অশালীন আচরণও করে। কিন্তু মেয়েরা ছেলেদের ঠিক বিপরীতে আরো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। তাদের প্রতি অন্যদের আকর্ষণও বৃদ্ধি পাবার মতো রূপ ধারণ করে। সুন্দর সুন্দর জামাকাপড় পরা,সাজগোজ করা ইত্যাদি প্রবণতা মেয়েদের এ বয়সের বৈশিষ্ট্য। মনোবিজ্ঞানীদের মতে এই সময় যেসব মেয়ের বিকাশ রুদ্ধ হয়ে যায় তারা আসলে এক ধরনের ব্যাধিতে ভোগে যা তাদের উন্নতির পথ রোধ করে দাঁড়ায়। যার ফলে তারা তাদের প্রতি অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার লক্ষ্যে তাদের সকল মেধা কেবল নিজেদেরকে সাজানো গোজানোর কাজেই ব্যয় করে। বহু ক্ষেত্রে এই ঘটনা মেয়েদের হতাশা ও বিষন্নতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মেয়েদের বিকাশের এ পর্যায়ে যদি স্তব্ধতা আসে তাহলে তারা মায়ের ভূমিকায় কিংবা স্বামী-সন্তানের প্রতি ভালোবাসার ভূমিকায় অবতীর্ণ হবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। অবশ্য অনেক মেয়েই এবং নারীরা এই পর্যায়টি অতিক্রম করে পরবর্তী পর্যায়ে অর্থাৎ প্রাপ্ত বয়স্কে পৌঁছে মানবীয় পরিচয় লাভ করে। এ সময় তারা নিজেদের সাজানোর কাজে শক্তি সামর্থ ব্যয় করার পরিবর্তে তাদের শারীরিক এবং মানসিক শক্তি-সামর্থকে কেবলমাত্র ব্যক্তি-সমাজ এবং পরিবারের উন্নতির কাজে লাগায়।
বলা হয়ে থাকে যে,কোনো কোনো নারী যারা কোনো কারণে তাদের প্রেমে স্বামীদের আকৃষ্ট করতে পারে নি,তারা নিজেদেরকে সাজিয়ে গুজিয়ে সমাজের গণমানুষের সামনে উপস্থাপন করে যাতে স্বামীদের কাছ থেকে তাদের সৌন্দর্যের যে স্বীকৃতি পায় নি,তা সমাজের কাছ থেকে আদায় করতে পারে। এই চক্রটি তাদের ব্যক্তিত্বের অধপতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মনোবিজ্ঞাণী ডক্টর শাহরিয়ার রুহানী বলেছেন কোনো কোনো পুরুষের নারীর প্রতি নিজেদের অধিকার বা আধিপত্য বিস্তারের ঘটনা এবং কোনো কোনো নারীর আত্মসজ্জার প্রতি ব্যাপক ঝোঁক তাদের মানসিক বিকাশের পথ রুদ্ধ হবারই প্রমাণ।
তবে হ্যাঁ! স্বামীর জন্যে নারীর সাজগোজের ব্যাপারটি ইতিবাচক এবং পছন্দনীয়। কেননা এর মাধ্যমে পরিবারে তার প্রতি আকর্ষণের ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। ইরানের সবোর্চ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী এ সম্পর্কে বলেছেন,নারীর সাজসজ্জা যদি কেবল স্বামীর জন্যে হয় এবং সে নিজেকে যদি কেবল স্বামীর জন্যেই সাজায় তাহলে তাতে একদিকে যেমন সাজগোজের নিজস্ব স্বাভাবিক ইচ্ছাও মেটে অপরদিকে স্বামীকেও অন্য কারো প্রতি আকৃষ্ট হবার প্রবণতা থেকে রক্ষা করলো...
বর্তমানে বিভিন্ন দেশে নগ্নতা এবং আত্মপ্রদর্শনীর সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। পশ্চিমা অনেক দেশে নারীর প্রতি তাদের দৃষ্টি হলো ইনস্ট্রুমেন্টাল বা যান্ত্রিক। এরকম দৃষ্টির একটা মন্দ দিক হলো রাস্তাঘাটে মেয়ে এবং নারীদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া। মেয়েদের লেখাতেই দেখা যায়,তাদের প্রতি রূঢ় আচরণ করার মধ্য দিয়ে তাদেরকে অসম্মান করা হয়। তাদের প্রতি এই ব্যবহার বিভিন্নভাবে করা হয়। কখনো কথাবার্তার মাধ্যমে,কখনো মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে আবার কখনো শারীরিকভাবেও তাদের প্রতি রূঢ় আচরণ করা হয়। তাদের প্রতি যৌন নির্যাতনের মাত্রাও উদ্বেগজনকভাবে বেড়েই চলছে। মেয়েরা সেখানে একাকী রাস্তায় চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করে না।
এই পরিস্থিতিতে বহু চিন্তাবিদ মনে করেন নারীদের জণ্যে হিজাবের বিধানটি তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা তথা সমাজকে অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করার অণ্যতম একটি হাতিয়ার।