TOP NEWS

Tuesday, December 31, 2013

Sensor Smartphone-এর একটি উল্লেখযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ হার্ডওয়্যার

হার্ডওয়্যার এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হার্ডওয়্যারগুলো হল প্রসেসর, র‍্যাম, রোম, সেন্সর ইত্যাদি। আজ আমি যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব তা হল সেন্সর। সেন্সর স্মার্টফোন এর একটি উল্লেখযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ হার্ডওয়্যার যা স্মার্টফোন ব্যবহারকারির ব্যবহারের আনন্দ কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়। এটা স্মার্টফোন এর অপারেটিং এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেন্সর গুলো অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও সংবেদনশীল হয়ে থাকে।
অধিকাংশ এন্ড্রয়েড চালিত স্মার্টফোনে কিছু বিল্ট ইন সেন্সর থাকে যা গতি, অভিযোজন এবং বিভিন্ন প্রকার পরিবেশগত অবস্থা পরিমাপ করে। এই সেন্সর গুলো কিছু কাঁচা তথ্য যথাযথ ভাবে উচ্চ নির্ভুলতার সঙ্গে প্রদান করতে সক্ষম। এই সেন্সর গুলো খুবই দরকারি যদি আপনি একটি ডিভাইসের ত্রিমাত্রিক আন্দোলন, পজিশনিং অথবা ডিভাইসের পরিবেষ্টিত পরিবেশের পরিবর্তন নিরীক্ষন করতে চান। উদাহরন স্বরূপ, একটি ডিভাইসের মধ্যাকর্ষন সেন্সর (Gravity Sensor) ব্যবহারকারির অঙ্গভঙ্গি যেমন, ঢাল,ঝাকুনি,ঘুর্ণন,দোলন (Tilt,Shake,Rotation,Swing) প্রভৃতি হতে প্রাপ্ত ডেটা ট্র্যাক করে একটি গেইম খেলতে সাহায্য করে। অনুরূপভাবে, একটি তাপমাত্রা সংশ্লিষ্ট এপ্লিকেশন একটি ডিভাইসের তাপমাত্রা সেন্সর (temperature sensor) এবং আদ্রতা সেন্সর (humidity sensor) ব্যবহার করে তাপমাত্রা ও শিশিরাংক নিরূপণ হিসেব করে তাপমাত্রা এবং আদ্রতার তথ্য প্রদান করে। অথবা, হতে পারে একটি ট্র্যাভেল এপ্লিকেশন একটি ডিভাইসের ভূচৌম্বকিয় ক্ষেত্রের সেন্সর (geomagnetic field sensor) এবং গতি নির্ধারক যন্ত্র (accelerometer) ব্যবহার করে দিক নির্দেশনা প্রদান করে।
এন্ড্রয়েড প্লাটফর্ম প্রধানত তিন শ্রেণীর সেন্সর সমর্থন করে।







মোশন সেন্সর (Motion sensors)
এই জাতীয় সেন্সর গুলো একটি ডিভাইসের উপর আরোপিত তিনটি অক্ষের  (x, y, z) ত্বরণ বল এবং আবর্তনশীল বল পরিমাপ করে। এই শ্রণীর সেন্সর গুলোর মধ্যে রয়েছে accelerometers, gravity sensors, gyroscopes এবং rotational vector sensors.


এনভাইরোনমেন্টাল বা পরিবেশগত সেন্সর (Environmental sensors)
এই জাতীয় সেন্সর গুলো একটি ডিভাইসের উপর আরোপিত বিভিন্ন পরিবেশগত ঘটনাবলী যেমন, পরিবেষ্টিত বায়ুর তাপমাত্রা ও চাপ, আলোকসজ্জ্বা এবং বায়ুর আদ্রতা নির্ণয় করে। ব্যারোমিটার, ফটোমিটার, থার্মোমিটার (barometers, photometers, and thermometers) এই শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত।


পজিশন বা অবস্থান সেন্সর (Position sensors)
এই জাতীয় সেন্সর একটি ডিভাইসের প্রকৃত অবস্থান নির্ণয় করে। স্থিতিবিন্যাস সেন্সর এবং ম্যাগনেটোমিটার (orientation sensors and magnetometers) এই শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত।
ডিভাইসের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকার সেন্সর ব্যবহার করা হয়। ডিভাইসের গঠন, রেজুলেশন প্রভৃতি ভেদে বিভিন্ন মাত্রার সেন্সর ব্যবহৃত হয়। কিছু সেন্সর হার্ডওয়্যার ভিত্তিক কিছু সফটওয়্যার ভিত্তিক। খুব কম ডিভাইসে সকল সেন্সর ব্যবহার করা হয়। কিছু কিছু সেন্সরের কাজ এক হলেও ডিভাইসের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে এইসব সেন্সর ব্যবহার করা হয়। আবার প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে একটি ডিভাইসে একই প্রকৃতির সকল সেন্সর ব্যবহৃত হয়। নিম্নে বিভিন্ন প্রকার সেন্সরের নাম, প্রকৃতি ও তাদের কাজ সংক্ষেপে আলোচনা করা হল। -


Accelerometer Sensor :
Type - Hardware
এই সেন্সর ডিভাইসের উপর আরোপিত মধ্যাকর্ষন বল সহ তিনটি শারীরিক অক্ষ (x, y, z) এর ত্বরণ বল m/s2 এককে সঠিক ভাবে পরিমাপ করতে পারে। এটি অঙ্গভঙ্গি সনাক্তকরন (Motion detection) যেমন, ঝাকুনি, ঢাল ইত্যাদি (shake, tilt, etc.) কাজে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন প্রকার 2D/3D মোশন গেইমস খেলার সময় এটি প্রয়োজন হয়।ডিভাইসের পর্দার আবর্তন বা ঘুর্ণনের (Rotation) কাজ করে। আপনি ডিভাইসটি কিভাবে ধরেছেন সেটি সনাক্ত করে ভিজুয়াল আউটপুট প্রদান করে।


Ambient Temperature Sensor :
Type - Hardware
এটি একটি পরিবেষ্টিত কক্ষের তাপমাত্রা ডিগ্রি সেলসিয়াসে (°C) পরিমাপ করতে পারে। বায়ুর তাপমাত্রা প্রদর্শনে (Monitoring air temperatures) ব্যবহূত হয়।


Gravity Sensor :
Type - Software or Hardware
এটি একটি ডিভাইসের তিনটি অক্ষের (x, y, z) উপর আরোপিত মধ্যাকর্ষন বল m/s2 এককে পরিমাপ করতে পারে। এটি অঙ্গভঙ্গি সনাক্তকরন (Motion detection) যেমন, ঝাকুনি, ঢাল ইত্যাদি (shake, tilt, etc.) কাজে ব্যবহৃত হয়। মোশন গেইমস খেলার সময় এটি প্রয়োজন হয়। ডিভাইসের পর্দার আবর্তন বা ঘুর্ণনের (Rotation) কাজ করে। এর কাজও Accelerometer Sensor এর মতই।


Gyroscope Sensor :
Type - Hardware
এটি একটি ডিভাইসের তিনটি শারীরিক অক্ষের  (x, y, z) প্রত্যেকটির ঘূর্ণনের হার rad/s এককে পরিমাপ করে। ঘুর্ণন সনাক্তকরন (Rotation detection) যেমন, পাক খাওয়া/ঘুরা, ঘুরানো/উল্টানো (spin, turn, etc.) ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি ছয় দিক থেকে একই সময়ে পরিমাপ করতে পারে। আপনি ডিভাইসটি যেকোন দিকে হালকা ঘুরালেই এর ফলাফল তাৎক্ষণিক ভাবে দেখতে পাবেন। বর্তমানে এই সেন্সরটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ত্রিমাতৃক গেইম উন্নয়নের কাজে ব্যবহৃত হয়।


Light Sensor :
Type - Hardware
পরিবেষ্টিত আলোর মাত্রা (illumination/দীপন)lx এককে পরিমাপ করে। পর্দার আলো নিয়ন্ত্রনে (Controlling screen brightness) ব্যবহৃত হয়। এটি ডিভাইসের পরিবেষ্টিত পরিবেশের আলোর তীব্রতা সনাক্ত করে এবং এর মাধ্যমে ডিভাইস আলোতে নিলে পর্দার উজ্জ্বলতা বাড়ে আবার অন্ধকারে নিলে উজ্জ্বলতা কমে। ব্যাটারীর শক্তি বাঁচাতে (Battery Power Saving) সাহায্য করে।


Linear Acceleration Sensor :
Type - Software or Hardware
একটি ডিভাইসের উপর আপতিত মধ্যাকর্ষন বল ব্যতীত তিনটি অক্ষের  (x, y, z) প্রতিটির ত্বরণ বল m/s2 এককে পরিমাপ করে। একটি একক অক্ষ বরাবর ত্বরণ পর্যবেক্ষন (Monitoring acceleration along a single axis) করে।


Magnetic Field Sensor :
Type - Hardware
সকল তিনটি শারীরিক অক্ষ  (x, y, z) এর জন্য পরিবেষ্টিত ভূচৌম্বকীয় ক্ষেত্র μT এককে পরিমাপ করে। এটি কম্পাস (compass) বা দিক নির্ণয়ের কাজে ও ধাতু সনাক্তকরণের কাজে ব্যবহৃত হয়।


Orientation Sensor :
Type - Software
একটি ডিভাইসের কাছাকাছি সকল তিনটি শারীরিক অক্ষ (x, y, z)  এর আবর্তনের ডিগ্রি পরিমাণ করে। API স্তর ৩ হিসেবে আপনি get rotation matrix এর সাথে মধ্যাকর্ষন সেন্সর (gravity sensor) এবং ভূচৌম্বকীয় ক্ষেত্রের সেন্সর (geomagnetic field sensor) সংযোগ করে একটি ডিভাইসের জন্য বাঁক ম্যাট্রিক্স (rotation matrix) লাভ করতে পারেন। এটি ডিভাইসের অবস্থান নির্ণয়ের (Determining device position) কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি ডিভাইসের অবস্থান নির্দেশন সনাক্ত করে এবং স্বয়ংক্রিয় ভাবে পর্দাকে আবর্তিত করে যখন ডিভাইসটি উলম্ব অথবা আনুভূমিক ভাবে ধরা হয়। এটাকে আবার স্পিরিট লেভেল পরিমাপ করার যন্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।


Pressure Sensor :
Type - Hardware
hPa অথবা, mbar এর মধ্যে পরিবেষ্টিত বায়ুর চাপ পরিমাপ করে। বায়ুর চাপ পরিবর্তন নিরীক্ষনের (Monitoring air pressure changes) কাজে ব্যবহৃত হয়।


Proximity Sensor :
Type - Hardware
একটি ডিভাইসের পর্দার দৃশ্য (screen view) থেকে একটি বস্তুর নৈকট্য আপেক্ষিক সে.মি. পরিমাপ করে। এই সেন্সর মূলত একটি হ্যান্ডসেট একজন ব্যক্তির কান পর্যন্ত স্থির হয়েছে কিনা জানতে ব্যবহৃত হয়। কল করার সময় ফোনের অবস্থান নির্ণয়ের (Phone position during a call) কাজ করে। এর মাধ্যমে আপনি যখন ফোনে কোন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার জন্য ফোনটি কানের কাছে নিবেন তখন ডিসপ্লের আলো স্বয়ংক্রিয় ভাবে নিভে যাবে এবং ফোন কানের কাছ থেকে সরিয়ে আনলে আবার জ্বলে উঠবে।



Relative Humidity Sensor :
Type - Hardware
পরিবেষ্টিত আপেক্ষিক আদ্রতা শতাংশে (%) পরিমাপ করে। শিশির বিন্দু নিরীক্ষন (Monitoring dewpoint), পরম এবং আপেক্ষিক আদ্রতা (absolute, and relative humidity) পরিমাণ করে।


Rotation Vector Sensor :
Type - Software or Hardware
ডিভাইসের ঘুর্নন ভেক্টর (rotation vector) তিনটি উপাদান প্রদানের মাধ্যমে একটি ডিভাইসের স্থিতিবিন্যাস ব্যবস্থা পরিমাপ করে। অঙ্গভঙ্গি সনাক্তকরন (Motion detection) এবং ঘুর্ণন সনাক্তকরন (rotation detection) কাজে ব্যবহৃত হয়।


Temperature Sensor :
Type - Hardware
একটি ডিভাইসের তাপমাত্রা ডিগ্রি সেলসিয়াসে  (°C) পরিমাপ করে। এই সেন্সর বিভিন্ন প্রকার ডিভাইসের যন্ত্রপাতিদ্বয় এবং Ambient Temperature Sensor API Level 14 এর সঙ্গে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তাপমাত্রা নিরীক্ষনের (Monitoring temperatures) কাজে ব্যবহৃত হয়।



Source : Techtunes.com
4:32 PM Posted by Just for you 0

ROOT ব্যাপারটা আসলে কি? কেন রুট করবেন? রুট করলে সুবিধা ও অসুবিধা কি?

রুট ব্যাপারটা আসলে কি? কেন রুট করবেন? রুট করলে সুবিধা ও অসুবিধা কি? আসুন আজ আমরা তা জেনে নেই ...



অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা প্রায়ই শুনে থাকবেন এই শব্দটি । বিভিন্ন সাইটে এই বিষয়টি নিয়ে অনেক ধরনের ধারনা রয়েছে । তবে আজকে আমার প্রাথমিক ধারনা আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি । অনেক অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহারকারীরাই রুট কী এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানেন না । অনেকে মনে করেন রুট করার মাধ্যমে ডিভাইসের পরিপূর্ণ পারফরম্যান্স পাওয়া সম্ভব, আর তাই অনেকেই রুট করতে আগ্রহী হয়ে পড়েন । কিন্তু রুট করার পর দেখা যায় তাদের ডিভাইসের পারফরম্যান্স আগের মতোই রয়ে যায় বা আগের চেয়ে খারাপ হয়ে পরে । তারা হতাশ হয়ে পড়েন এ অবস্থা দেখে । কিন্তু তাদের মাঝে অজানাই থেকে যায় যে রুট করার আসল সার্থকতা কোথায় । আজকের আমি আমার এই লেখার মাধ্যমে আপনাদের সামনে রুট করার কারন , কেন করবেন , রুট করার উপকারিতা এবং অপকারিতা তুলে ধরার চেষ্টা করব । এবং আমার ধারনা আপনাদের মনে রুট বিষয়টি নিয়ে আর কোন সন্দেহ মুলক ধারনা থাকবে না ।

রুট ব্যাপারটা আসলে কী?
রুট শব্দটি এসেছে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম থেকে । লিনাক্স ব্যবহারকারীদের মধ্যে যাদের রুট প্রিভিলেজ বা সুপারইউজার পারমিশন আছে তাদেরকে রুট ইউজার বলা হয় । সবচেয়ে সহজ শব্দে বলা যায় , রুট হচ্ছে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বা প্রশাসক যদিও এর বাংলা অর্থ গাছের শিকড় । রুট হচ্ছে একটি পারমিশন বা অনুমতি । এই অনুমতি থাকলে ব্যবহারকারী তার নিজের ডিভাইসে যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন । উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহারকারী অ্যাডমিনিস্ট্রেটর প্রিভিলেজ ছাড়া সিস্টেম ফাইলগুলো নিয়ে কাজ করতে পারেননা , লিনাক্সেও তেমনি রুট পারমিশন প্রাপ্ত ইউজার ছাড়া সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাজগুলো করা সম্ভব হয়ে উঠে না । যার লিনাক্স-চালিত কম্পিউটার বা সার্ভারে সব কিছু করার অনুমতি রয়েছে, তাকেই আমরা রুট ইউজার বলে থাকি । অনেক সময় একে আমরা সুপার ইউজার বলেও সম্বোধন করা হয়ে থাকে ।


অ্যান্ড্রয়েড এবং লিনাক্স এর মধ্যে সামঞ্জস্য কোথায় ?
আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে কেন আমি আন্ড্রয়েড নিয়ে কথা বলতে বলতে লিনাক্স এর কথা তুলে নিয়ে আসলাম । আসলে এন্ড্রয়েড তৈরি হয়েছে লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম মুল ভিত্তি থেকে ।


লিনাক্স এ ইউজার পারমিশন আমরা খুব সহজে পেয়ে থাকি কিন্তু আমরা এন্ড্রয়েডে পারি না কেন ?
সাধারনত লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম আমরা ইন্সটল করতে পারি তার তাই আমরা ইউজার পারমিশন কোড আমরা জেনে থাকি । কিন্তু আন্দ্রয়েড মোবাইল আমরা বাজার থেকে ক্রয় করে থাকি এবং তার অপারেটিং সিস্টেম সিস্টেম ইন্সটল ডিভাইস প্রস্তুতকারক করে থাকে । ডিভাইস প্রস্তুতকারক যখন মোবাইলের মধ্যে অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করে তখন তাদের হাতে এই ইউজার পারমিশন কোড থেকে যায় । আর তাই আমাদের হাতে সেই ইউজার পারমিশন থাকে না । এখন আপনার প্রশ্ন আসতে পারে কেন আমাদেরকে এই ইউজার পারমিশন কোড দেওয়া হয় না । আসলে ডিভাইস প্রস্তুতকারক মোবাইলের সুরক্ষা এবং নিরপ্ততার জন্য আমাদেরকে এই কোড দিয়ে থাকে না ।
কিন্তু তাই বলে এই নয় যে আমরা ইউজার পারমিশন কোড পাব না । আমরা ডিভাইস প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে আমরা এই কোড সংগ্রহ করে এন্ডয়েড মোবাইলের ইউজার পারমিশন পেতে পারি । উদাহরণ হিসেবে আমি বলতে চাই সনি , HTC এর মত ব্রান্ড এর মোবাইল যখন ব্যবহার করি তখন আমরা তার ইউজার পারমিশন পাওয়ার জন্য তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে বুটলডার আনলক কোড সংগ্রহ করে থাকি । এই বুটলডার আনলক রুট পারমিশন পাওয়ার একটি অংশ ।


আন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম এক হওয়া সত্ত্বেও ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল ভিন্ন রকম এর কারন কি ?
আপনাদের মনে হয়ত প্রশ্ন জাগতে পারে যে যতগুলো মোবাইল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের সবার ভিন্ন ভিন্ন লুক এর অপারেটিং হয়ে থাকে । অপারেটিং সিস্টেমের মূল ভিত্তিটা এক হলেও একেক কোম্পানি একেকভাবে একে সাজাতে বা কাস্টোমাইজ করতে পারেন । এই জন্যই সনির একটি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের ইউজার ইন্টারফেসের সঙ্গে এইচটিসির একটি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের ইন্টারফেসের মধ্যে খুব কমই মিল পাওয়া যায়।


আন্ড্রয়েড মোবাইলে কেন রুট করা থাকে না ?
মোবাইল প্রস্তুত কারক প্রতিষ্ঠান যখন তাদের মোবাইল গুলো বাজারজাত করে তখন মোবাইল গুলোতে রুট পারমিশন দেওয়া হয় না । কারন হল রুট পারমিট করা থাকলে আপনি তখন আপনার মোবাইলে যে কোন কিছু করতে পারবেন । আপনি মোবাইলের রুট ফোল্ডাররে যেতে পারবেন ( মোবাইলের অপারেটিং সিস্টেম ফোল্ডার ) ।  আপনি যে কোন ফাইল ডিলিট , এডিট করতে পারবেন । আপনার মোবাইলে যখন রুট পারমিট করা থাকবে তখন আপনি কোন ফাইল ডিলিট বা সরিয়ে নিলে আপনাকে কোন ওয়ার্নিং দিবে না । আপনি হয়ত মনে করছেন এই ফাইল গুলো আপনার কোন প্রয়োজনে আসবে না আর তাই আপনি ফাইল গুলো ডিলিট করে দিয়েছেন । হয়তো আপনি কাস্টমাইজ করতে গিয়ে বা রম ইন্সটল করতে গিয়ে ভুল করে ফোন ব্রিক করে ফেলেছেন । এতে কিছুক্ষণ পর দেখতে পারলেন যে আপনার মোবাইল আর চালু হচ্ছে না । আপনি তখন আপনার মোবাইল প্রস্তুত কারকে দোষারোপ করতে থাকবেন । যদি রুট না থাকতো তাহলে আপনি ফাইল গুলো ডিলিট এডিট তো দুরের কথা আপনি আই ফোল্ডারটি খুজে পেতেন না । ফোন প্রস্তুতকারক আপনাকে অনেক সুযোগ সুবিধা দিলেও এই সব পারমিশন তারা তাদের সুবিধার্থে দেয় না । এটা করা হয় আপনার ভালোর জন্যই ।


কেন আপনি আপনার আন্ড্রয়েড ডিভাইসটি রুট করবেন?
আপনি তখনি রুট করার চিন্তা করবেন যখন আপনার মোবাইলে সব ধরনের সুযোগ ব্যবহার করতে পারছেন না , আপনার মোবাইল আপনাকে কোন সীমার মধ্যে বেধে রেখেছে । যারা একদমই নতুন এই বিষয় ভালভাবে কিছু জানেন না তারা তাদের মোবাইল রুট করার চিন্তা  কিছুদিন পর করার সিদ্ধান্ত নিবেন । তার কারন আপনি আগে ভাল করে বুঝে নিন কেন আপনি রুট করবেন , এবং রুট করার পর আসলেই আপনার উপকার হবে কি না । অনেকে না বুঝে রুট করে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে । তাই আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলছি সাবধানতার মাধ্যমে আপনি আপনার মোবাইল রুট করুন ।

আমরা আসলে অনেক কারনে আন্ড্রয়েড মোবাইল রুট করে থাকি । বর্তমানে কিছু কিছু অ্যাপ্লিকেশান এখন বের হয়েছে যা ব্যবহার করতে রুট পারমিটের প্রয়োজন হয়ে পড়ে । কেউ কেউ ওভারক্লকিং করার মাধ্যমে মোবাইলের স্পীড বাড়ানোর জন্য রুট করে থাকেন । কেউ ডেভেলপারদের তৈরি ভিন্ন ভিন্ন সাধের কাস্টম রম ব্যবহার করার জন্য , কেউ গেম খেলার জন্য । আরও অনেক কারন আছে যেই কারনে রুট করা হয়ে থাকে । এই কারন গুলো থেকে থাকলে রুট করা আমি মনে করি ভাল । কিন্তু অকারন অবশত রুট করে বিপদে পড়ার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করছি না ।


রুট করার কিছু সুবিধা  ---
বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে মোবাইলের অব্যবহৃত ফাইল, টেমপোরারি ফাইল ইত্যাদি নিয়মিত মুছে ফোনের গতি ঠিক রাখা । এছাড়াও মোবাইলের পারফরমেন্স বাড়ানো যায় বলে আর অনেক ভাবে । ওভারক্লকিং করা সিপিইউ স্পিড স্বাভাবিক অবস্থায় যতটা থাকে তারচেয়ে বেশি দ্রুত কাজ করে । এর মাধ্যমে কোনো বিশেষ কাজে প্রসেসরের গতি বাড়ানোর প্রয়োজন পড়লে তা করা যায় । যখন মোবাইল এমনিতেই পড়ে থাকে, তখন সিপিইউ যেন অযথা কাজ না করে যে জন্য এর কাজের ক্ষমতা কমিয়ে আনা যায় আন্ডারক্লকিং করে । এতে করে ব্যাটারি ব্যাকআপ বাড়ানো সম্ভব । এছাড়াও রুট করে কাস্টম রম ইন্সটল করার সুবিধা রয়েছে । অনেক ডেভেলপার বিভিন্ন জনপ্রিয় মোবাইলের জন্য কাস্টম রম তৈরি করে থাকেন । এসব রম ইন্সটল করে আপনি আপনার মোবাইলকে সম্পূর্ণ নতুন একটি সেটের রূপ দিতে পারবেন । আপনি সফটওয়্যার ব্যবহার করে আপনার রাম এর স্পীড বাড়াতে পারবেন , প্রসেসরের স্পীড বাড়াতে পারবেন তবে কোন হার্ডওয়্যার বা অন্যান্য কোন কিছু বাড়াতে পারবেন না । আপনি ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরাকে ১৬ মেগাপিক্সেল করতে পারবেন না । যেই মোবাইলে NFC নেই তাতে তা সংযোগ করতে পারবেন না । রুট শুধু মাত্র আপনার অভ্যন্তরীণ পারফরম্যান্সে কাজে আসবে , বাহ্যিক কোন পরিবর্তন নয় ।

রুট করার কিছু অসুবিধা রয়েছে  ---
সর্ব প্রথম মোবাইল রুট করার মাধ্যমে আপনার ওয়ারেন্টি বাতিল হয়ে যাবে । তাই রুট করার আগে সাবধান । অবশ্য অনেক মোবাইল আবার আনরুট করা যায় । আর মোবাইল আনরুট করা হলে তা সার্ভিস সেন্টারে থাকা টেকনিশিয়ানরা অনেক সময়ই ধরতে পারেন না যে সেটটি রুট করা হয়েছিল কি না । তবে কাস্টম রম থাকলে ধরা খাওয়া বাধ্যতামূলক । অনেকে মোবাইল ব্রিক নিয়ে অনেক কথাই বলেছে। এখন কথা হল ব্রিক মানে কি ? ব্রিক অর্থ ইট । আর ফোন ব্রিক মানে আপনার ডিভাইসকে ইটে রূপান্তরিত করা বা নষ্ট হয়ে যাওয়া । অর্থাৎ আপনার মোবাইল কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে । রুট করা ও এর পরবর্তী বিভিন্ন কাজের সময় যদি কোন ভুল ত্রুটি হয় তাহলে ফোনে স্থায়ী বা অস্থায়ী সমস্যা হতে পারে । প্রস্তুতকারক কোম্পানি ফোনটি আনরুট অবস্থায় দেন যাতে আপনার মোবাইলের কোন ক্ষতি না হয় । রুট করার মাধ্যমে আপনি সেই নিশ্চয়তা ভেঙ্গে ফেলছেন । এখন এর সম্পূর্ণ দায়ভার আপনাকে গ্রহন করতে হবে । রুট করলে দেখা যায় অনেক সময় অনেক ক্ষতিকারক প্রোগ্রাম রুট করা ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে । কিন্তু লক থাকা অবস্থায় ব্যবহারকারী নিজেই রুট অ্যাক্সেস পান না , তাই অন্য প্রোগ্রামগুলোর রুট অ্যাক্সেস পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই বললেই চলে ।



পরিশেষে যদি কিছু বলতে চাই তাহলে বলব যে কিছু করার আগে ভাল করে জেনে নেওয়া ভাল । রুট আপনি যদি ঠিক মত বুঝে নিতে পারেন তাহলে আপনার কাছে তা খুব এ সহজ আর যদি না পারেন তাহলে তা খুবই কঠিন ...
আসা করছি আমার পোস্ট আপনাদের ভাল লাগবে । আপনাদের জন্য আর ভাল পোস্ট নিয়ে আবার হাজির হব আমি ইনশাআল্লাহ্‌...

সাইট পোস্ট ঃ http://androidsomogro.com/what-is-root/
4:23 PM Posted by Just for you 0

Tuesday, December 24, 2013

যাদের জন্য মালাইকা (ফেরেশতাগণ) আল্লাহর নিকট দো’আ করেন


যাদের জন্য ফেরেশতাগণ কল্যাণের, সাহায্য ও নিরাপত্তা চেয়ে আল্লাহর নিকট দো’আ করেন তারা অনেক। এদের অন্যতম হলোঃ
* মুহাম্মাদ (সা)
* নবী (সা) এর উপর দুরূদ পাঠকারী
* অযু অবস্থায় ঘুমন্ত ব্যক্তি
* সালাতের অপেক্ষাকারী মুসল্লি
* প্রথম কাতারের মুসল্লি
* সালাতের লাইনের ডান পাশের মুসল্লিদের জন্য
* কাতারে পরস্পর মিলিতভাবে দাঁড়ানো মুসল্লিদের জন্য
* ইমামের এর সূরা ফাতিহা শেষ করার পর আমীন পাঠাকারীবৃন্দের জন্য
* সালাত সমাপ্তির পর অজুসহ স্ব-স্থানে অবস্থানকারীর জন্য
* জামাতের সাথে ফজর ও আসর সালাত আদায়কারীর জন্য
* কুর’আন খতমকারীর জন্য
* মুসলম ভাইয়ের কল্যাণের জন্য দু’আকারীর জন্য
* কল্যাণের পথে ব্যায়কারীর জন্য
* সেহেরী ভক্ষণকারীদের জন্য
* রোগী প্রদর্শনকারীর জন্য
* সৎ কাজের শিক্ষা প্রদানকারীর জন্য
* মু’মিন ও মু’মিনদের আত্মীয় ও তাওবাকারীদের জন্য
আসুন! আমরা বিস্তারিত জেনে নেই।
মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জন্যে
আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এ সম্পর্কে আল্লাহ্* তা‘য়লা বলেনঃ
“নিশ্চই আল্লাহ্* নাবীর প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং তার ফেরেশতারাও নাবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন। হে মু‘মিনগণ তোমরাও নাবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও”।
(সূরা আহযাবঃ ৫৬)
নাবী (সাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠকারীর জন্য
এর প্রমান হলো ইমাম আহমদ (রহ.)-এর বর্ণিত নিম্ন হাদীস।
আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি রাসুল (সাঃ)-এর উপর একবার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ্* তা‘আলা তার উপর সত্তর বার দয়া করেন ও তার ফেরেশতারা তার জন্য সত্তর বার ক্ষমা প্রার্থনা করবে। অতএব, বান্দারা অল্প দরূদ পাঠ করুক বা অধীক দরূদ পাঠ করুক। (আল-মুসনাদ, হাদীস – ৬৬০৫,৬৩১৭)
অযু অবস্থায় ঘুমন্ত ব্যক্তির জন্য
এর প্রমানে হাদীসে এসেছে,
ইবনে উমার থকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের এই শরীর সমূহকে পবিত্র রাখ। আল্লাহ্* তোমাদেরকে পবিত্র করবেন। যে ব্যক্তি পবিত্রাবস্থায় (অযু অবস্থায়) রাত অতিবাহিত করবে, অবশ্যই একজন ফেরেশতা তার সঙ্গে রাত অতিবাহিত করবে। রাতে যখনই সে পার্শ্ব পরিবর্তন করে তখনই সে ফেরেশতা বলে, হে আল্লাহ্* আপনার এই বান্দাকে ক্ষমা করুন। কেননা সে পবিত্রাবস্থায় (অযু অবস্থায়) ঘুমিয়েছে। (আত-তারগীব ওয়াত তাহরীব)
হাফেজ ইবনে হাযার আসকালানী বলেন, হাদীসের মান জাইরিদ বা ছহীহ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত।
অন্য বর্ণনায় এসেছে অযু অবস্থায় ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত হলেও ফেরেশতা তার জন্য দু‘আ করেন। রাসুল (সাঃ) বলেন,
যে ব্যক্তি পবিত্রাবস্থায় (অযু অবস্থায়) ঘুমায় তার সঙ্গে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকে, সে ঘুম থেকে জাগ্রত হলে ফেরেশতা বলেন, হে আল্লাহ্*! তোমার অমুক বান্দাকে ক্ষমা করে দাও, কেননা, সে পবিত্রাবস্থায় ঘুমিয়েছে। (ইবনে হিব্বান)
শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী বলেন, হাদীসটি সহীহ।
ছালাতের অপেক্ষাকারী মুছল্লীবৃন্দের জন্য
হাদীসে এসেছেঃ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের মাঝে কোন ব্যক্তি যখন অযু অবস্থায় ছালাতের অপেক্ষায় বসে থাকে, তার জন্য ফেরেশতা মন্ডলী দু‘আ করে থাকেন, হে আল্লাহ্*! তুমি তাকে ক্ষমা কর, হে আল্লাহ! তুমি তার উপর কল্যাণ দান কর। (মুসলিম)
প্রথম কাতারের মুছল্লীবৃন্দের জন্য
নিম্নে একটি হাদীস প্রদত্ত হলঃ
রাসুল (সাঃ) বলতেনঃ প্রথম কাতারের মুছল্লীদের উপর নিশ্চই আল্লাহ্* ক্ষমা করবেন ও ফেরেশতা মন্ডলী তাদেরজন্য দু‘আ করবেন। (ইবনে হিব্বান)
আল্লামা শায়খ শুয়াইব আরনাউত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
সালাতের লাইনের ডান পার্শ্বের মুসল্লীবৃন্দের জন্য
রাসুল (সাঃ) বলেন,
নিশ্চই আল্লাহ্* দয়া করেন ও ফেরেশতামন্ডলী দু‘আ করেন ডান পার্শ্বের দাঁড়ানো ব্যক্তিদের উপর। (ইবনে হিব্বান)
হাদীসটি হাসান।
কাতারে পরস্পর মিলিতভাবে দাঁড়ানো মুছলীবৃন্দের জন্য
রাসুল (সাঃ) বলেন,
নিশ্চই আল্লাহ্* দয়া করেন এবং ফেরেশতামন্ডলী দু‘আ করে, যারা পরস্পর একে অপরের সাথে লাইন মিলিয়ে সালাত আদায় করে। (ইবনে হিব্বান)
শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
এই কারণে সাহাবাগণ জামাতে সালাত আদায়কালীন পরস্পর মিলিত হয়ে দাঁড়ানোতে গুরুত্ব দিতেন।
বিশিষ্ট সাহাবী আনাস (রাঃ) বলেন, আমাদের সবাই সালাতে একে অপরের কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলাতাম। (বুখারী)
রাসুল (সাঃ) সালাত আরম্ভের পূর্বে মুছল্লীদের দিকে তাকিয়ে বলতেনঃ
তোমরা তোমাদের কাতার সোজা কর তিনবার বলতেন। আল্লাহর শপথ! তোমাদের কাতারকে সোজা কর, অন্যথায় আল্লাহ্* তোমাদের অন্তরের মাঝে বক্রতা সৃষ্টি করবেন। বর্ণনাকারী কাতার সোজা করার নিয়মাবলী এভাবে বর্ণনা করেন। আমি দেখেছি ব্যক্তি তার নিজের কাঁধ অপরের কাঁধের সাথে, হাটু অপরের হাটুর সাথে এবং পা অপরের পায়ের সাথে মিলিয়ে দাঁড়াতেন। (বুখারী)
ইমাম এর সূরা ফাতিহা শেষ করার পর আমীন পাঠকারীবৃন্দের জন্য
এ মর্মে রাসুল (সাঃ) বলেন,
যখন ইমাম বলবে, ( غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ),তখন তোমরা আমীন বল। কেননা, যার আমীন বলা ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে মিলে যাবে, তাঁর অতীত জীবনের গোনাহগুলীকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। (আল জামি, মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল)
উপরোক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় ইমাম সূরা ফাতিহা সমাপ্ত করার পর ফেরেশতা সমবেতারা মুসল্লীদের জন্য আমীন বলে আল্লাহর সমীপে সুপারিশ করে থাকেন, যার অর্থ হলঃ হে আল্লাহ্* আপনি ইমাম ও মুছল্লীদের সূরা ফাতিহায় বর্ণিত দু’আ সমূহ কবুল করুন। কারণ, আমীন অর্থ হলো আপনি কবুল করুন। (ফাতহুল বারী)
সালাত সমাপ্তীর পর অযুসহ স্ব স্থানে অবস্থানকারী বৃন্দের জন্যে
এ প্রসঙ্গে রাসুল (সাঃ) বলেন,
তোমাদের মধ্যে যারা সালাতের পর স্বস্থানে বসে থাকে, তাদের জন্য ফেরেশতা দু’আ করতে থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর অযু ভঙ্গ না হবে, (দু’আটি হল এইঃ) হে আল্লাহ্*! আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং হে আল্লাহ্*! আপনি তাদের উপর দয়া করুন। (মুসনাদে আহমাদ)
শায়খ আহমদ শাকির হাদীসটি সহীহ বলেছেন।
জামাতের সাথে ফজর ও আসর সালাত আদায়কারীর জন্য
হাদীসে এসেছে,
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, রাতের ও দিনের ফেরেশতারা ফজর ও আসর সালাতে একত্রিত হয়। ফজর সালাতে রাতের ফেরাশতারা উপরে উঠে যায়, এবং দিনের ফেরেশতারা মানুষের নিকট থেকে যায় এবং আসর সালাতে একত্রিত হয়ে দিনের ফেরেশতারা চলে যায় এবং রাতের ফেরেশতারা থেকে যায়। তাদেরকে আল্লাহ তায়লা জিজ্ঞেস করেন, তোমরা আমার বান্দাদেরকে কোন অবস্থায় ছেড়ে এসেছ? ফেরেশতারা উত্তরে বলেন, আমরা যখন তাদের নিকট উপস্থিত হয়েছিলাম, তখন তাদেরকে সালাতরত অবস্থায় পেয়েছিলাম এবং যখন আমরা তাদের ছেড়ে এসেছি তখনও তাদেরকে সালাতের অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। অতঃএব আপনি তাদেরকে কিয়ামত দিবসে ক্ষমা করুন। (মুসনাদে আহমাদ)
হাদীসটি সহীহ।
শায়খ আহমদ বিন আব্দুর রহমান আল-বান্না ফেরশতাদের দু’আর ব্যাখ্যায় বলেনঃ এমন ব্যক্তির জন্য ফেরেশতারা কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্* তা’আলার সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা করবে।
আল-কুরআন খতমকারীর জন্য
ইমাম দামিরী (রহ.) সা’আদ (রা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেনঃ
কুরআন খতম যদি রাত্রির প্রথম ভাগে হয় তবে সকাল পর্যন্ত ফেরেশতারা খতমকারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে আর রাত্রির শেষ ভাগে হলে সকাল পর্যন্ত ফেরেশতারা তাঁর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে। অনেক সময় আমাদের মাঝে অল্প কিছু বাকি থাকত তা আমরা সকাল বা সন্ধ্যা পর্যন্ত বিলম্ব করতাম। (সুনানি দামিরী)
হাদীসটি যঈফ। কিন্তু একাধিক সানাদে বর্ণিত হওয়ায় মুহাদ্দিসগন হাসান বলেছেন।
বিশিষ্ট তাবেয়ী আবদাহ বলেন,
যখন কোন ব্যক্তি দিনের বেলায় কুরআন খতম করে, ফেরেশতারা সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁর জন্য দু’আ করতে থাকে এবং যদি রাত্রে খতম করে তবে ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে। হুসাইন সিলীম আসাদ বলেন, এটি ছহীহ। (সুনানি দামিরী)
মুসলিম ভাইয়ের কল্যাণের জন্য দু‘আকারীদের জন্য
এ প্রসঙ্গে ইমাম মুসলিম (রহ.) হাদীস সংকলন করেছেন। নিচে তা উল্লেখ করা হলঃ
সাফওয়ান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি আব্দুল্লাহ বিন সাফওয়ানের ছেলে ও দারদার স্বামী ছিলেনঃ তিনি বলেন, আমি শামে গেলাম। তারপর আমি আবু দারদার ঘরে উপস্থিত হলাম; কিন্তু আমি তাকে ঘরে পেলাম না, উম্মুদ দারদা (রহ.)-এর সাথে সাক্ষাৎ হলো, তিনি বললেন, এ বছর তোমার কি হাজ্জ করার ইচ্ছা আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ,। তিনি বললেন, আমাদের মঙ্গলের জন্য দু’আ করবেন। কেননা, নাবী (সা.) এরশাদ করেছেন, কোন মুসলিম তাঁর অনুপস্থিত ভাইয়ের জন্য দু’আ করলে তা কবুল করা হয় এবং তাঁর মাথার কাছে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত থাকেন, যখনই সে ব্যক্তি তাঁর ভাইয়ের জন্য মঙ্গলের দু’আ করে তখন সে নিযুক্ত ফেরেশতা বলে, আমীন অর্থাৎ হে আল্লাহ্* কবুল করুন এবং তোমার জন্য অনুরূপ। (অর্থাৎ তোমার ভাইয়ের জন্য যা চাইলে, আল্লাহ্* তোমাকেও তাই দান করুন)। (মুসলিম, আহমাদ)
ফেরশতাদের দু’আ পাওয়ার প্রত্যাশায় অতীত যামানার মনীষীগণ অপর মুসলিম ভাইয়ের জন্য দু’আ করাতে অনেক গুরুত্ব দিতেন এবং আল্লাহ্* তা’আলার অনুগ্রহে বর্তমানেও দিচ্ছেন।
কাজী ইয়াজ (রহ.) বলেনঃ সালফে সালেহীনগণ যখন নিজের জন্য দু’আ করার ইচ্ছা পোষণ করতেন তখন তারা অনুপস্থিত মুসলিম ভাইয়ের জন্য দু’আ করতেন। কেননা, এমন দু’আ কবুল হয়ে যায় এবং ফেরেস্তামন্ডলী দু’আকারীর জন্য ঐ দু’আই করে থাকেন।
হাফেজ যাহাবী (রহ.) উম্মুদ দারদা (রহ,)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেন যে, আবু দারদা (রা.)-এর তিনশত ষাটজন বন্ধু ছিল, ছালাতে তাদের জন্য দু’আ করতেন। এ সম্পর্কে তার স্ত্রী তাকে জিজ্ঞাসা করলে তদুত্তরে তিনি বলেন, আমি চাইব না যে, ফেরেশতারা আমার জন্য দু’আ করুক? কুরআন মাজীদ সেই সকল মু‘মিনদের প্রশংসা করেছে যারা অতীত মু‘মিনদের জন্য দু’আ করেন।
আল্লাহ্* তা’আলা বলেন,
যারা তাদের পরে আগমন করেছে, তারা বলে যে, হে আমাদের রব! আমাদেরকে এবং ঈমানে অগ্রনী আমাদের ভাইদেরকে ক্ষমা করুন এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের রব! আপনি দয়ালু ও পরম করুণাময়। (সূরা হাশরঃ ১০)
শায়খ মুহাম্মাদ আল্লান সিদ্দীকি (রহ.) এ আয়াত সম্পর্কে লিখেছেনঃ আল্লাহ্* তা’আলা অনুপস্থিত মুসলিম ভাইয়ের জন্য দু’আ করার জন্য তাদের প্রশংসা করেছেন।
কল্যাণের পথে ব্যয়কারীদের জন্য
নিম্নে হাদীস সমূহ তার উজ্জ্বল প্রমাণ। ইমাম বুখারী (রহ.) ও ইমাম মুসলিম (রহ.) বর্ণনা করেন।
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা অবতরন করেন, একজন বলেন, হে আল্লাহ্*! দানকারীর সম্পদ বাড়িয়ে দাও, অপরজন বলেন, হে আল্লাহ্*! যে দান করে না তার সম্পদকে বিনাশ করে দাও। (বুখারী)
এই হাদীসে নাবী (সা.) তাঁর উম্মাতকে এ সংবাদ প্রদান করেছেন যে, ভাল পথে ব্যয়কারীর জন্য ফেরেশতারা দু’আ করেন, আল্লাহ্* তাদের খরচকৃত সম্পদের প্রতিদান দান করুন।
আল্লামা আয়নী (রহ.) এ হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখেছেনঃ ফেরেশতাদের দু’আর অর্থ হলো, সৎ পথে ব্যয় করার দরুন যে সম্পদ তোমাদের হাত ছাড়া হলো আল্লাহ্* তা’আলা তাঁর বিনিময় দান করবেন।
মোল্লা আলী কারী (রহ.) এ হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখেছেনঃ ফেরেশতাদের দু’আয় যে শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে এর অর্থ হলো মহাপুরুস্কার।
হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) এর হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি চমৎকার কথা বলেছেন, ফেরেশতাদের দু’আয় সৎপথে ব্যয় করার পুরুস্কার নির্দিষ্ট নয় কেননা, এর তাৎপর্য হলোঃ যাতে করে এতে সম্পদ, সাওয়াব ও অন্যান্য জিনিসও শামিল হয়। সৎপথে ব্যায়কারীদের অনেকেই উক্ত সম্পদ ব্যয়ের প্রতিদান পাওয়ার পূর্বেই ইন্তিকাল করেন এবং প্রতিদান নেকীর আকারে পরকালে অবধারিত হয় অথবা উক্ত খরচের বিনিময় বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়ে যাওয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে। (ফাতহুল বারী)
ইমাম আহমেদ বিন হাম্মাল, ইমাম ইবনু হিব্বান ও ইমাম হাকিম (রহ.) বর্ণনা করেছেন।
আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, প্রতি দিন সূর্য উদয়ের সময় তার দুই পার্শ্বে দুই ফেরেশতাকে প্রেরণ করা হয়, তারা বলতে থাকে, হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের রবের দিকে অগ্রসর হও। পরিতৃপ্তকারী অল্প সম্পদ, উদাসীনকারীর অধিক সম্পদ হতে উত্তম। তাদের কথা মানুষ ও জীন ব্যতীত সবাই শুনতে পায়। অনুরূপ সূর্য ডুবার সময় তার পার্শ্বে দুই ফেরেশতা প্রেরণ করা হয়, তারা বলতে থাকে, হে আল্লাহ্*! দানকারীর সম্পদ বৃদ্ধি করে দাও এবং যারা দান করে না তাদের সম্পদকে ধ্বংস করে দাও। তাদের কথা মানুষ ও জীন ব্যতীত সবাই শুনতে পায়। (আল মুসনাদ, ইবনে হিব্বান)
ইমাম আহমদ ও ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ.) এভাবে সংকলন করেছেন।
আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি রাসুল (সা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, জান্নাতের দরজার পার্শ্বে ফেরেশতা বলেনঃ যে ব্যক্তি আজ ঋণ (আল্লাহ্*র রাস্তায় দান করবে) দিবে, তার প্রতিদান পাবে আগামীকাল (কিয়ামত দিবসে)।আর অন্য দরজায় এক ফেরেশতা দাঁড়িয়ে বলেনঃ হে আল্লাহ্*! দানকারীর সম্পদ বৃদ্ধি করে দাও এবং যারা দান করে না তাদের সম্পদকে ধ্বংস করে দাও। (আল মুসনাদ, ইবনে হিব্বান)
সাহরী ভক্ষণকারীদের জন্য
এর প্রমাণ স্বরূপ নিম্নে একটি হাদীস উল্লেখ করা হলঃ
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, সাহরী খাওয়াতে বারাকাত (বরকত) রয়েছে, সাহরী কখনো ছাড়বে না যদিও এক ঢোক পানি পান করেও হয়। কেননা, নিশ্চই আল্লাহ্* তা’আলা সাহরী গ্রহণকারীদের উপর দয়া করেন এবং তাদের জন্য ফেরেশতারা ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে। (ইবনে হিব্বান)
রোগী পরিদর্শনকারীর জন্য ফেরেশতাদের ক্ষমা প্রার্থনা
এ মর্মে দলীল হলঃ
আলী (রা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছিঃ যে কোন মুসলিম তার অপর মুসলমান রোগী ভাইকে দেখতে যায়, আল্লাহ্* তা’আলা তার জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা প্রেরণ করেন, তারা দিনের যে সময় সে দেখতে যায় সে সময় থেকে দিনের শেষ পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে এবং সে রাতের যে সময় দেখতে যায় সে সময় থেকে রাতের শেষ পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। (আল মুসনাদ, ইবনে হিব্বান)
শায়খ আলবানী (রাহঃ) হাদীসটি সহীহ বলেছেন।
অন্য একটি বর্ণনাতে রোগীদের পরিদর্শনকারীর জন্য ফেরেশতাদের দরূদ এর অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে, এবং এও বলা হয়েছে যে, তাদের জন্য জান্নাতে একটি বাগান তৈরি করা হয়। হাদীসে এসেছে,
আলী (রা.) হতে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি সকাল বেলা কোন রোগীকে দেখতে গেল তার সাথে সত্তর হাজার ফেরেশতা যায় এবং তারা সবাই সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে এবং তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান নির্ধারণ করা হয়। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় কোন রোগীকে দেখতে গেল, তার সাথে সত্তর হাজার ফেরেশতা যায় এবং তারা সবাই সকাল পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে এবং তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান নির্ধারণ করা হয়।
(আল মুসনাদ)
রোগী দেখতে যাওয়ার সওয়াব সম্পর্কে রাসুল (সা.) তার উম্মাতের জন্য অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন, যা হতে কয়েকটি হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রোগী দেখতে গেল, সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাহমতে আচ্ছন্ন থাকল এবং যখন সে রোগীর কাছে বসে তখন সে রাহমতের ভিতরে ডুবে থাকে। (আলো মুসনাদ, ইবনে হিব্বান)
শায়খ আলবানী হাদীসটির অধিক শাহেদের জন্য সহীহ বলেছেন। মোল্লা আলী কারী এ হাদীসটির ব্যাখ্যায় বলেন, রোগী দেখার নিয়্যাত নিজ বাড়ী থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই আল্লাহর রাহমতে প্রবেশ করে থাকে।
যখন সে রোগীর কাছে বসে, তখন সে আল্লাহর রাহমতে ডুবে যায়। রোগী দর্শনের জন্য যাওয়ার সময়ই শুধু রহমতে আচ্ছন্ন হয় না বরং বাড়ীতে ফেরার সময়ও তাকে আল্লাহর রহমত দ্বারা আচ্ছন্ন করেন। উপরোল্লেখিত হাদীসের শব্দ বাড়ী ফেরা পর্যন্ত আল্লাহর রাহমতে প্রবেশ করে তা প্রমাণ করে। পক্ষান্তরে রোগীর দেখাশুনা না করলে শাস্তি পেতে হবে। এ মর্মে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, “কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্* তা’আলা বলেন, হে আদম সন্তান! আমি রোগে আক্রান্ত ছিলাম, তুমি আমার দর্শন সেবা করোনি। সে বলবে, হে আমার রব! আপনি সারা বিশ্বের রব, আমি আপনার কেমনে সেবা করব? তিনি বললেন, তুমি কি জাননা, আমার অমুক বান্দা রোগাক্রান্ত ছিল? তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে সেখানেই আমাকে পেতে।” (মুসলিম)
ইমাম নববী (রহ.) আল্লাহ্* তা’আলার এরশাদঃ সেখানে আমার সওয়াব ও সম্মান পেতে। (মুসলিম, শারহে নববী)
আল্লামা মোল্লা আলী কারী (রা.) আল্লাহ্* তা’আলার বাণীর ব্যাখ্যায় বলেনঃ সেখানে আমার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারতে।
রোগী ও মৃত ব্যক্তির পক্ষে ও বিপক্ষে মন্তব্যের উপর ফেরেশতাদের আমীন বলা
নিম্ন হাদীসটি এর উজ্জ্বল প্রমাণ।
উম্মে সালমা (রা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন রাসুল (সা.) বলেছেন, “তোমরা যখন কোন রোগী বা মৃত ব্যক্তির নিকট উপস্থিত হবে, তখন ভাল দু’আ করবে, কেননা, ফেরেশতারা তা কবুল হওয়ার জন্য আমীন বলে থাকেন। (ইবনে মাজা)
হাদীসে উল্লেখিত শব্দের দু’টি অর্থ হতে পারেঃ (ক) মুমূর্ষ ব্যক্তি (খ) মৃত ব্যক্তি।
রোগীর নিকটে গেলে আল্লাহ্* তা’আলার সমীপে তার জন্য রোগ মুক্তির দু’আ করো এবং মৃত ব্যক্তির নিকট গেলে তার ক্ষমার জন্য আল্লাহর নিকট দু’আ করবে। অনুরূপ যে জায়গায় যাও নিজের জন্য ভাল কথাই বলবে। (মিরকাতুল মাফাতিহ)
ইমাম নববী (রহ.) বলেন, এই হাদীসে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে যে এ ধরনের স্থানে যেন উত্তম কথা বলা হয়। আল্লাহ তা’আলার নিকট রোগী বা মৃত্যর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা হয় এবং তার প্রতি যেন মেহেরবানী, সহজ ও নরম ব্যবহার করা হয়। এ উদ্দেশ্যে দু’আ করা হয়ও তা কবুল হওয়ার জন্য ফেরেশতারা আমীন বলে থাকে। (শরহে নববী)
যেহেতু এ হাদীসে রোগী ও মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে ভাল উক্তিকারীর উক্তিকে কবুল হওয়ার জন্য আমীন বলার সুসংবাদ রয়েছে। অতএব, এমন স্থানে খারাপ উক্তি প্রকাশ ব্যাপারেও বিপদের আশংখা রয়েছে। কেননা, তাও কবুল হওয়ার জন্য ফেরেশতারা আমীন বলে থাকে। উল্লেখ্য জানাযার সময় ইমাম কর্তৃক বলা ইনি কি ভাল ছিলেন? আপনারা বলুনঃ হ্যাঁ তিনি ভাল ছিলেন। এরকম বলা নিশ্চিত বিদআত।
সৎকাজের শিক্ষা প্রদানকারীর জন্য
এরশাদ হচ্ছে,
আবু উমাম বাহেলী (রা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসুল (সা.)-এর সামনে দু’ই ব্যক্তি সম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হলোঃ যাদের একজন আলেম, অপরজন আবেদ (ইবাদতকারী)।রাসুল (সা.) বলেন, “আবেদের তুলনায় আলেমের মর্যাদা হলোঃ যেমন তোমাদের সর্বনিম্ন লোকের তুলনায় আমার মর্যাদা।” (তিরমিযী)
তারপর রাসুল (সা.) বললেন,
নিশ্চই মানুষকে ভাল কথা প্রদানকারীর প্রতি আল্লাহ্* তা’আলা দয়া করে থাকেন এবং ফেরেশতারা, আসমান ও জমীনের অধিবাসীরা এমন কি গর্তের পিপিলিকা ও পানির মৎস্যও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে। (তিরমিযী)
হাদীসে মানুষকে উত্তম কথা শিক্ষা দেওয়ার অর্থ সম্পর্কে মোল্লা আলী কারী (রা.) বর্ণনা করেছেনঃ শিক্ষা বলতে এমন শিক্ষা যার সাথে মানুষের মুক্তি জড়িত। রাসুল (সা.) প্রত্যেক শিক্ষকের জন্য ক্ষমার উল্লেখ করেননি; বরং মানুষের উত্তম শিক্ষা দাতার কথা বলেছেন। যেন তার দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, উক্ত ক্ষমার উপযুক্ত ঐ শিক্ষক যিনি মানুষকে কল্যাণের পথে পৌঁছার জন্য ইলম শিক্ষা প্রদান করে থাকেন।
মু’মিন ও মু’মিনদের আত্মীয় ও তাওবাকারীদের জন্য
এই মহা সত্যের বর্ণনা নিম্নের আয়াতগুলিতে রয়েছেঃ
“যারা আরশ বহনে রত এবং যারা তার চতুষ্পার্শে ঘিরে আছে, তারা তাদের রবের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে প্রশংসার সাথে এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মু’মিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের রব! তোমার দয়া ও জ্ঞান সর্বব্যাপী। অতএব, যারা তাওবা করে এবং তোমার পথ অবলম্বন করে তুমি তাদেরকে ক্ষমা করও এবং জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা কর। হে আমাদের রব! তুমি তাদেরকে দাখিল কর স্থায়ী জান্নাতে, যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাদেরকে দিয়েছ এবং তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তাদেরকে। তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় এবং তুমি তাদেরকে শাস্তি হতে রক্ষা কর। সেদিন তুমি যাকে শাস্তি হতে রক্ষা করবে, তাকে তো অনুগ্রহই করবে; এটাই তো মহা সাফল্য।’’ (সূরা মু’মিনুনঃ৭-৯)
শেষ কথাঃ
উপরের আলোচনা থেকে আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়েছে যে, সব মানুষের কল্যাণের জন্য মালাকগণ দুআ করে না। বরং বিশেষ গুণ সম্পন্ন মানুষের প্রতি এ দু’আ করে থাকে। আর মুলতঃ এ কল্যাণের দু’আ আল্লাহই মালাকদের করতে বলেন। কেননা, মালাকগণ তো নিজে কিছু করতে পারে না। সুবহান্নাল্লাহ! মালাকগণ মানুষের জন্য দু’আ করবে এটা কত বড় সুভাগ্যবান বিষয়। অথচ অনেক মানুষ আজ এ কাজ গুলো করছে না। তারা মাজারে ও মৃত্যু অলীর নিকট দু’আর জন্য আবেদন করছে। নাউযুবিল্লাহ।
আসুন ! আপনি যদি মালাকদের আশীর্বাদ ও কল্যাণের দু’আ নিয়ে নিজেকে ধন্য করতে চান। তাহলে উপরোক্ত কাজগুলো আমল করুন। মালাকগণ সর্বদা নজরদারিতে আছে। যখন কোন নারী – পুরুষ উক্ত আমলসমূহ করবে তখনই তার উপর মালাকগণ দু’আ শুরু করবেন। আল্লাহ আমাদেরকে মালাকদের দু’আ নেওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তি হিসাবে কবুল করুন। আমীন।
7:52 PM Posted by Just for you 0

Thursday, May 23, 2013

সেদিন একটা বই পড়ছিলাম পাশে বসে থাকা বন্ধু জিজ্ঞেস করল বইটি কি নিয়ে লেখা?


[সেদিন একটা বই পড়ছিলাম পাশে বসে থাকা বন্ধু জিজ্ঞেস করল বইটি কি নিয়ে লেখা? আমি উত্তর দিলাম সালাহুদ্দীন আইউবিকে নিয়ে লেখা। ও আমাকে জিজ্ঞেস করল, সে আবার কে?! ... বন্ধু আমার একজন  মুসলিম। কিন্তু সে সালাহুদ্দীন আইউবিকে চিনে না (!)।
জাতি আসলে সেই মহাপুরুষ দের ভুলে যেতে চলেছে যারা ইসলামের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছে।
জাতি আসলে তাদের ভুলে কাদেরকে মনে রাখছে? তারা কাদের জীবনী পড়ছে?? কাদের সম্পর্কে জানছে ?? তাই ভাবলাম জাতিকে কিছু জানানো  যায় কিনা। তাই এই লেখাটা লেখা। যতটুকু পেরেছি সংক্ষিপ্ত করে লিখেছি। এর চেয়ে সংক্ষিপ্ত করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ] [ দয়া করে নিজে জেনে শেয়ার করে অন্যকে জানার সুযোগ করে দিন ]


মহান আল্লাহ এই মহাজগতের সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা। আল্লাহ মানুষ সহ বহু প্রকারের প্রাণী, জীবজন্তুসৃষ্টি করেছেন। তাদের মধ্যে মানুষকে করেছেন সৃষ্টির সেরা জীব। আর তাদের হাতেই ন্যাস্ত করেছেন পৃথিবীর পরিচালনার ভার। আর সঠিক উপায়ে পরিচালনার জন্য পৃথিবীর ঊষালগ্ন থেকেই সেখানে প্রেরণ করেছেন নবী-রাসুল যারা  মানুষের মাঝে আল্লাহর আইন-কানুন ও জীবন চলার পদ্ধতি শিক্ষা দিয়ে সে অনুযায়ী চলতে মানুষকে সাহায্য করেছেন। আর নবী-রাসুলদের এই কাজের সাহায্যার্থে আল্লাহ তাদের অনেকের উপর প্রেরণ করেছেন আসমানি কিতাব এবং তাদের দিয়েছেন সর্বযুগের চিরন্তন আদর্শ ইসলাম। রাসুল (সাঃ) ছিলেন সেই নবী – রাসুলদের মধ্যে শেষ রাসুল যার পর আর কোন নবী বা রাসুল আসবেন না। কিন্তু মানুষের মাঝে আল্লাহর আইন-কানুন ও জীবন চলারপদ্ধতি পৌছিয়ে দিতে এবং সেগুলো সূক্ষ্মরূপে - সুশৃঙ্খল উপায়ে পালনের উদ্দেশ্যে সমগ্র পৃথিবীতে একক রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষের মধ্য থেকে নির্বাচিত খলীফাদের (আমির, ইমাম, সুলতান) দায়িত্ব দিয়েছেন। আর সেই ক্রমধারায় নবী-রাসুলের পর খলিফাগণ দাওয়া ও জিহাদের মাধ্যমে একের পর এক অঞ্চলে ইসলামকে পৌছিয়ে দিয়েছেন। সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবি ছিলেন তেমনি একজন সুলতান যিনি ইসলামিক রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোর একটি বায়তুল মুকাদ্দাস ( ইহুদী-খৃষ্টানদের কথ্য মতে জেরুজালেম) ক্রুসেডারদের দ্বারা দখলের  প্রায় ৯০ বছর পর পুনরায় (হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এর খিলাফতের সময়  সেটি ইসলামিক রাষ্ট্রের ছায়াতলে আসে) তাদের হাত থেকে মুক্ত করেন, এবং সেখানকার মুসলিম নাগরিকদের তাদের অত্যাচারের  হাত  থেকে  রক্ষাকরেন।


১১৬৯ সালের ২৩ মার্চ। সালাহুদ্দিন আইউবি গভর্নর ও সেনাপ্রধান হয়ে মিসর আগমন করেন।ফাতেমি খিলাফতের কেন্দ্রীয় খলীফা তাকে এ-পদে নিয়োগ দিয়ে বাগদাদ থেকে প্রেরণ করেন।তার (দ্বাদশ শতাব্দীর) আগে থেকেই ইউরোপ, ফ্রান্স ও জার্মানি ইসলামিক রাষ্ট্রভাঙ্গার  জন্য  ক্রুশ ছুঁয়ে শপথ করে, ইসলামের নাম নিশানা মুছেদিয়ে বিশ্বজুড়ে ক্রুশের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শুরু করে নানা চক্রান্ত। সেইসঙ্গে তারা চালায় সশস্র অভিযান। মুসলিমদের থেকে ছিনিয়ে নিয়ে দখল করে রাখে  ইসলামের মহান স্মৃতি চিহ্ন  প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস।  


 সালাহুদ্দীন আইয়ুবি ছোটবেলায় গভর্নর নিজামুল মূলক এর মাদরাসায় জাগতিক ও আদর্শিক  পড়াশুনা ও যুদ্ধ বিদ্যায় জ্ঞান লাভ করেন।  রাজনীতি, কূটনীতি, ভূগোল, ইতিহাস,  পড়াশুনা ও প্রত্যক্ষ যুদ্ধ কৌশলের উপর গভীর জ্ঞান ও আগ্রহের কারণে চাচা  শেরেকাহ ও  নুরুদ্দীন জঙ্গী  তাকে স্পেশাল প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।  প্রশিক্ষণটি মূলত তৈরি হয় এক যুদ্ধের ময়দানে , যেখানে সালাহুদ্দিন আইউবি দীর্ঘকাল আবরোধের মধ্যেযুদ্ধ করেও হতাশ না হয়ে সম্পূর্ণ ঠাণ্ডা মাথায় সৈন্যদের নিয়ে যুদ্ধ করে ফিরে আসেন। এর পরই  নুরুদ্দীন  জঙ্গী  তাকে মিশরের গভর্নরের পদের জন্য মনোনীত করেন। 


 সুলতান নুরুদ্দীন জঙ্গীও চিন্তা চেতনায় ছিলেন সালাহুদ্দীন আইউবির মতই।  সেসময় যেখানে ইসলামিক খিলাফতের সব আমির, গভর্নর,  উজিররা খৃষ্টানদের চক্রান্তে পা দিয়ে তাদেরথেকে সুন্দরি মেয়ে ও প্রচুর ধনসম্পদ এবং মূলত ক্ষমতার লোভে ইসলামিক রাষ্ট্র থেকে স্বাধীন হয়ার স্বপ্ন দেখত, ঠিক তখনই সালাহুদ্দীন আইয়ুবি ও নুরুদ্দীন জঙ্গী ইসলামিক খিলাফত রাষ্ট্রকে ইহুদী–খৃষ্টানদের চক্রান্ত থেকে মুক্ত করে বাইতুল মুকাদ্দাস কে সেই ক্রুসেডারদের থেকে মুক্ত করার জন্য একের পর এক জিহাদ করে গেছেন।


সালাহুদ্দীন আইয়ুবি মিশরের গভর্নর হয়ার পরই সর্ব প্রথম  সেখান থেকে খৃষ্টানদের চক্রান্তে পা দেয়া আমির উজিরদের সুকৌশলে সরকারী দায়িত্ব থেকে দূরে সরিয়ে দেন। এজন্য তাকে মারার জন্য ক্রুসেডারদের দালালরা অনেক ফন্দি আটার পরও তারা ব্যর্থ হয়। দালালরা অনেক সুন্দরী মেয়ে ব্যবহার করেও পাথরের মত সালাহুদ্দীনকে গলাতে পারেনি। যেখানে অন্যান্য আমিররা সানন্দেই তাদের গ্রহণ করত।  দালালরা সালাহুদ্দীনকে গলাতে না পেরে তাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে নিজেরা খমতায় বসার জন্য মিশরের সেনাবাহিনির মধ্যে থাকা সুদানি সেনাদের মধ্যে বিদ্রোহ করার চেষ্টা করে এই বলে যে তোমরা সুদানি তারা মিসরি। সুদানের বর্ডার মিশরের কাছে থাকাতে  বিদ্রোহের পর সেখান থেকে আক্রমণ করাও সহজ ছিল। কিন্তু সালাহুদ্দীন আইয়ুবি তার চৌকস গোয়েন্দা প্রধান আলি বিন সুফিয়ান কে দিয়ে সব তথ্য আগেই পেয়ে যান । আর খুবই কৌশলে তাদের বিদ্রোহ দমন করেন। এদিকে সেনা বিদ্রোহ করিয়ে দালালরা সম্রাট ফ্রাঙ্ককে আক্রমণ করার আগমনও জানায়। কিন্তু সালাহুদ্দীন আইউবি আগেই বিদ্রোহ দমন করেন, আর যখন পরে ফ্রাঙ্ক এর সেনাবাহিনী আসে তারা পুরোপুরিভাবে সালাহুদ্দীনের কাছে পরাজিত হয়। এই দিকে ফ্রাঙ্ক মিসরে আক্রমণ করলে সিরিয়া থেকে নুরুদ্দীন জঙ্গিও ফ্রাঙ্ক এর দেশে আক্রমণ করে বসেন। তাতে আক্রমনের খবর পেয়েই ফ্রাঙ্ক তার দেশে ফিরে যেয়ে দেখেন সেখানের চিত্রই বদলে গেছে। সব দিক দিয়েই ফ্রাঙ্কের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। 

বাগদাদের  খলীফা খলীফা আজেদ ও যখন ক্রুসেডারদের চক্রান্তে পা দেন তখন সালাহুদ্দীন আইউবি তাকে সুকৌশলে খিলাফতের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে বাগদাদকে সিরিয়ার খিলাফতের অধীনে নুরুদ্দীন জঙ্গীর কাছে দিয়ে দেন , এতে করে খিলাফত রাষ্ট্র আবারো একটি রাষ্ট্রে পরিনত হয়। মূলত ক্রুসেডাররা ফাতেমি খলীফাকে মদ আর নারীতে ব্যাস্ত রেখে তাকে অধমে পরিণত করে, এমনকি সে সালাহুদ্দীন আইয়ুবিকে হত্যাও করার পরিকল্পনা করে। আর খলীফা হওয়া সত্ত্বেও তিনি সালাহুদ্দিন আইউবির উপর কথা বলতে ভয় পেতেন। চরিত্রের অধপতনের কারণেই মূলত এমনটি অনুভব করতেন তিনি। তাই তাকে সরিয়ে খিলাফতের দায়িত্ব একজনকে দেয়া ও একমুখী করা সালাহুদ্দীন আইয়ুবির পক্ষে সহজ হয়।  

সেকালে মাসজিদে জুময়ার খুৎবাতে আল্লাহর ও রাসুলের নামের পর  খলীফার নাম উচ্চারন করতে হতো। সালাহুদ্দীন আইয়ুবি জুময়ার খুৎবা থেকে খলীফার নাম উচ্চারন করা বাদ দিয়ে দেন।


 সুলতান আইয়ুবি যেখানে ক্রুসেডারদে আক্রমণ করে করে তাদের ইসলামিক রাষ্ট্রের দখলকৃত অঞ্চল থেকে বিতারিত করবেন, সেখানের মুসলিমদের তাদের অত্যাচার থেকে মুক্তি দিবেন,সেখানে ক্রুসেডাররা সারাক্ষণই তাদের গয়েন্দাদের ব্যবহার করে  মিসরে কোন না কোন সমস্যা তৈরি করে রাখত।  যাতে করে সালাহুদ্দীন আইয়ুবি নতুন করে তাদের আক্রমনের সময় না পান, তিনি যেন মিসর ঠিক করতেই তার সকল সময় পার করে দেন। তারা প্রায়ই চেষ্টা করত সুদানি বাহিনী দিয়ে সুদান থেকে মিসরে আক্রমণ করাতে, যাতে সালাহুদ্দীন শুধু তাদের নিয়েই ব্যাস্ত থাকেন। তারা মিসরের বিভিন্ন মাসজিদে তাদের প্রশিক্ষিত গোয়েন্দা ইমাম পাঠাত যারা সেখানে জিহাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে মানুষের ভিতর থেকে জিহাদের চেতনাকে ধ্বংস করতে চাইত। ক্রুসেডাররা মুসলিমদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করত মেয়েদের দিয়ে। তারা প্রায় সব আমিরদের কাছেই তাদের সুন্দরী মেয়েদের প্রেরণ করত, তাদের দিয়ে সেই আমির দের চরিত্র ধ্বংস করার পায়তারা করত। তারা জানত মুসলিমদের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে তাদের ঈমানী শক্তি  যেটা দিয়ে তারা ক্রুসেডারদের  সাথে লড়ে । আর সে শক্তির কাছেই তারা বার বার হারে, আর সে শক্তির বলেই তাদের চেয়েও অনেক কম পরিমাণ সৈন্যদিয়ে মুসলিমরা বার বার জয় লাভ করে।

ক্রুসেডাররা তাদের নিজেদের মেয়েদের কে মুসলিমদের চরিত্র হরণের প্রশিক্ষণ দিত। তারা এ কাজে সেসকল মেয়েদেরও ব্যবহার করত যাদেরকে তারা মুসলিমদের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অপহরণ করে এনেছিল তাদের বাল্যকালে। তারা ক্রুশের স্বার্থে  এরূপ করাকে পুণ্য মনে করত।
 

 সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবি মিশরের স্থায়িত্ব আনার পরই আবার তার সেই বায়তুল মুকাদ্দাসকে মুক্ত করার সপথ পুরন করার জন্য বের হয়ে যান।  তিনি সর্ব প্রথম খৃষ্টানদের ফিলিস্তিনের শোবক দুর্গ অবরোধ করে সেটা জয় করে ফেলেন। পরে নুরুদ্দীন জঙ্গীর সহায়তায় কার্ক দুর্গও জয়করেন। কার্ক দুর্গ অবরোধ করার সময় সুদানিরা আবারো মিসরে সমস্যা তৈরি করতে চায় ক্রুসেডারদের সাহায্যে। পরে সুলতান আইয়ুবি কার্কের অবরোধ নুরুদ্দীন জঙ্গীকে  দিয়ে মিসরে চলে আসেন। পরে নুরুদ্দীন জঙ্গী কার্ক দুর্গ সহ ফিলিস্তিনের আরও কিছু জায়গা দখল সম্পন্ন করেন। 


 ফিলিস্তিনের শোবক ও কার্ক দুর্গ পরাজয়ের প্রতিশোধ স্বরূপ ক্রুসেডাররা পাল্টা আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নেয়। স্পেনের পূর্ণ নৌ বহর  এতে যুক্ত হয়। ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়ামও যুক্ত হয়। গ্রিস ও সিসিলির জঙ্গি কিশতিগুলও যুক্ত হয়। ব্রিটিশরা ভাবতো তারা চাইলে একাই মুসলিমদের পরাজয় করতে পারে তাই তারা যুক্ত হতে চায় নি। কিন্তু তাদের পোপের অনুরধে তাদের কিছু যুদ্ধ জাহাজগুলও যুক্ত করে। ...... এদিকে  সুলতান আইয়ুবি গোয়েন্দা মারফত তাদের আগমনের খবর পেয়ে যান, তিনি এও জেনে যান যে তারা আগে এসে মিসরের উপকুলের আলেকজান্দ্রিয়া অঞ্চল দখল করবে। তাই সুলতান আলেকজান্দ্রিয়া থেকেসকল জনগণকে সেখান থেকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যান এবং সেখানে ঘরগুলোতে মুসলিম
সৈন্য দিয়ে ভরে রাখেন। ক্রুসেডাররা যখন উপকুলে এসে ভিরে তারা পরে আক্রমণের জন্য কোন সৈন্য না দেখে খুশি হয়, এবং পরে হেসে খেলে উপকূলের আলেকজান্দ্রিয়া দখল করতে যায়। রাতে যখন তারা নগরীতে প্রবেশ করে তখনই সৈন্যরা ঘর থেকে বেরিয়ে তাদের উপর আক্রমণ করে নিষ্পেষিত করে দেয়। ওই দিকে তাদের জাহাজগুলোতে যেই সৈন্যদেরকে রেখে এসেছিল তাদের উপর হঠাৎ পেছন থেকে সুলতান আইয়ুবির যুদ্ধ জাহাজ আক্রমণ করা শুরু করে। তারা মিনজানিকের  সাহায্যে বড় বড় আগুনের গোলা ও পাথর মারতে শুরু করে ক্রুসেডারদের জাহাজের উপর। ক্রুসেডাররা পালাতে থাকে জাহাজ নিয়ে এবং ধ্বংস হতে থাকে। ক্রুসেডারদের আরেকটা অংশ ফিলিস্তিন থেকে আক্রমনের জন্য আসলে সুলতান নুরুদ্দীন  জঙ্গী তাদের উপর আক্রমণ করে তাদের পরাজয় করে দেন। এই যুদ্ধ শেষে নুরুদ্দীন জঙ্গী সুলতান আইয়ুবিকে তার অধিকৃতঅঞ্চল দিয়ে সিরিয়ায় নিজ এলাকায় চলে যান।

সালাহুদ্দীন আইয়ুবির যুদ্ধ কৌশলের সবচেয়ে ভয়ানক কৌশল ছিল তার গেরিলা হামলা। তার সৈন্যরা গেরিলা বাহিনী দিয়ে শত্রুদের সেনা বহরের পেছনের অংশে আঘাত হরে নিমিষেই হারিয়ে যেত। তার এই কৌশল আজো সামরিক বিশ্লেষকরা প্রশংসা করে।


 ১১৭৪ সালের মে মাসে নুরুদ্দীন জঙ্গী মৃত্যু বরন করেন। তার মৃত্যুতে নেমে এসে শোকেরছায়া। সালাহুদ্দীন আইয়ুবি হারান তার প্রান প্রিয় চাচাকে জিনি বরাবরই তাকে সাহায্যদিয়ে আসতেন বিভিন্ন সময়ে। ক্রুসেডাররা খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। কারন তারা এখন সালাহুদ্দীন আইয়ুবির সাথে আগের চেয়ে কম কষ্টে লড়তে পারবে।  জঙ্গীর মৃত্যুর পর তার মাত্র ১১ বছরের  নাবালেক  ছেলেকে ক্রুসেডারদের গাদ্দাররা ক্ষমতার লোভে খিলাফতের মসনদে বসায়। যদিও মাত্র ১১ বছরের নাবালেগ ছেলেকে খলীফা হিসেবে মসনদে বসানো সকলের জন্য হারাম, তবুও তারা ক্ষমতার জন্য এটা করে। এতে নুরুদ্দীন জঙ্গীর স্ত্রী রোজি খাতুন অনেক বাধা দিলেও তারা তা অমান্য করে। রোজি খাতুনও ছিলেন মুলত তার স্বামীর মতোই একজন খাটি ইমানদার। যিনি এই অন্যায় মেনে নিতে না পেরে সালাহুদ্দীন আইয়ুবিকে চিঠি লিখেন এই বলে যে, উনি যেন এসে সিরিয়া দখল করেন।


এদিকে সালাহুদ্দীন আইয়ুবি আসবেন জেনে রোজি খাতুন সেখান কার জনগণকে  বুঝাতে থাকেন যে একজন নাবালেগকে  খলীফা হিসেবে মানা হারাম। আর এ কাজ গাদ্দাররা  একারনে করেছে যাতে করে তারা তার নাবালক  ছেলেকে দিয়ে ভুল বুদ্ধি দিয়ে সব করিয়ে নিতে পারে।

একদিন সালাহুদ্দীন  আইয়ুবি মাত্র ৭০০ সৈন্যনিয়েই সিরিয়ার মুল দুর্গ অবরোধ করেন। এতে সিরিয়ার জনগন খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় এবং তারা সালাহুদ্দীন আইয়ুবিকে ভিতরে আসতে দেয়ার জন্য নগরীর মুল ফটক খুলে দিতেবলে। তারা বাধ্য হয়ে ফটক খুলে দিলে সালাহুদ্দীন আইয়ুবি ভিতরে প্রবেশ করে। সকলেতাকে স্বাগত জানায়।

এদিকে  সুলতান আইয়ুবির  আগমনের খবর পেয়ে সকল আমলা- উজিররা  দামেস্ক ছেড়ে পালিয়ে যায়। নুরুদ্দীন জঙ্গীরছেলেও পালিয়ে যায়। সাথে করে তারা প্রচুর মূল্যবান সম্মত্তি ও প্রচুর দিরহাম নিয়েযায় আর সাথে করে খৃষ্টানদের দেয়া মেয়েগুলোও নিয়ে যায়।  তারা সিরিয়ার অদূরে হালব, হাররান ও মাশুলদুর্গে যেয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানে খৃষ্টানদের প্রভাব থাকায় তারা নিরাপদেই থাকতে শুরুকরে।

সুলতান নুরুদ্দীন জঙ্গীর মৃত্যুর পর যখন সালাহুদ্দীন আইয়ুবি সিরিয়া মিশরকে এক করেদেন, তখন থেকেই তিনি মিসরের গভর্নর থেকে সেই সালতানাতে ইসলামিয়ার সুলতান হন। তখন থেকেই তাকে সুলতান উপাধিতে ডাকা হয়।  
হালব ও মাসুলে আশ্রয় নেয়া আমিররা ক্রুসেডারদের সাথে আতত করে সুলতান আইয়ুবিকে পরাজিত করে পুনরায় সিরিয়া দখল করের ফন্দি আটে। এতে ক্রুসেডাররাও তাদের সাহায্য করতে থাকে। সুলতান আইয়ুবি যেন নিজেদের মুসলিম ভাইদের সাথেই যুদ্ধ করতে করতে শেষহয়ে যান সেই লক্ষ্যে ক্রুসেডাররা হালব, মাসুল ও আশে-পাসের  আমিরদের সালাহুদ্দীন এর বিরুদ্ধে উদবু‍‌দ্ধ করতে থাকে। তাদের সাহায্য করতে থাকে। তারা সেখানকার মুসলিম জনগণদের গোয়েন্দা মারফত বিভ্রান্ত করতে থাকে। তাদের বুঝাতে থাকে সুলতান সালাহুদ্দীন অত্যাচারী, নির্দয়শাসক।

পরে বহু দিন যাবত সুলতান আইয়ুবি বায়তুল মুকাদ্দাসের বাঁধা স্বরূপ সেই কথিত মুসলিম আমিরদের  সাথেই যুদ্ধ করতে থাকেন। ক্রুসেডাররা সেই আমিরদের প্রচুর ধন-সম্পত্তি ও সুন্দরী মেয়ে দিয়ে রেখেছিল। আর ক্ষমতার নেশা সে সকল আমিরদের জেকে বসেছিল।

একদিন মরহুম সুলতান নুরুদ্দীন জঙ্গীর ছেলে প্রচুর মদ্য পানের ফলে ভুগে ভুগে মৃত্যুবরন করে। তাকে দেখার জন্য তার মা রোজি খাতুন আর কখনো যান নি।


 অতঃপর অনেক দিন পর অনেক যুদ্ধ ও অনেক কষ্টের পর সুলতান আইয়ুবি হালব, মাসুল ওহাররান দখল করে নেন।  তখন সেখানকার মুসলিমরাই তাদের আমিরদের বিরুদ্ধে সালাহুদ্দীন এর জন্য দরজা খুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে বলে, পরে তারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এতে সুলতানের নিজেদের সাথে যুদ্ধকরেই প্রচুর মুসলিম সৈন্য শেষ হয়ে যায়। ক্রুসেডারদের গাদ্দার আমিরগুলোও তাদের সৈন্যদের এই বলে যুদ্ধে নিত যে, সালাহুদ্দীন ক্রুসেডারদের সাথে আতত করেছে , আর আমরাই প্রকৃত ইসলামের পথে আছি।

হালব, হাররান আর মাসুল দুর্গ জয়  করার পরসালাহুদ্দীন আইয়ুবির সামনে বাইতুল মুকাদ্দাসের পথে আর কোন বাধা রইলনা।


সুলতান আইয়ুবির এইবার বাইতুল মুকাদ্দাস এরদিকে আগমনের পালা। ক্রুসেডাররা এইবার আর মুসলিমদের থেকে সাহায্য পাবে না। কারন সব আমিরই এখন সালাহুদ্দীন আইয়ুবির আনুগত্য শিকার করেছে।  সুলতান আইয়ুবি এইবার সর্ব প্রথম কার্ক আক্রমণ করেন। সালাহুদ্দীন আইয়ুবি এর আগেও একবার কার্ক দখল করেন কিন্তু ১ মাস পর সেটা আবারো ক্রুসেডারদের হাতে চলে যায়। কার্কের শাসনভার ছিল  অরনাত এর উপর। অরনাত একজন নাস্তিক ছিল যে রাসুল (সাঃ) কে নিয়ে বিদ্রুপ করত, তাই সুলতান তাকে ঘৃণা করতেন আর তাকে কাছে  পেলেই হত্যা করবেন   বলে শপথ নিয়েছিলেন। অরনাত মিসর আর সিরিয়ার হজ্ব কাফেলাগুলোর উপর হামলা করে তাদের সম্পত্তি ডাকাতি করত, আর মেয়েদের তুলে নিত।

সুলতান আইয়ুবি কার্ক আক্রমণ করলেন। কিন্তু তিনি সেটা অবরোধ না করে শত্রু যেন তার ইচ্ছা মত এলাকায় এসে যুদ্ধ করতে বাধ্য হয় সেই পরিবেশ তৈরি করলেন। তিনি শত্রুর সকল রসদ বন্ধ করে তাদের পানির উৎস গুলো দখল করলেন আর তাদের পানির তৃষ্ণায় যুদ্ধ ক্ষেত্রে পাগল করে ফেললেন। ক্রুসেডাররা বর্ম পরে যুদ্ধে আসতো আর তিনি যুদ্ধের সময় ঠিক করলেন জুন-জুলাই মাসে, এতে তারা বর্মের ভিতর উত্তাপে জ্বলে-পুড়ে মরতে লাগলো। তাদের পরাজয় হল। সুলতান কার্ক ও আশে পাসের দুর্গ জয় করে নিলেন। সেই যুদ্ধে অরনাত সহ মোট ছয় জন সম্রাট ধরা পরে। সুলতান পরে তার শপথ মত অরনাত কে হত্যা করে বাকিদের ক্ষমা করে দেন।

এই যুদ্ধে ক্রুসেডাররা তাদের সবচেয়ে বড় ক্রুশটা (তারা ভাবে এইটাতেই ইসা (আঃ) কেশূলে চড়ানো হয়েছিল) যুদ্ধের ময়দানে এনেছিল। তাদের সবচেয়ে বড় পাদ্রি (পোপ)  এটা আনে। পরে পোপ মৃত্যু বরণ করে আর বড় ক্রুশটি মুসলিমদের হাতে চলে আসে। পরে সুলতান ক্রুসেডারদের তাদের ক্রুশটি দিয়ে দেন। 

এরপর পালা আক্রার দুর্গের । ক্রুসেডাররা ভেবেছিল সুলতান আগে বায়তুল মুকাদ্দাস আক্রমণ করবেন। তাই তারা বুঝে উঠার আগেই সুলতান আগে আক্রা আক্রমণ করলেন। ২-৩ দিন অবরোধের পর সেটা জয় করে ফেলেন।

তারপর সুলতান আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ আসকালান অবরোধ করেন। প্রায় ৩৪ টি বছর পরএই অঞ্চলটি আবার স্বাধীন হল। ১১৫৩ সালের ১৯ এ সেপ্টেম্বর সম্রাট ফ্রাংক এটি দখলকরে নেয়। আসকালান থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার পূর্বে বায়তুল মুকাদ্দাস অবস্থিত।


 এইবার পালা বায়তুল মুকাদ্দাসের ..........  
ক্রুসেডারদের দ্বারা বায়তুল মুকাদ্দাসের দখল হয় ১০৯৯ সালের ১৫ জুলাই মতাবেক ৪৯২হিজরীর ২৩ শাবান । ক্রুসেডাররা বায়তুল মুকাদ্দাস দখল করে মুসলিম শাসকদের সহায়তায়। সেসময় মুসলিম শাসকরা নিজেদের রাজ্য চলে যাবে বিধায় সকলেই একে একে ক্রুসেডারদের পথ ছেড়ে দেয়, কেউই তাদের বাধা দেয় না। বরং অনেকেই তাদের সাহায্য করে, রসদ দেয়।

শুধু আরাকার আমির ছিলেন একজন  ইমানদার পুরুষ, যার সামরিক শক্তি খৃষ্টানদের তুলনায় কিছুই ছিল না। তবু তিনি খৃষ্টানদের দাবি পুরন করতে অস্বীকৃতি জানান। খৃষ্টান বাহিনি আরাকা ১০৯৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ মে পর্যন্ত অবরোধ করে রাখে। মুসলিমরা এমন প্রান পন লড়াই করে যে বিপুল ক্ষতির পর ক্রুসেডাররা পথ পরিবর্তনকরে চলে যায়।

মুসলিম আমিরগনই সে সময়য় ক্রুসেডারদের নিরাপদে বায়তুল মুকাদ্দাস পৌঁছে দিয়েছিল। পরে ১০৯৯ সালের ৭ জুন তারা বায়তুল মুকাদ্দাস আবরোধ করে এবং ১৫ জুলাই বায়তুল মুকাদ্দদাসের ভিতরে প্রবেশ করে। সে সময় বায়তুল মুকাদ্দাসের গভর্নর ছিলেন ইফতেখারুদ্দৌলাহ, তিনি প্রানপন লড়াই করেছিলেন ক্রুসেডারদের সাথে। কিন্তু তাদের রসদ ও সৈন্য অগণিত হয়ায় তিনি বার্থ হয়েছিলেন। পরে ক্রুসেডাররা নগরীতে ঢুকে সব মুসলিমদের হত্যা করে, তাদের নারীদের অত্যাচার করে, শিশুদের মাথা কেটে সেটা দিয়ে ফুটবল খেলে। মুসলিমরা আস্রয়ের জন্য মাসজিদুল আকসা ও অন্যান্য মাসজিদে যায় তারা ভাবে মাসজিদুল আকসা উভয়ের নিকট সম্মানিত হয়ায় তারা তাদের ছেড়ে দিবে। কিন্তু না ক্রুসেডাররা সেখানে ঢুকে মুসলিমদের  হত্যা করে,  তাদের রক্ত  মাসজিদ গড়িয়ে গড়িয়ে বাইরে পরছিল, রক্তে খৃষ্টানদের ঘোরার পা ডুবে গিয়েছিল। খৃষ্টান ঐতিহাসিকদের মতে উদ্বাস্তু মুসলিমের সংখ্যা ছিল ৭০ হাজার। 


সুলতান আইয়ুবি বায়তুল মুকাদ্দাসের সেই অবমাননার কাহিনী তার পিতা নাজমুদ্দিন আইউব থেকে শুনতেন , নাজমুদ্দিন তার পিতার কাছ থেকে শুনতেন। পরে সুলতান এই কাহিনী তার নিজের ছেলেদের বলতেন।

১১৮৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রবিবার মতাবেক ৫৮৩ সনের ১৫ রজব  সুলতান আইয়ুবি দ্রুত বায়তুল মুকাদ্দাস পৌঁছে যান, অবরোধ করেন বায়তুল মুকাদ্দাস। এদিকে খৃষ্টানরাও তাদের পবিত্র ভুমি ছাড়তে নারাজ। তারাও আমরন লরাইয়ের জন্য প্রস্তুত। সেখানকার প্রায় সব মুসলিমই বন্দি। তারা জেলের ভিতর থেকেই আজান আর তাকবীর ধ্বনি দিচ্ছেন। অনুরূপ খৃষ্টানরাও গির্জায় গান গাইছে ও প্রার্থনা করছে। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। দুই পক্ষই দুই পক্ষকে আহত নিহতকরে চলছে। শহিদদের সংখ্যা গোনে সুলতান আইয়ুবি টাস্কি খেয়ে যান। পরে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে ৫৮৩ হিজরীর ২৭ রজব মোতাবেক ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দ ২ অক্টোবর শুক্র বার সালাহুদ্দীন আইয়ুবি বিজয়ী বেশে বায়তুল মুকাদ্দাস প্রবেশ করেন। এটিই ছিল সেই রাত যেদিন আমাদের প্রিয় নবী রাসুল (সাঃ) বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে মিরাজে গমন করেন। J J

বায়তুল মুকাদ্দাস মুক্ত হয়ার পর সেখানকার মুসলিমরা প্রায়  ৯০ বছর পর ক্রুসেডারদের অত্যাচার থেকে রেহাই পেল।



ইংল্যান্ডের সম্রাট রিচার্ড যাকে ''ব্লাক প্রিন্স'' বলা হত সে এর প্রতিশোধ নিতে  ৫২০ যুদ্ধ জাহাজ ও অনেকগুলো মালবাহী বড় জাহাজ নিজে রোম সাগর আসে। তখনই  ঝড়ের কবলে পরে প্রায় অনেক জাহাজ তলিয়ে যায়। যা বাকি থাকে তা দিয়েই সে বায়তুল মুকাদ্দাস আবার দখল করতে আসে। তখন তার সৈন্য ছিল ২লাখ।

সুলতান চাচ্ছিলেন তারা যেন আগে উপকূলীয় অঞ্চল আক্রা অবরোধ করে, এতে করে তাদের সেখানেই ব্যস্ত রেখে শেষ করে দিতে পারলে বায়তুল মুকাদ্দাস রক্ষা করা যাবে।

রিচার্ড যখন আক্রা আগমন করে  তারও আগেই তার জোট ভুক্ত রাষ্ট্ররা আক্রা অবরোধ করে। রক্ত ক্ষয়ী ও দীর্ঘ যুদ্ধের পর সকলে মিলে প্রায় ৬ লাখেরও বেশি সৈন্য নিয়ে আক্রা দখল করে নেয়। এতে তারা দখলের পর আক্রার প্রায় ৩ হাজার নিরস্র মুসলিমের  হাত পা বেধে পিচাশের মত ঝাপিয়ে পরে হত্যা করে।

রিচার্ড আক্রা দখলের পর উপকূলীয় বাকি অঞ্চল আসকালান ও হিফা দখল করতে যায়, যেন সেগুলোকে দখল করে ক্যাম্প বানিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাস দখল করা সম্ভব হয়। কিন্ত তারা যেন সেটা করতে না পারে তার জন্য সুলতান আইয়ুবি আগেই সেখান থেকে জনগনকে  সরিয়ে সেগুলোকে পোড়ে  ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেন। পড়ে ক্রুসেডাররা সেখানে যেয়ে আর কিছু পায় নি। শেষে একসময় রিচার্ড অসুস্থ হয়ে পরলে সে যুদ্ধ ত্যাগকরে নিজ দেশে চলে যায়, আর বলে যায় সে আবার আসবে বায়তুল মুকাদ্দাস দখল করতে। কিন্তু পরে আর কেউ পারেনি বায়তুল মুকাদ্দাস দখল করতে।



কিন্তু না, ইসলামিক খিলাফতের শেষের দিকে যখন মুসলিম আমিররা ক্রুসেডারদের সাথে বন্ধুত্বের কথা বলে মূলত তাদের দাসত্বকে গ্রহণ করল। তখনই ক্রুসেডাররা আবারো তুচ্ছ ও সংকীর্ণমনা  জাতীয়তাবাদের নীতিতে ইসলামিক রাষ্ট্রকে ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করে দিল। আবারো ক্রুসেডাররা ফিলিস্তিনে ইহুদীদের প্রবেশের মাধ্যমে মূলত নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করল। সেখানে মুসলিমদের হত্যা করল, তাদের নিজ ভুমি থেকে ছাড়া করল, গঠন করল সেখানে ইসরাইল রাষ্ট্র, আর সেটা কতিপয় নাম ধারি মুসলিম শাসকদের কারনেই সম্ভব হয়েছিল।

১১৯৩ সালের ৪ মার্চে অবশেষে ইসলামের মহান নেতা সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবি ইন্তিকাল করেন। সেদিন সমগ্র ফিলিস্তিনের নারী-পুরুষ তাদের ঘর থেকে রাস্তায় বেরিয়ে তাদের সুলতানের জন্য মাতম করছিল। নগরীর অলিতে-গলিতে  কান্নার রোল বয়ে যাচ্ছিল। আজও সেই কান্নার রোল শোনা যায় সেই ফিলিস্তিনের অলিতে গলিতে আজও তারাতাদের সেই সালাহুদ্দীন আইয়ুবিকেই খুজছে ক্রুসেডারদের অত্যাচার থেকে তাদের মুক্তিরজন্য।   

অবশেষে ১৯২৪ সালের ৩ মার্চ ক্রুসেডাররা ইসলামের সর্বশেষ খিলাফত থাকা অঞ্চল তুরস্ক থেকেও খিলাফতকে ধ্বংস করল। লর্ড কার্জন বলল, আমরা মুসলিমদের মেরুদণ্ড খিলাফতকে ধ্বংস করে দিয়েছি, তারা আর দাড়াতে পারবে না । তারা সেই সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবির কবরে  লাথি মেরে বলল, উঠো সালাহুদ্দীন, তোমার বায়তুল মুকাদ্দাসকে রক্ষা কর। আর আমরা কি করলাম?  পেরেছি কি সেই খিলাফতকে পুনঃ প্রতিষ্ঠা করতে?  পেরেছি কি সেই বায়তুল মুকাদ্দাস কে রক্ষা করতে?
 


[রেফারেন্সঃ ইমানদীপ্ত দাস্তান ...... এনায়াতউল্লাহ আলতামাশ, প্রখ্যাত উর্দু উপন্যাসিক]

12:17 PM Posted by Just for you 0