অ্যাসাঞ্জ নয় উইকিলিকস নায়ক ব্রাডলি ম্যানিং
সেই নায়ক হলেন একজন আমেরিকান। তোমাকে বধিবে যে গোকূলে বেড়েছে সে- কথাটির এক সার্থক চরিত্র হলেন ব্রাডলি ই ম্যানিং। ১৯৮৭ সালের ১৭ই ডিসেম্বর তার জন্ম। মার্কিন সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে তিনি কর্মরত ছিলেন। গত বছরের মে মাসে সেখানেই তাকে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ ওঠে যে, তিনিই অ্যাসাঞ্জ প্রতিষ্ঠিত উইকিলিকসের কাছে কিছু সংরক্ষিত তথ্য পাচার করেছেন। ওই বছরের জুলাইয়ে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়। বলা হয়, তিনি জাতীয় প্রতিরক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তথ্য নিজের কম্পিউটারে স্থানান্তর করেন এবং পরে তা এক অননুমোদিত সূত্রের কাছে তুলে দেন। ২০১১ সালের মার্চে তার বিরুদ্ধে ২২টি অতিরিক্ত অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘শত্রুকে সহায়তাদান’ বা এইডিং দি অ্যানিমি। মার্কিন আইনে এটা গুরুতর অপরাধ তবে সরকারি কৌঁসুলিরা এজন্য তার মৃত্যুদণ্ড চায়নি। গত এপ্রিলে এটা সাব্যস্ত হয়, ম্যানিং কোর্ট মার্শালের জন্য উপযুক্ত। তবে এখনও তার মামলার শুনানি শুরু হয়নি। কিন্তু ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মহলে তাকে নিয়ে ঝড় উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে নিরাপত্তা হেফাজতে তার বিরুদ্ধে চলছে নিষ্ঠুরতম নির্যাতন ও নিপীড়ন। এ নিয়ে মার্কিন সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন অধিকার গ্রুপ নানা ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহতভাবে পালন করে চলেছে। ২০০৯ সালের অক্টোবরে তাকে বাগদাদের কাছে দশম মাউন্টেইন ডিভিশনে নিয়োজিত করা হয়েছিল। সেখানেই তিনি সিক্রেট ইন্টারনেট প্রটোকল রুটার নেটওয়ার্কে অনুপ্রবেশ করতে সমর্থ হন। ওই প্রটোকল শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারই ব্যবহার করে থাকে। আদ্রিয়ান ল্যামো একজন কম্পিউটার হ্যাকার। এফবিআইর জিজ্ঞাসাবাদকালে ল্যামো বলেন, ২০১০ সালের মে মাসে অনলাইন চ্যাটে ম্যানিং তাকে অবহিত করেছিলেন, ওই সিক্রেট নেটওয়ার্ক ভেদ করে ডাউনলোড করা কিছু তথ্য তিনি উইকিলিকসকে দিয়েছিলেন। এবং সেসব তথ্য উইকিলিকসের আড়াই লাখ ডিপ্লোমেটিক কেবলের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে জুলাই ২০০৭ বাগদাদে ও আফগানিন্তানে মে ২০০৯ সালে পরিচালিত দুটো গোপন বিমান হামলার ভিডিও ফুটেজও রয়েছে।
ম্যানিংকে জুলাই ২০১০ সালে ভার্জিনিয়ার একটি সেনা শিবিরে এমন অবস্থায় রাখা হয় যাকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, নির্দয় ও অমানবিক অন্তরীণ। তাকে আসলে নির্জন সেলে রাখা হয়। গত এপ্রিলে ২৯৫ জন আইনি বুদ্ধিজীবী ও দার্শনিক এক বিবৃতিতে তার নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, তার সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে তাতে মার্কিন সংবিধানের লঙ্ঘন করার সমতুল্য। এরপর এপ্রিলের শেষ দিকে পেন্টাগন তাকে কানসাসে একটা মধ্যম মানের ডিটেনশন সেন্টারে স্থানান্তর করে। এখানে তাকে বিচারের অপেক্ষায় থাকা অন্যান্য কয়েদির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার সুযোগ দেয়া হয়।
ওকলাহামার ক্রিসেন্টে জন্ম নিয়েছিল ম্যানিং। তিনি তার মায়ের সূত্রে বৃটিশ। ১৯৫৩ সালে ইংল্যান্ডের ওয়েলসে তার মা সুসান ফক্সের জন্ম। ম্যানিংয়ের বাবা ছিলেন আমেরিকান নেভিতে। একবার তার বদলি হয় ওয়েলসের একটি সেনা ছাউনিতে। সেখানেই তাদের পরিচয় ঘটে। তবে ম্যানিং বেড়ে ওঠেন ক্রিসেন্ট শহরে। সেখানে তার পিতা অবসর জীবনে একজন ইনফরমেশন টেকনোলজি ম্যানেজার ছিলেন। শিশু ম্যানিংকে শৈশবেই কম্পিউটার খুব টেনেছিল। তিনি কম্পিউটারে গেম খেলতেন। বয়সের তুলনায় তিনি খুব বেড়ে উঠেননি। ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। ওজন ৪৭.৬ কেজি। স্যাক্সোফোন ও সায়েন্স ছিল তার প্রিয় বিষয়। খুব ছোটবেলায় তিনি বলতেন, বড় হয়ে তিনি মার্কিন সমারিক বাহিনীতে যোগ দেবেন। সৈনিকের জীবন তার পছন্দ। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তার জীবনে বিরাট ছন্দপতন ঘটে। কারণ, তারা বাবা ও মায়ের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়। তালাকের পরে সুসান ফক্স ওয়েলসে ফিরে আসেন। তাদের এক প্রতিবেশী বলেন, আমেরিকার জীবন সুসানের কখনও পছন্দ ছিল না। আর তার বাবা চাকরি সূত্রে দূরেই থাকতেন। এর ফলে ব্রাডলির মধ্যে একাকিত্ব তৈরি হয়। তিনি একা একা বেড়ে ওঠেন। এবং তার চারপাশের জগত বলতে ছিল কম্পিউটার। দুপুরে খাবার সময় তাকে দেখা যেত কম্পিউটার ল্যাবে। নিজের জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরির কাজে ব্যস্ত। স্কুলে ধর্ম বিষয়ে তিনি ছিলেন নিরাসক্ত। গডের নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য গ্রহণের শপথকালে তিনি তা উচ্চারণ করতেন না। চুপ করে থাকতেন। বাইবেল বা ধর্মকে তিনি প্রকাশ্যে নাকচ করেছিলেন। বরং, ১৩ বছর বয়সেই ম্যানিং তার যৌন বিষয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করেন। ম্যানিং ইংল্যান্ডে ফিরে ওয়েলসের হ্যাভারফোর্ডওয়েস্টে টাস্কার মিলওয়ার্ড স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে তার বিড়ম্বনা কম ছিল না। সহপাঠীরা তাকে একটু ভিন্ন চোখে দেখতো। কারণ ম্যানিং একজন আমেরিকান। তার ইংরেজি উচ্চারণ ভিন্নতর। তাকে স্কুলে বুলিইং বা উৎপীড়ন-গঞ্জনা সইতে হয়। ডেনভার নিকস লিখেছেন, ওকলাহামায় তিনি সহপাঠীদের কাছে নিজকে একজন গে হিসেবে প্রকাশ করলেও ইংল্যান্ডে তা চেপে যান। ওয়েলসের জীবনে তিনি শিগগিরই হাঁফিয়ে ওঠেন। এবং পিতার কাছে ফেরার সংকল্প করেন। ম্যানিং তার পিতার দ্বিতীয় স্ত্রী অর্থাৎ সৎ মায়ের সঙ্গে বসবাসকে মেনে নেন। ওকলাহামায় ফিরে ম্যানিং একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে কাজ নেন। এবং এ জীবন তার খুবই ভাল লেগে যায়। কিন্তু তার মেয়াদ ছিল মাত্র চার মাস। তিনি আবার অস্বস্তিতে ভুগতে থাকেন। ২০০৬ সালের মার্চে ম্যনিং কথিত মতে তার সৎ মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করেন। এমনকি তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে কসাইয়ের ছুরি হাতে তার দিকে ছুটে যান। তার সৎ মা পুলিশ ডাকেন। পুলিশ তাকে এসকর্ট করে নিয়ে যায়। ওয়াশিংটন ডিসিতে থাকতেন তার ফুফু দেবরা ম্যানিং। তার কাছে যাওয়ার আগে ব্রাডলিকে দেখা গেছে তার পিতার দেয়া একটি পিকআপ টাইপের গড়িতে জীবনযাপন ও অনেক কম মজুরির কাজ করতে।
২০০৭ সালের অক্টোবরে ম্যানিং সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ২০০৮ সালের এপ্রিলে স্নাতক সম্পন্নের পরে তাকে অ্যারিজোনায় বদলি করা হয়। সেখানে তিনি একজন গোয়েন্দা অ্যানালিস্ট হিসেবে তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। নিকস লিখেছেন, এ সময় তাকে তিরস্কার করা হয়েছিল। কারণ ম্যানিং ইউ টিউবে তার এক বন্ধুর কাছে এমন তথ্য দিয়েছিলেন যা তার আচরণবিধির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। তিনি দৃশ্যত সংবেদনশীল তথ্য ইউ টিউবে প্রকাশ করেন। ২০০৮ সালের আগস্টে ম্যানিং ছিলেন ইরাকের পথে নিউ ইয়র্কে অপেক্ষমাণ। এ সময় তার সঙ্গে ওয়াটকিনসের সঙ্গে পরিচয় হয়। সে সম্পর্ক গভীর বন্ধুত্বে গড়ায়। ফেসবুকে তারা নিয়মত যোগাযোগ রক্ষা করেন। বোস্টনের কাছে ব্রান্ডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়তেন। ম্যানিং সেখানে নিয়মিত যেতেন। ম্যানিং সে সুবাদে কম্পিউটার বিজ্ঞানী ডেভিড হাউসের সঙ্গে পরিচিত হন। নিউ ইয়র্ক ম্যাগাজিনে স্টিভ ফিশম্যান লিখেছেন, এ সময়টাতে ম্যানিংয়ের বৈকল্য ফুটে উঠতে থাকে। তিনি একজন গে হিসেবে সবার সন্দেহভাজন হতে শুরু করেন। রুমমেটরা তাকে অপছন্দ করতে শুরু করেন। জ্যেষ্ঠরা তাকে ভর্ৎসনা করেন। ২০০৯ সালের আগস্টে তাকে সামরিক হাসপাতালের একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে তাকে পাঠানো হয়। মাঠে মোতায়েনের জন্য তার যোগ্যতা প্রশ্নসাপেক্ষ হওয়া সত্ত্বেও তাকে ইরাকে পাঠানো হয় বলে দাবি করা হয়। ম্যানিং সেখানে নিজকে খাপ খাওয়াতে পারেননি। এবিসি নিউজের এক খবরে বলা হয়, অফিসাররা তার মধ্যে এক ধরনের অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেন। তার আচরণগত ঝামেলার কারণে তাকে চার্চে পাঠানো হয়। সেটা ছিল ২০০৯ সালের নভেম্বর। ওই সময়ে তিনি একজন নারী কর্মকর্তাকে ঘুষি মারেন। ফলে তার পদাবনতি ঘটে। ‘স্পেশালিস্ট’ পদমর্যাদা থেকে তাকে ‘প্রাইভেট’ হিসেবে নামিয়ে আনা হয়। তবে ওই নভেম্বর মাসেই তিনি কিন্তু প্রথম উইকিলিকসের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। আর এ সময়েই তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক মনোরোগ চিকিৎসককে লিখেছেন, তিনি তার শরীরে একটা পরিবর্তন অনুভব করেন। এই পরিবর্তনটা একজন নারীর। তিনি এজন্য অস্ত্রোপচার করতে আগ্রহী। ওই চিকিৎসক পরে বলেন, কোন সন্দেহ নেই যে ম্যানিং একটা সঙ্কটে ছিলেন। তবে ওই চিকিৎসকের একটি ভাষ্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তার মতে, মানসিক একটার টানাপড়েন তার ছিল। তবে সে সঙ্গে তার আরেকটি বোধ তীক্ষ্ন ছিল। আর সেটা হলো ইরাকের প্রতি মার্কিন নীতির তিনি বিরোধী ছিলেন। তার মতে এটা ছিল একটি অন্যায় যুদ্ধ। অথচ ম্যানিং হঠাৎ লক্ষ্য করেন তিনি সে অন্যায় যুদ্ধের অংশে পরিণত হয়েছেন।
অ্যাসাঞ্জ উইকিলিকস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ২০০৬ সালের শেষ দিকে। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, মার্কিন সরকার খতিয়ে দেখছে যে, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ যেসব কেবলস বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছেন সেটা আসলে ব্রাডলি ম্যানিংয়ের হাত ঘুরে এসেছে কিনা। কিংবা অ্যাসাঞ্জ তাকে উৎসাহিত বা সহায়তা করেছে কিনা। সেটা প্রমাণ করা গেলে মার্কিন সরকার অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনতে পারেতো।
উল্লেখ্য, সবরকমের চেষ্টা চালানো হয়েছে যাতে ম্যানিংয়ের সঙ্গে অ্যাসাঞ্জের মধ্যে কোন যোগসূত্র স্থাপন করা যায় কিনা। কিন্তু এ পর্যন্ত সে রকম কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গত জানুয়ারিতে এনবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন সরকার এরকম কোন ‘প্রত্যক্ষ সংযোগ’ পায়নি। তবে ম্যানিং তার অনলাইন চ্যাটে বন্ধু লিমোকে লিখেছিলেন, অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে তার যোগাযোগ ঘটেছিল। কিন্তু অ্যাসাঞ্জ সম্পর্কে তিনি বেশি কিছু জানতেন না। তবে এমন কথা শুধু লিমোই বলেছে। আর এফবিআই ওই চ্যাটের লগ সংবলিত কম্পিউটার হার্ডডিস্ক ইতিমধ্যে জব্দ করে নিয়েছে।
ব্রাডলি ম্যানিংয়ের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর কিছু তথ্য যথেষ্ট প্রচারিত হলেও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বব্যাপী তার প্রস্তাবিত কোর্ট মার্শালের দিকে বিরাট নজর রয়েছে। তাকেই বলা হচ্ছে উইকিলিকস হুইচেল ব্লোয়ার। যদিও তার বিরুদ্ধে উইকিলিকসের কাছে কূটনৈতিক কেবলস ফাঁস করার দায়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়নি। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের মধ্যে দুটো ভিডিও ফুটেজ উইকিলিকসের কাছে হস্তান্তরের কথাই শুধু আছে। তবে আদ্রিয়ান ল্যামোর দিকেই সবার নজর এখনও তীক্ষ্ন হয়ে আছে। ল্যামো একজন আমেরিকান দণ্ডিত হ্যাকার। তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমসের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হ্যাক করে ধরা পড়েন। ল্যামোও বয়সে তরুণ। তারা সমবয়সী। অনলাইন চ্যাটে ল্যামোকে ম্যানিং বলেছেন- আচ্ছা, তুমি যদি দিনের মধ্যে ১৪ ঘণ্টা, সপ্তাহের পুরোটা সময় কিংবা টানা আট মাসের বেশি সময় মার্কিন সরকারের সিক্রেট নেটওয়ার্কে প্রবেশের অবারিত সুযোগ পাও তাহলে তুমি কি করবে? এ সময় ম্যানিং তাকে আরও বলেন, তিনি উইকিলিকসকে সাহায্য করা শুরু করেন ২০০৯ সালের নভেম্বরে। তখন উইকিলিকস সবে ৯/১১ সংক্রান্ত পেজার দলিলগুলো প্রকাশ করেছে। এগুলো দেখে ম্যানিং বুঝতে পারেন এগুলো একটি এনএসএ ডাটাবেজ থেকে এসেছে। আর তাকে তা ভীষণ আন্দোলিত ও উৎসাহিত করে। বিশেষ করে ল্যামোকে ম্যানিং বলেন, ‘মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও সারা বিশ্বে তার কয়েক হাজার কূটনীতিকের হার্ট অ্যাটাক হতে চলেছে। কারণ তারা একদিন সকালে ঘুম ভেঙে জানতে পারবেন যে, তাদের সাধের অতি গোপনীয় কূটনৈতিক কেবলগুলো ইন্টারনেটে পৃথিবীসুদ্ধ মানুষের চোেেখর সামনে দুলছে। যেখানেই মার্কিন কূটনৈতিক মিশন রয়েছে সেখানেই ঘটে যাবে একটি করে কূটনৈতিক কেলেঙ্কারি। ল্যামো এ সময় প্রশ্ন করেন, আচ্ছা দলিলগুলোর বিষয়বস্তু কেমন হতে পারে? উত্তরে ম্যানিং নির্বিকারি চিত্তে বলেছিলেন, উম। ক্রেজি। ‘অলমোস্ট ক্রিমিনাল পলিটিক্যাল ব্যাডডিলিংস।’
ব্রাডলি ম্যানিংয়ের বিচারে যা হবার তা হবে। তার বৃটিশ মায়ের তদবিরে বৃটিশ সরকারও মার্কিন সরকারকে অনুরোধ করেছে যাতে কারা জীবনে তার মানবাধিকার সমুন্নত থাকে। জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার কিন্তু ম্যানিংয়ের বিষয়ে তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তার অধিকার সুরক্ষায় সারাবিশ্বে প্রবল জনমত গড়ে উঠেছে। মার্কিন সরকারকেও সময়ে বিবৃতি দিয়ে বলতে হচ্ছে, তার প্রতি অন্যায্য আচরণ করা হচ্ছে না। যদিও গত মার্চে কারাগার থেকে লেখা তার ১১ পৃষ্ঠার চিঠিতে তার প্রতি যন্ত্রণাদায়ক আচরণ ও কষ্টের কথাই ফুটে উঠেছে।
সম্প্রতি তার আইনজীবী ডেভিড ই কুম্বস বলেছেন, ভার্জিনিয়ার ৬ বাই ১২ ফুট নির্জন কারা প্রকোষ্ঠে তার দিন কাটছে। সকাল ৫টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত তাকে ঘুমিয়ে পড়তে দেয়া হয় না। অন্য কয়েদিদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন তবে সরাসরি নয়। কাঁচের আড়াল থেকে। একটি বই ও একটি ম্যাগাজিন পড়তে দেয়া হয়। তিনি সম্প্রতি বিখ্যাত দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট লিখিত ‘ক্রিটিক অব পিওর রিজন’ (১৭৮১) নিয়েছেন। তবে তরুণ ব্যাডলি ম্যানিংয়ের বিচারে যাই ঘটুক না কেন, তিনিই হয়তো ইতিহাসে একদিন একবিংশ শতাব্দীর প্রেসফ্রিডমের নতুন নায়ক হিসেবে চিত্রিত হতে পারেন।
উইকিলিকসের মাধ্যমে ফাঁস হওয়া কেবলসগুলো যে ধরনের সুনামি সৃষ্টি করেছে তার সঙ্গে যে ব্রাডলি বর্ণিত ‘অলমোস্ট ক্রিমিনাল পলিটিক্যাল ব্যাডডিলিংস’ অবস্থার মিল রয়েছে সে বিষয়ে ভারতের অনেক পর্যবেক্ষকই হয়তো একমত না হয়ে পারবেন না।
Copy From
0 comments:
Post a Comment