TOP NEWS

Friday, December 17, 2010

কোরআনে শব্দ ও আয়াতের পুনরাবৃত্তি রহস্য-১


কোরআন শরীফে সুরা “আল ফজর” এর ৭ নম্বর আয়াতে “ইরাম” নামক একটি গোত্র কিংবা শহরের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু “ইরাম” এর নাম কোন ইতিহাসে পাওয়া যায় না। তাই কোরআন শরীফের তাফসীরকারকরাও সুস্পষ্টভাবে এ শব্দটির অর্থ বলতে সক্ষম হননি।
১৯৭৩ সালে সিরিয়ার “এরলূস” নামক একটি পুরনো শহরে খনন কার্যের সময় কিছু পুরনো লিখন পাওয়া যায়।
এ সমস্ত লিখন পরীক্ষা করে সেখানে চার হাজার বছরের একটি পুরনো সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে। এ লিখনগুলোর ভেতর “ইরাম” শহরের উল্লেখ আছে। একসময় এরলুস অঞ্চলের লোকজন “ইরাম” শহরের লোকজনের সংগে ব্যবসা-বানিজ্য করতো। এ সত্যটা আবিষ্কৃত হলো মাত্র সেদিন অর্থাৎ ১৯৭৩ সালে। প্রশ্ন হচ্ছে, দেড় হাজার বছর আগে নাযিল করা কোরআন শরীফে এই শহরের নাম এলো কি করে? আসলে কোরআন শরীফ হচ্ছে আল্লাহর বাণী, আর আল্লাহ তাআলা এখানে “ইরাম” শহরের উদাহরণ দিয়েছেন।
কোরআন শরীফে হযরত মোহাম্মদ (স.) এর একজন দুশমনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, সে হচ্ছে আবু লাহাব। ওহী নাযিল হওয়ার পর যদি আবু লাহাব ইসলাম কবুল করতো তাহলে কোরআন শরীফের আয়াতটি মিথ্যা প্রমানিত হতো, কিন্তু আবু লাহাব ইসলাম কবুল করেনি এবং কোরআন শরীফের বাণী চিরকালের জন্য সত্য হয়েই রয়েছে।
কোরআন শরীফে সুরা “আর রোম” –এ পারস্য সম্রাজ্য ধ্বংসের ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছে এবং যে সময় এই ওহী নাযিল হয় তখন মানুষের পক্ষে বিশ্বাস করা অকল্পনীয় ছিল যে, রোমকদের যারা পরাজিত করলো তারা অচিরেই তাদের হাতে ধ্বংস হতে পারে , কিন্তু কোরআন শরীফ এ বিষয়ে ভবিষ্যৎবাণী করেছে এবং এ আয়াত নাযিল হবার ৭ বছর সময়ের মধ্যে অর্থাৎ ৬২৭ খ্রীস্টাব্দে এসে সত্য প্রমানিত হয়েছে।
এ আয়াতে “ফি আদনাল আরদ” বলে আল্লাহ তায়ালা গোটা ভূ-মণ্ডলের যে স্থানটিকে “সর্বনিম্ন অঞ্চল” বলেছেন তা ছিলো সিরিয়া, ফিলিস্তিন ও জর্দানের পতিত “ডেড সী” এলাকা। এ ভূখন্ডতেই ৬২৭ খ্রীস্টাব্দে রোমানরা ইরানীদের পরাজিত করে। মাত্র কিছুদিন আগে আবিস্কৃত ভূ-জরিপ অনুযায়ী এটা প্রমানিত হয়েছে যে, এই এলাকাটা সারা দুনিয়ার মধ্যে আসলেই নিম্নতম ভূমি। “সী লেভেল” থেকে ৩৯৫ মিটার নীচে। এ জায়গাটা যে গোটা ভূ-খন্ডের সবচেয়ে নিচু জায়গা এটা ১৪ শ বছর আগের মানুষেরা কি করে জানবে। বিশেষ করে এমন একজন মানুষ যিনি ভূ-তত্ব প্রাণীতত্ত্ব ইত্যাদী কোন তত্ত্বেরই ছাত্র ছিলেন না।
কোরআনের আরেকটি বিষ্ময়কর বিষয় হচ্ছে লোহা ধাতুর বিবরণ। কোরআনের সুরা “আল হাদীদ” এ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “আমি লোহা নাযিল করেছি, যাতে রয়েছে প্রচুর শক্তি ও মানুষদের জন্যে প্রভূত কল্যাণ ।” লোহা নাযিলের বিষয়টি তাফসীরকারকরা নানাভাবে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন; কিন্তু যেখানে আল্লাহ তায়ালার স্পষ্ট “নাযিল” শব্দটি রয়েছে সেখানে এত ব্যাখ্যা বিশ্লেষনের দিকে না গিয়ে আমরা যদি কোরআনের আক্ষরিক অর্থের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো, আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভাবনীও ঠিক একথাটাই বলছে। পদার্থবিজ্ঞানীরা বলেন, লোহা উৎপাদনের জন্য যে ১৫ লক্ষ সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন তার কোনো উপকরণ আমাদের পৃথিবীতে নেই। এটা একমাত্র সূর্যের তাপমাত্রা দ্বারাই সম্ভব। হাজার হাজার বছর আগে সূর্যদেশে প্রচন্ড বিস্ফোরণের ফলে লোহা নামের এ ধাতু মহাশূন্যে ছিটকে পড়ে। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে তা পৃথিবীতে “নাযিল” হয়। লোহা সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞানের আবিস্কৃত তথ্য ঠিক একথাটাই প্রমাণ করেছে। দেড় হাজার বছর আগের আরব বেদুইনরা বিজ্ঞানের এই জটিল তথ্য জানবে কি করে?
এই সুরার আরেকটি অংকগত মোজেযাও রয়েছে। ক্রমিক নম্বর অনুযায়ী “সুরা আল হাদীদ” কোরআনের ৫৭ তম সুরা। আরবীতে “সুরা আল হাদীদ” –এর সংখ্যাগত মান হচ্ছে ৫৭ । শুধু “আল হাদীদ” শব্দের অংকগত মান হচ্ছে ২৬, আর লোহার আনবিক সংখ্যা মানও হচ্ছে ২৬ ।
(চলবে)

তথ্যসূত্রঃ
আল কোরআন একাডেমী, লন্ডন থেকে প্রকাশিত হাফেজ মুনীর উদ্দীন আহমদ এর “কোরআনের সহজ সরল বাংলা অনুবাদ” বইয়ের ২১ নং পৃষ্ঠা।

0 comments: