কোরআনে শব্দ ও আয়াতের পুনরাবৃত্তি রহস্য-২ : অংকগত মোজেযা
কোরআনে অনেক জায়গায়ই একের সংগে অন্যের তুলনা উপস্থিত করা হয়েছে। এই তুলনা উপস্থিত করার ব্যাপারে একটি অবিশ্বাস্য মিল অবলম্বন করা হয়েছে এবং তা হচ্ছে, সে দুটি নাম বা বস্তুকে সমান সংখ্যাতেই আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন। যেমন, কোরআন শরীফের সুরা “আল-ইমরান” এর ৫৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “আল্লাহ তাআলার কাছে ঈসার তুলনা হচ্ছে আদমের মতো” ।
এটা যে সত্য আমরা বুঝতে পারি। কারণ মানবজন্মের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এদের কারোরই জন্ম হয়নি। এই তুলনাটি যে কতো সত্য তার প্রমান পাওয়া যায় যখন আমরা কোরআন শরীফে এ দুটি নামের মোট সংখ্যা অনুসন্ধান করি। দেখা যাচ্ছে , কোরআন শরীফে ঈসা (আ.) নামটি যেমন ২৫ বার এসেছে, তেমনি আদম (আ.) নামটিও এসেছে ২৫ বার। কোরআনের বাণীগুলো যে মানুষের নয় তা বোঝা যায় এ দুটি নামের সংখ্যার সমতা দেখে। আল্লাহ তায়ালা যেহেতু বলেছেন এ দুটো একই রকম। তাই সেগুলোর সংখ্যা গণনাও ঠিক একই রকম রাখা হয়েছে।
এই তুলনার ক্ষেত্রে আরেকটি অলৌকিক বিষয় হলো, যেখানে তুলনাটি অসম সেখানে সংখ্যা দুটিকেও অসম বলা হয়েছে। যেমন, কোরআনে বলা হয়েছে, “সুদ” এবং বাণিজ্য এক নয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি, একটি কোরআনে এসেছে ছয়বার অন্যটি এসেছে সাতবার।
বলা হয়েছে, “জান্নাতের অধিবাসী, জাহান্নামের অধিবাসী সমান নয়”। জান্নাতের সংখ্যা হচ্ছে আট আর জাহান্নামের সংখ্যা হচ্ছে সাত।
সূরা “আরাফ” -এ এক আয়াতে আছে “যারা আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে তাদের উদাহরণ হচ্ছে কুকুরের মতো ”। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যেতে হয় যখন আমরা দেখি, ““যারা আমার সুস্পষ্ট আয়াতকে অস্বীকার করে” এই বাক্যটি কোরআনে সর্বমোট ৫ বার এসেছে। যেহেতু তাদের উদাহরণ দেয়া হয়েছে কুকুরের সাথে, তাই সমগ্র কোরআনে “আল কালব” তথা কুকুর শব্দটাও এসেছে ৫ বার।
“সাবয়া সামাওয়াত” কথাটির অর্থ হলো “সাত আসমান”। আশ্চর্যের বিষয় হলো, কোরআনে এই “সাত আসমান” কথাটা ঠিক সাত বারই এসেছে। “খালকুস সামাওয়াত” আসমানসমূহের সৃষ্টি কথাটাও ৭ বার এসেছে, সম্ভবত আসমান ৭ টি তাই। “সায়াতু আইয়াম” মানে ৭ দিন। একথাটাও কোরআনে ৭ বার এসেছে।
অংকগত মোজেযা এখানেই শেষ নয়।
“দুনিয়া ও আখেরাত” এ দুটো কথাও কোরআনে সমান সংখ্যায় এসেছে, অর্থাৎ সর্বমোট ১১৫ বার করে।
“ঈমান ও কুফর” শব্দদুটো সমপরিমানে বলা হয়েছে, অর্থাৎ ২৫ বার করে।
“গরম” ও “ঠান্ডা” যেহেতু দুটো বিপরীতমুখী ঋতু, তাই এ শব্দ দুটো সমান সংখ্যায় এসেছে ১১৫ বার করে।
আরবী ভাষায় “কুল” মানে বলো, তার জবাবে বলা হয় “কালু” মানে তারা বললো। সমগ্র কোরআনে এ দুটো শব্দও সমান সংখ্যকবার এসেছে, অর্থাৎ ৩৩২ বাড় করে।
“মালাকুন” কিংবা “মালায়েকা” মানে ফেরেশতা কিংবা ফেরেশতারা। কোরআনে এ শব্দটি এসেছে ৮৮ বাড়, একইভাবে ফেরেশতার চির শত্রু “শয়তান কিংবা “শায়াতীন” এ শব্দটিও এসেছে ৮৮ বার।
“আল খাবিস” মানে অপবিত্র, “আত তাইয়েব” মানে পবিত্র। সমগ্র কোরআনে এ দুটি শব্দ মোট ৭ বার করে, অর্থাৎ একই সংখ্যায় নাযিল হয়েছে।
প্রশ্ন জাগতে পারে ভালোর চাইতে মন্দই তো বেশী, তাহলে এ দুটো শব্দকে সমান রাখা হলো কিভাবে। এ কথার জবাবের জন্য সুরা আনফালের ৩৭ নং আয়াতটির দিকে লক্ষ্য করা যাক। এখানে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “অপবিত্রকে পবিত্র থেকে আলাদা করার জন্যে তিনি অপবিত্রকে একটার ওপর আরেকটা রেখে পুঞ্জীভূত করেন এবং সেগুলোকে জাহান্নামের আগুনে ফেলে দেন”। এতে বুঝা যায় যদিও “পাপ পূন্য” সমান সংখ্যায় এসেছে, কিন্তু “পুঞ্জীভূত” করা দিয়ে তার পরিমান যে বেশী তা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
(চলবে)
তথ্যসূত্রঃ
আল কোরআন একাডেমী, লন্ডন থেকে প্রকাশিত হাফেজ মুনীর উদ্দীন আহমদ এর “কোরআনের সহজ সরল বাংলা অনুবাদ” বইয়ের ২২ নং পৃষ্ঠা।
0 comments:
Post a Comment