TOP NEWS

Showing posts with label বোন আফিয়া. Show all posts

Thursday, November 1, 2012

বিজ্ঞানী ড. আফিয়া সিদ্দিকা আমেরিকার কারাগারে মৃত্যুর প্রহর গুণছেন



. আফিয়া সিদ্দিকা আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন স্নায়ু বিজ্ঞানী। অসামান্য ধীসম্পন্ন পি.এইচ.ডি ডিগ্রীধারী।. মহিলার সম্মানসূচক অন্যান্য ডিগ্রী সার্টিফিকেট রয়েছে প্রায় ১৪৪টি।। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রন্ডেইস বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে Neurology বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে।। তিনি হাফিযে কুরআন আলিমা। পবিত্র কুরআন হাদীসে পারদর্শিনী মহিলা ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত দ্বীনদার পরহেযগার। ইসলামী আদর্শ, ঐতিহ্য সংস্কৃতির প্রতি রয়েছে তাঁর স্ট্রং কমিটমেন্ট।। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফ.বি.আই পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় আল কায়েদার সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কথিত অভিযোগে ২০০৩ সালে . আফিয়াকে তাঁর তিন সন্তান আহমদ, সুলায়মান, মরিয়মসহ করাচীর রাস্তা থেকে অপহরণ করে। পাকিস্তানের কোন কারাগারে না রেখে এবং পাকিস্তানী আদালতে উপস্থাপন না করে পাঁচ বছর ধরে তাঁকে আফগানিস্তানের বাগরাম সামরিক ঘাঁটিতে বন্দী করে রাখা হয়।। এরপর চলে তাঁর উপর অমানুষিক শারীরিক, মানসিক যৌন নির্যাতন।। বাগরামে কুখ্যাত মার্কিন কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিরা বলেছেন, নির্যাতনের সময় একজন নারী বন্দির আর্তচিৎকার অন্য বন্দিদের সহ্যকরাও কষ্টকর ছিল। ওই নারীর ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে অন্য বন্দিরা অনশন পর্যন্ত করেছিল পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররাফের সম্মতিক্রমে এফ.বি.আই বিজ্ঞানীকে অপহরণ করার সুযোগ পায়।

২০০৮ সালে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় নিউইয়র্কের এক গোপন কারাগারে। বর্তমানে তিনি পুরুষদের সাথে ওই কারাগারে বন্দ।। কারাবন্দী নং ৬৫০।। অব্যাহত নির্যাতনের ধকল সইতে না পেরে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।। প্রথম থেকেই তিন সন্তানকে তাঁর থেকে পৃথক রাখা হয়।। এখনো তিনি জানেন না তাঁর সন্তনত্রয় কোথায়? তারা আদৌ বেঁচে আছেন কিনা। পাকিস্তানের তেহরিক--ইনসাফ দলের চেয়ারম্যান সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান দাবী করে বলেন তাঁর দুসন্তান ইতোমধ্যে মার্কিন নিয়ন্ত্রিত আফগান কারাগারে অত্যাচারে মারা গেছে।। তিনি আরো বলেন, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের মধ্যে যারা . আফিয়াকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হাতে তুলে দিয়েছেন, তাঁদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
নিউইয়র্কের একটি আদালত মার্কিন গোয়েন্দা সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা চেষ্টার দায়ে পাকিস্তানের মহিলা বিজ্ঞানীকে সম্প্রতি ৮৬ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।। যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষিত ৩৮ বছর বয়সী বিজ্ঞানীকে ২০০৮ সালে আফগানিস্তানে অজানা রাসায়নিক পদার্থ হামলা পরিকল্পনার নোটসহ কথিত অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল।। তাঁর বিরুদ্ধে সাতটি মামলা দায়ের করা হয।। অভিযোগে বলা হয়, আফগানিস্তানে আফিয়া তার সহকর্মীদের সঙ্গে এক মার্কিন সৈন্যকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করেন।। এরপর তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। সরকার পক্ষের আইনজীবীরা বলেন, আটক হওয়ার সময় আফিয়ার কাছে বোমা গুরুত্বপূর্ণ জায়গার মানচিত্র ছিল। ছাড়া তার কাছে সোডিয়াম সায়ানাইট ক্যাপসুলও পাওয়া যায়। থেকে প্রমাণ হয় তিনি একজন ভয়ংকর সন্ত্রাসী।। অন্যদিকে আফিয়ার আইনজীবীদের দাবি, তিনি সন্ত্রাসী নন, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিজ্ঞানী; বর্তমানে মানসিক রোগী। তবে রায়ের বিরুদ্ধে . আফিয়া সিদ্দিকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ আদালতে আপিল করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর আদালতে আপিল করেছি রায় ঘোষণার পর আফিয়া আদালতে বলেন, আমেরিকা নয়, ইসরাইল থেকে এসেছে রায়।। আমি আদালত বয়কট করি।। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ থেকে আমি যে নির্দোষ তা প্রমাণ করতে সক্ষম।। কিন্তু বিচারকের প্রতি আমার আস্থা নেই।। আর বিচারকও তাঁকে নির্দোষ প্রমাণের সুযোগ দেননি। তিনি আগেই বলেছিলেন, কোনো ইহুদি বিচারক থাকলে তিনি (আফিয়া) ন্যায়বিচার পাবেন না, ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন বিচারক নিয়োগ করা হোক। আদালতে প্রদত্ত তাঁর বক্তব্যে দৃঢ়তা নির্ভীকতার পরিচয় পাওয়া যায় (I can prove that I am innocent of all charges. I do not want Jews on the jury. I demand all prospective jurors be DNA-tested, and excluded from the jury at my trial: if they have a Zionist or Israeli background ... they are all mad at me ... I have a feeling everyone here is them—subject to genetic testing. They should be excluded, if you want to be fair. I do not trust the Judge. I’m boycotting the trial, just to let all of you know. There are too many injustices.)
নিউইয়র্কের আদালতে কেবল গজনীর ওই ঘটনারই বিচার হয়েছে। তাঁকে অপহরণ বা বাগরামে আটকে রাখা সংক্রান্ত অভিযোগের কোনো তদন্ত হয়নি। আফিয়া সিদ্দিকার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।। যদিও মার্কিন কর্মকর্তারা এর আগে বিভিন্ন সময়ে আল-কায়েদাকে অর্থায়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে হামলা পরিকল্পনার কথা বলে এসেছেন।। তাঁর আইনজীবী অভিযোগ করেছেন, আফিয়ার বিচার প্রক্রিয়ায় দ্বৈতনীতি অনুসরণ করেছে মার্কিন প্রশাসন।
একজন অসুস্থ মহিলাকে এত দীর্ঘ কারাদন্ড প্রদান করায় বিশ্বের সচেতন মানুষ স্তম্ভিত হয়েছেন। ।আমেরিকার মতো একটি শক্তিধর রাষ্ট্র একজন অসহায় মহিলার প্রতি এত ক্ষিপ্ত হলেন কেন ? আইনজীবীরা প্রশ্ন তুলেছেন . আফিয়া তো মার্কিন নাগরিক নন; আফগানিস্তানের ঘটনার কথিত অভিযোগে একজন পাকিস্তানী নাগরিককে আমেরিকায় স্থানান্তর করে সে দেশের আদালতে তাদের মর্জি মাফিক বিচার করা সাজা দেয়া কতটুকু আইন সম্মত ? এটা ন্যায় বিচার আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
. আফিয়া সিদ্দিকার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ সাজানো হয়। অভিযোগ পর্যালোচনা করলে বুঝা যাবে এটি পাতানো গল্প। বলা হচ্ছে ২০০৮ সালের জুলাইয়ে আফগানিস্তানের গজনী প্রদেশে আফিয়াকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় তিনি দুমার্কিন গোয়েন্দাকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করেন।। মার্কিন গোয়েন্দারা জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় ৩৮ বছর বয়সী আফিয়া একজন ওয়ারেন্ট অফিসারের এম- অ্যাসল্ট রাইফেল কেড়ে নিয়ে এফবিআই এজেন্ট সৈন্যদের গুলি করার চেষ্টা করেন ।। সময় মার্কিন সেনারা তাকে মেঝেতে ফেলে দিলে ধস্তাধস্তি হয় এবং ৯এম.এম পিস্তলের গুলি তার পায়ে লাগে। এতে মার্কিন এজেন্ট বা গোয়েন্দার কেউ হতাহত না হলেও আফিয়া গুলিবিদ্ধ হন। . আফিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগকারীর বক্তব্য হলো, তাঁকে গ্রেপ্তারের সময় তাঁর সঙ্গে থাকা হাতব্যাগ তল্লাশী করে মার্কিন স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা সম্বলিত কাগজপত্র, গজনীর মানচিত্র, রাসায়নিক অস্ত্র তৈরীর নিয়মাবলী রেডিওলজিক্যাল এজেন্ট সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায়। ব্রিটেনের দি ইন্ডিপেন্টেডেন্ট পত্রিকার সাংবাদিক রবার্ট ফিস্ক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ব্রন্ডেইস বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ডিগ্রীধারী একজন পাকিস্তানী-আমেরিকান তাঁর হাত-ব্যাগে করে মার্কিন স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা নিয়ে ঘুরছেনএটি কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য?
. আফিয়া সিদ্দিকাকে মার্কিন আদালতে ৮৬ বছর কারাদন্ড দেয়ায় পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি শহরের রাস্তায় রাস্তায় হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ইতোমধ্যে লাহোর হাইকোর্ট স্নায়ু বিজ্ঞানী . আফিয়া সিদ্দিকার মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানী বলেন, তাঁর মুক্তি নিশ্চিত করা এবং তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে পাকিস্তান।
অনেক পাকিস্তানিই মনে করেন, তিন সন্তানের জননী ৩৮ বছর বয়সি এই নারী যুক্তরাষ্ট্রেরসন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের' আরেক নির্দোষ শিকার। বিক্ষোভকারীদের একজন লাহোর হাই কোর্টের আইনজীবী আকসির আব্বাসি। তিনি অভিযোগ করেন, বিশ্বজুড়ে সব জায়গাতেই অভিযুক্তরাবেনেফিট অফ ডাউটবা সন্দেহাতীতভাবে দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত নির্দোষ বলে বিবেচিত বলে সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু আফিয়া তা পাননি বরং এক্ষেত্রে আদালত তা পেয়েছে এবং তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এটা বিচারপ্রক্রিয়ার মৌলিক নীতিমালার বিরোধী। তার আইনজীবীরা বলছেন, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার মতো অবস্থা নেই আফিয়ার। আইনজীবীদের একজন এলেইন শার্প বলছিলেন, ১৮ মাস ধরে নিঃসঙ্গভাবে আটক থাকার পর তিনি আর আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। শেষপর্যন্ত আমিই তাকে সাক্ষ্য দিতে দাঁড় করাতে পেরেছিলাম, কিন্তু তাকে প্রস্তুত করার জন্য আমি দুঘন্টারও কম সময় পেয়েছি।

করাচীর অত্যন্ত দ্বীনদার, সম্ভ্রান্ত অভিজাত পরিবারে . আফিয়া সিদ্দিকার জন্ম ১৯৭২ সালের মার্চ। তাঁর বাবা মুহাম্মদ সালেহ সিদ্দিকী ব্র্রিটেনে শিক্ষাপ্রাপ্ত একজন স্নায়ু বিজ্ঞানী। তাঁর মা একজন সমাজকর্মি সাবেক পার্লামেন্ট সদস্য। বড় ভাই আমেরিকার টেক্সাসে বসবাসরত একজন স্থপতি এবং বড় বোন ফাউজিয়া হার্ভাড জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডিগ্রীপ্রাপ্ত একজন স্নায়ু বিজ্ঞানী, যিনি বর্তমানে বাল্টিমোরের সিনাই হাসপাতালে কর্মরত।

. আফিয়া সিদ্দিকা যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন এবং ২০০২ সাল পর্যন্ত সেখানেই বসবাস করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকালে তাঁকে যারা চিনতেন তাদের সবাই বলেছেন, আফিয়া অত্যন্ত ভদ্র, বিনয়ী এবং ইসলামের প্রতি ছিল তাঁর বিশেষ দরদ। . আফিয়া সিদ্দিকার সাহস, আত্মপ্রত্যয় কুরবানী পৃথিবীতে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে, সূচনা করবে নতুন প্রভাতের। কথা ঐতিহাসিক সত্য মজলুমের অশ্রুজল বুকভরা আর্তনাদ পৃথিবীতে কোন দিন ব্যর্থ হয়নি এবং হবে না। . আফিয়া সিদ্দিকা মুক্তিকামী মানুষের কাছে চেতনার প্রতীক হয়ে থাকবেন।



পোষ্ট কৃতজ্ঞতাঃ http://www.facebook.com/afmkhossain?fref=ts
10:11 PM Posted by Just for you 1