TOP NEWS

Friday, December 17, 2010

কোরআনে শব্দ ও আয়াতের পুনরাবৃত্তি রহস্য- শেষপর্ব : বিষ্ময়কর গাণিতিক মিল

আগের পর্বগুলোঃ
কোরআনে শব্দ ও আয়াতের পুনরাবৃত্তি রহস্য-১
কোরআনে শব্দ ও আয়াতের পুনরাবৃত্তি রহস্য-২ : অংকগত মোজেযা

“ইয়াওমুন” মানে দিন। সমগ্র কোরআনে এ শব্দটি ৩৬৫ বার উল্লেখ করা হয়েছে। বছরে যে ৩৬৫ দিন এটা কে না জানে। ইয়াওমুন শব্দের বহুবচন “আইয়াম” মানে দিনসমূহ, এ শব্দটি এসেছে ৩০ বার। আরবী ভাষায় “চাঁদ” হচ্ছে মাসের সূত্র সূচক, গড়ে বছরের প্রতি মাসে ৩০ দিন, এটাই হচ্ছে চান্দ্রবছরের নিয়ম। হতবাক হতে হয় যখন দেখি চাঁদের আরবী প্রতিশব্দ “কামার” শব্দটি কোরআনে মোট ৩০ বারই এসেছে।

“শাহরুন” মানে মাস, কোরআন মাজীদে এ শব্দটি এসেছে মোট ১২ বার। “সানাতুন” মানে বছর, কোরআনে এ শব্দটি এসেছে ১৯ বার। কারণ হিসেবে আমরা সম্প্রতি আবিস্কৃত গ্রীক পন্ডিত মেতনের “মেতনীয় বৃত্তের” কথা উল্লেখ করতে পারি। তিনিই প্রথম এ তত্ত্বটি আবিস্কার করেন যে, প্রতি ১৯ বছর পর সূর্য ও পৃথিবী একই বৃত্তে অবস্থান করে।
কোরআনে “ফুজ্জার” (পাপী) শব্দটি যতবার এসেছে, “আবরার” (পূণ্যবান) শব্দটি তার দ্বিগুন এসেছে। অর্থাৎ “ফুজ্জার” ৩ আর “আবরার” ৬ বার। এর কারণ হচ্ছে, শাস্তির তুলনায় পুরস্কারের পরিমান আল্লাহ তাআলা সব সময় দ্বিগুন করে দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন। কোরআনের সুরা সাবা’র ৩৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন “এ ধরনের লোকদের জন্যই (কেয়ামতে) দ্বিগুন পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকবে। এটা হচ্ছে বিনিময় সে কাজের যা তারা দুনিয়ায় করে এসেছে”। এ কারণেই দেখা যায়, গোটা কোরআনে “পাপী” ও “পূন্যবাণ” শব্দের মতো “আযাব” শব্দটি যতবার এসেছে, “সওয়াব” শব্দটি তার দ্বিগুন এসেছে। অর্থাৎ আযাব ১১৭ বার, সওয়াব ২৩৪ বার।
কোরআনে একাধিক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করলে তিনি তার বিনিময় বাড়িয়ে দেবেন। সম্ভবত এ কারণেই কোরআনে “গরীবী” শব্দটি এসেছে ১৩ বার, আর বিপরীতে “প্রাচুর্য” শব্দটি এসেছে ২৬ বার।
কোরআনে কারীমের বিভিন্ন জায়গায় এভাবে গাণিতিক সংখ্যার অদ্ভুত মিল দেখে কোরআনের যে কোন পাঠকই বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে ভাবতে থাকে, এটা নিঃসন্দেহে কোন মানুষের কথা নয়।
কোন একটি কাজ করলে তার যে অবশ্যম্ভাবী ফল দাঁড়াবে তার উভয়টিকেই আশ্চর্যজনকভাবে সমান সংখ্যায় বর্ণনা করা হয়েছে। “গাছের চারা উৎপাদন” করলে গাছ হয়। তাই এই দুটো শব্দই এসেছে ২৬ বার করে। কোন মানুষ “হেদায়াত” পেলে তার প্রতি রহমত বর্ষিত হয়, তাই এ দুটো শব্দ কোরআনে এসেছে ৭৯ বার করে। “হায়াত” এর অপরিহার্য পরিণাম হচ্ছে “মওত”। এ শব্দদুটোও এসেছে ১৬ বার করে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন “যাকাত” দিলে “বরকত” আসে, তাই কোরআনে দুটো শব্দই এসেছে ৩২ বার করে। “আবদ” মানে গোলামী, আর আবীদ মানে গোলাম। গোলামের কাজ গোলামী করা, তাই কোরআনে এই উভয় শব্দই এসেছে ১৫২ বার করে। “মানুষ সৃষ্টি” কথাটা এসেছে ১৬ বার, আর মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে “এবাদত”; সুতরাং তাও এসেছে ১৬ বার। “নেশা” করলে “মাতাল” হয়, তাই এ দুটো শব্দও এসেছে ৬ বার করে।
কোরআনে ইনসান শব্দটি এসেছে ৬৫ বার। এবার ইনসান বানাবার উপকরণগুলোকে বিভিন্ন জায়গা থেকে যোগ করে মিলিয়ে দেখা যাক:
প্রথম উপাদানঃ “তোরাব” (মাটি) এসেছে – ১৫ বার
দ্বিতীয় উপাদানঃ “নুতফা” (জীবণকণা) এসেছে – ১২ বার
তৃতীয় উপাদানঃ “আলাক” (রক্তপিন্ড) এসেছে -৬ বার
চতুর্থ উপাদানঃ “মোদগা” (মাংসপিন্ড) এসেছে – ৩ বার
পঞ্চম উপাদানঃ “এযাম” (হাড়) এসেছে – ১৫ বার
সর্বশেষ উপাদানঃ “লাহম” (গোশত) এসেছে – ১২ বার ।

উপাদানগুলো যোগ করলে যোগফল হবে ঠিক ৬৫ । আর এসব উপাদান দিয়ে যে “ইনসান” বানানো হয়েছে তাও ঠিক ৬৫ বারই উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা কোরআনের সুরা “আল ক্বামার” –এর প্রথম যে আয়াতটিতে চাঁদ বিদীর্ণ হওয়ার সাথে কেয়ামতের আগমন অত্যাসন্ন কথাটি বলেছেন, আরবী বর্ণমালার আক্ষরিক মান হিসাব করলে তার যোগফল হয় ১৩৯০, আর এই ১৩৯০ হিজরী (১৯৬৯ খৃষ্টাব্দ) সালেই মানুষ সর্বপ্রথম চাঁদে অবতরন করে, জানিনা এটা কোরআনের কোন মোজেযা, না তা এমনিই এক ঘটনাচক্র, কিন্তু আল্লাহ তাআলার এই মহান সৃষ্টিতে তো ঘটনাচক্র বলে কিছু নেই। এ কারণেই হয়তো মানুষের চাঁদে অবতরনের সাথে কোরআনের আলোচ্য আয়াতটির সংখ্যামানের এই বিস্ময়কর মিল আমরা দেখতে পাচ্ছি।

0 comments: